বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ কোন পক্ষ নেবো, তা নিয়ে বিব্রত আমি। সাংবাদিকতা শেখার মঞ্চ ছিল পত্রিকা। টেলিভিশনে কাজ শিখে যাচ্ছি, আর খবর উপভোগ করছি অনলাইন মাধ্যমে।পত্রিকায় কাজ করার আগে তো পাঠক ছিলাম।সেই সময়ে আগের দিনের পত্রিকা বাসি হওয়া মাত্র পরদিনের পত্রিকা পড়তে ব্যাকুল হয়ে থাকতাম। এই ব্যাকুলতা আরো তীব্র হয় যখন পত্রিকায় কাজ করতে আসি। অন্য পত্রিকা কি দিয়ে দিচ্ছে, যা আমরা পাইনি সেটা জানতে।
টেলিভিশনে এসেও পত্রিকা নির্ভরতা কমেনি।যতোটুকু টেলিভিশনে দিতে পারছি, তার বিস্তারিত খবর মিলতো পরদিনের পত্রিকায়। এছাড়া টেলিভিশন ক্যামেরার নজরের বাইরের অনেক অনুসন্ধানী খবর এবং সাধারণ ঘটনা চলে আসতো পরদিনের পত্রিকার পাতায়।এখন অনলাইন পত্রিকা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী।
সংবাদ চ্যানেলে কাজ করছি। প্রতি মূহুর্তে খবর দিচ্ছি। একই কাজ করছে অনলাইন পত্রিকাও। প্রতিযোগিতা কে কার আগে খবর প্রকাশ করতে পারে।
নিরপেক্ষভাবে বলতে গেলে খবর ব্রেক বা প্রকাশের ক্ষেত্রে গড়পড়তা অনলাইন পত্রিকাই এগিয়ে আছে। প্রতিদিন এমন অনেক খবর প্রকাশ হয় অনলাইন পত্রিকায়, যা দেখে টেলিভিশনগুলো নড়েচড়ে বসে। ওই খবর দেখে ক্যামেরা নিয়ে মাঠে ঝাঁপ দেয়।
আবার প্রতিদিন টেলিভিশনের বার্তাকক্ষে এমন অনেক খবর আসে, যার বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে খানিকটা সংশয়ে থাকতে হয়।
অনলাইন পত্রিকা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই সংশয় দূর করতে এগিয়ে আসে।আর একসময় অনুসন্ধানী বা ইনডেপথ রিপোর্টের জন্য পত্রিকার দিকে যে চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতাম, অনলাইন পত্রিকা ঐ তৃষ্ণাটিও মিটিয়ে দিচ্ছে। এই বাস্তবতায় পত্রিকার উপর নির্ভরতা ভাটার দিকে। সকালে এককাপ চায়ের সংগে পত্রিকাটি যে আগের মতো হাতে তুলে নিতে কাতর থাকি না, এ সত্যটি জানাতে কোন রাখঢাক রাখছি না।২৪ ঘণ্টার খবরের ফেরিওয়ালা বা ব্যাপারী হিসেবে অনলাইন পত্রিকার উপর আমার নির্ভরতাও ২৪ ঘণ্টার।
অনলাইন পত্রিকার উপর এই আসক্তি যে এককভাবে আমার তা নয়। দেখছি আমার সহকর্মীরাও খবর জোগাড়ে পিছিয়ে পড়ছে কি না, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে অনলাইন পত্রিকা মনস্ক হয়ে উঠছেন।
এতো গেলো সংবাদ কর্মীদের কথা। যারা খবরের ক্রেতা, গ্রাহক-এবার তাদের কথা বলি। পরিচিতের গণ্ডিটা যতো বিস্তৃত- তার একটা বড় অংশকেই দেখছি বাড়িতে পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে উত্তর পাই- খবর তো নিউজ চ্যানেল এবং অনলাইন পত্রিকায় টাটকা পেয়ে যাচ্ছি। পরদিন বাসি খবরের জন্য আর পত্রিকা রেখে লাভ কি।
