বঙ্গ-নিউজঃ তুরাগ নদের তীরে গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে একটি চারতলা, তিনটি দোতলা ভবনসহ ৯৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। অভিযান চলাকালে জব্দ করা মালামাল নিলাম ডেকে ২২ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।রাজধানীর তুরাগ থানাধীন ধউর সেতু এলাকা থেকে প্রত্যাশা সেতু পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিআইডব্লিউটিএর ৪ একর জমি উদ্ধারের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তিন একর জমিও উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রথমে আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন–সংলগ্ন ধউর সেতুর পূর্ব দিকে নাভানা পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিআইডব্লিউটিএ ও পাউবোর জমি দখল করে প্রতিষ্ঠানটি সেখানে গ্যারেজ নির্মাণ করেছে।
এদিকে পাশেই বিআইডব্লিউটিএ ও পাউবোর জায়গায় গড়ে তোলা নাভানা এলপিজির স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়নি। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, স্থাপনা সরিয়ে নিতে ছয় মাস সময় চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আদালত ১০ এপ্রিল থেকে এক মাসের মধ্যে তা সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে স্থাপনা না সরালে অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করা হবে।
দুপুর ১২টার দিকে তুরাগতীরে ডোম-ইনো কংক্রিট নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি বিআইডব্লিউটিএ ও পাউবোর জায়গা দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলেছিল। অভিযানে সেখানে থাকা রেডিমিক্স কংক্রিট প্রস্তুতের একটি যন্ত্র ও চারতলা একটি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ডোম-ইনোর আইনজীবী পরিচয় দেওয়া ফরিদ নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তিন ঘণ্টা পর অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এরপর বেলা দুইটার দিকে এর পাশেই থাকা ইউসুফ অ্যান্ড ব্রাদার্স লজিস্টিক সার্ভিস, এম এস খান এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এই দুটি প্রতিষ্ঠান এক্সকাভেটরসহ সড়ক সংস্কারকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ভাড়া ও মেরামতের কাজ করে। এ ছাড়া প্রত্যাশা সেতুসংলগ্ন এলাকায় মেসার্স ইব্রাহিম স্যানিটারি ওয়ার্কসসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযান চলাকালে জব্দ করা বালু ও স্যানিটারি সামগ্রী নিলাম ডেকে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল অভিযান শুরুর পর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন স্থাপনার মালিকদের বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগেরই জিজ্ঞাসা ছিল তাঁদের স্থাপনা তুরাগ নদের তীরভূমি বা পাউবোর জায়গার মধ্যে পড়েছে কি না। তাঁদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান শুরুর আগে লাল চিহ্ন দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তুরাগ নদের তীর থেকে লাল দাগ পর্যন্ত থাকা সব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে। এর বাইরে বেড়িবাঁধের পাশের জমির মালিক পাউবো। পাউবো চাইলে ওই সব স্থানে থাকা স্থাপনাও অপসারণ করা হবে।
বিকেল পাঁচটার দিকে অভিযান শেষ হওয়ার পর প্রত্যাশা সেতুর পূর্ব দিকে বেড়িবাঁধ–সংলগ্ন রোসাদিয়া, মিল গেট, কামারপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ওই এলাকায় এখনো অভিযান শুরু না হলেও বাসিন্দারা সব স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই টিনের ঘর নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করছেন।
বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নূর হোসেন ও রেজাউল করিম জানান, গতকালের অভিযানে একটি চারতলা, তিনটি দোতলা, ১১টি এক তলা ও ১৫টি আধা পাকা ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৭টি টিনশেড, আটটি সীমানাদেয়াল ও ৩১টি টিনের ঘর উচ্ছেদ করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান। সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন। গতকালের অভিযানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রেদওয়ান আহমেদ, সহকারী পরিচালক (ভূমি) রন্তি দেব গোস্বামী, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. রায়হান।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৭:১৮ ৪৮৬ বার পঠিত