: সরকার জামায়ত-শিবির দমনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে। অথচ খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একান্ত সচিব (পিএস) ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান ছাত্র জীবনে শিবিরের সক্রিয় নেতা ছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে স্নাতক (সম্মান) অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্রশিবিরের হয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করেন। ছাত্রশিবিরের প্যানেলে সাহিত্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে জয়ী হন।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র, ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লায় ড. আবুল হাসানের আত্মীয়স্বজন, ঢাকায় তার সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পেয়েছে বাংলানিউজে।
সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে চাকরিতে নিজেকে নিরাপদ রাখতে জামায়াতের আদর্শের কথা প্রকাশ করেন না তিনি। তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করে বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাবেক এই শিবিরকর্মী।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, “প্রশাসনের ভেতরে জামায়ত-শিরিব যেগুলো সনাক্ত করতে আমরা পারছি তাদের বিভিন্নভাবে সরিয়ে দিচ্ছি। নিয়মিতভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আপনি যে তথ্য আমাকে দিলেন আমি অবগত হয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবো। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে লিখব।”
তবে এব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি অর্থমন্ত্রীর পিএস ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান।
সূত্র জানায়, ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান ২০১১ সালের মার্চ মাসের ২১ তারিখে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৯১ সালে ডিসেম্বর মাসে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের মাধ্যমে সহকারী সচিব হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন। বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে (তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়) এ দায়িত্ব পালন করে ২০০৯ সালের মে মাস পর্যন্ত।
জানা গেছে, একই বছরের মে মাসে তাকে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে টাঙ্গাইলে বদলি করা হয় তাকে। একই পদে সিলেটেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অর্থ মন্ত্রণায়ে নিয়োগ পাওয়ার আগে ২০১১ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত সিলেটে ছিলেন।
ড. হাসানের জন্ম কুমিল্লা শহরে ১৯৬৫ সালে। তিনি পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে। এরপর বিকম (সম্মান) ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। এমকম করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদীঘির পশ্চিম পাড়ের শৈলরাণী দেবি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন জাহানারা কটেজে ড. আবুল হাসান জন্মগ্রহণ করেন। ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িয়ে পড়েন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, ১৯৮৬ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তিনি শিবিরের প্যানেলে সাহিত্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন এবং বিজয়ী হন। ওই ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ১৭টি পদের মধ্যে ভিপি ও জিএসসহ ৫টি পদে ছাত্রলীগ জয়ী হয়। অপরদিকে ১২টি পদে ছাত্রশিবির বিজয়ী হয়। অধ্যয়নকালে তিনি পুরো সময়টাই ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীরর কাছে তার পিএস-এর জামায়াত সম্পৃক্ততার কথা আসে। তবে তাকে বোঝানো হয়েছে, তিনি তাবলিগ জামায়াত করেন। সেই ধারণা থেকেই নিজের দপ্তরে নিয়োগকালে কোনো আপত্তি করেননি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ভিক্টোরিয়া কলেজের তৎকালীন জিএস জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি ভিক্টোরিয়া ডিগ্রি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । ১৯৮৬ সালের ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তিনি শিবিরের প্যানেলে সাহিত্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তার সাথে আর আমাদের দেখা হয়নি। ওই সময় তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করেছেন কিনা তা আমি জানি না।”
তথসুত্রঃ বাংলনিউজ
বাংলাদেশ সময়: ১০:২০:৫৮ ৫৭৬ বার পঠিত