ফিচারের স্বাদও তো দিচ্ছে অনলাইন পত্রিকা। জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোর অনেক সহকর্মীও স্বীকার করছেন- তাদের সার্কুলেশন কমতির দিকে। দায়ী ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল এবং অনলাইন পত্রিকা। ২৪ ঘণ্টার টেলিভিশনগুলোর এখন পোয়াবারো ঠিকই। কিন্তু যেভাবে তরুণ প্রজন্ম এবং সববয়সী মানুষ বিশ্বজুড়ে অনলাইনের প্রেমে পড়ছেন, তাতে টেলিভিশনও দর্শক হারাতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশে ইণ্টারনেটের গতি বাড়লে, ইন্টারনেট সুবিধার প্রসার ঘটলে অনলাইন ব্যবহারের সূচক দ্রুতলয়ে বাড়বে। সেই দিন দ্রুত এগিয়ে আসছে, যেদিন দর্শকরা টেলিভিশন দেখে নেবে মোবাইল ফোন এবং অনলাইনে। অনলাইন পত্রিকাগুলোতে খবরের সঙ্গে স্থির এবং ভিডিও চিত্র সংযুক্ত থাকায়, টেলিভিশনে খবর দেখার ক্ষুধা থাকবে না।
অনলাইন পত্রিকার জয়যাত্রা’র মিছিলে যারা শরিক হয়েছেন, তারা সেই মিছিলে একধরনের অহেতুক কোলাহলও তৈরি করেছে। সেই কোলাহলটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এখন দেশে অনলাইন পত্রিকা কয়টি আছে, তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই।
তবে যতোটুকু জানি, ৬৫টি অনলাইন পত্রিকা সক্রিয় আছে। ৬৫টি অনলাইন পত্রিকার মধ্যে কয়টি পেশাদার সাংবাদিকতা করছে, এই প্রশ্নের উত্তর খুব কঠিন নয়। একেবারে তরল। কারণ অন্তর্জালের বাসিন্দারা নিত্য মুখোমুখি হচ্ছেন এই অনলাইন পত্রিকাগুলোর সংগে।
এক ব্যক্তি এক অনলাইন পত্রিকা চালান। আবার কেউ কেউ সাংবাদিকতায় নিজের নামটি বা গাড়িতে সংবাদপত্র স্টিকার লাগানোটি যৌক্তিক করতে অনলাইন পত্রিকা খুলে বসেছেন। এই ধরনের অনলাইন পত্রিকা কখনো কখনো মিথ্যে খবর বা গুজব অনলাইনে তুলে দিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করছে। অনেকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বা নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যক্তিগত প্রচারণায় ব্যবহার করছে অনলাইন। এই জাতীয় অনলাইন পত্রিকার এই বিকাশমান সময়ে আগাছা হিসেবে কাজ করছে। নিড়ানীর মাধ্যমে এদের উৎপাটন করার দায়িত্বটি নিতে হবে তথ্যমন্ত্রণালয়কে।
বিজ্ঞাপণদাতারা এখনো যে অনলাইনের বিষয়ে শিক্ষিত হয়ে উঠেছে, সেই দাবিটি করা যাচ্ছে না। মূলধারার অনলাইন পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপণের ঘাটতিই তার প্রমাণ। তাদের জানাতে হবে নিউজপ্রিন্টের পত্রিকা’র চেয়ে বিজ্ঞাপণ দিয়ে গ্রাহকের নজর কাড়ার মোক্ষম মাধ্যম এখন অনলাইন পত্রিকা।
তবে অনলাইন পত্রিকাগুলোকে প্রচারের মাধ্যম হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করতে পারে। সরকারি বিজ্ঞাপনের একটা বড় অংশ অপচয় হয় আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাতে। সেখান থেকে বিজ্ঞাপনগুলোতে মূলধারা অনলাইন পত্রিকায় নিয়ে আসার বিষয়ে নিশ্চয়ই ডিজিটাল মন্ত্রে দীক্ষিত তথ্যমন্ত্রণালয় উদ্যোগী হবেন।
অগ্রজ সাংবাদিক আলমগীর হোসেন অনলাইন পত্রিকার যে স্বাদ দিয়েছিলেন বাংলাভাষাভাষী পাঠকদের, সেই স্বাদের নির্যাস ছড়িয়ে পড়েছে পরবর্তীতেপাঠকদের কাছেও। সেই উদ্যোগকে অনুসরণ করে আরো দু-একটি অনলাইন পত্রিকা পেশাদারী মনোভাব নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের সম্মিলিত পথচলা’ আমার মতো শিক্ষানবিশ সংবাদকর্মীকে ২৪ ঘণ্টাই অন রাখছে।
বাংলাদেশ সময়: ০:৩০:৫৪ ৩৯৩ বার পঠিত