বঙ্গ-নিউজ: ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস এই তথ্য জানিয়েছেন।
বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে মারা যায় নুসরাত। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। লাইফ সাপোর্টও তেমন কাজ করছিল না। এরপর চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, সোমবার (৮ এপ্রিল) দগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তার সর্বশেষ স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার সকালে সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন ঢামেকের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেয়েটির শারীরিক যে অবস্থা তাতে পাঁচ ঘণ্টা ফ্লাই করা খুবই রিস্কি বলে মনে করছেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাই এই মুহূর্তে মেয়েটিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব না।’
নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা। ফেনীর সোনাগাজীতে একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে তিনি পরীক্ষা দিতে গেলে তার গায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে পৌর শহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছিলো।
সেসময় স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর দগ্ধ নুসরাত জাহানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আনা হয়।
নুসরাত সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামের একেএম মুসার মেয়ে। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিল।
নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ, পরীক্ষা দিতে সকালে কেন্দ্রে প্রবেশের আগে নুসরাতকে কয়েকজন মুখোশ পরা মেয়ে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। তারা নুসরাতকে বলে তার এক বান্ধবীকে ছাদে পেটানো হচ্ছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়, নুসরাতকে মিথ্যা বলে, পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করেছিল নুসরাত। সেই কারণে অধ্যক্ষের পক্ষের শিক্ষার্থীরা তার বোনকে পুড়িয়ে মেরেছে।
জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে মামলা করে নুসরাতের পরিবার। পরে পুলিশ ওই মামলার জেরে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানের আরও জানায়, আগুন লাগার পর নুসরাত আমাকে জানিয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওই মামলা তুলে নিতে নুসরাতকে চাপ দেয় অধ্যক্ষের পক্ষের কিছু শিক্ষার্থী। নুসরাত মামলা তুলে নেবে না জানালে তারা তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে আমার বোনের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। আমি ওকে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোহাম্মদ মোস্তাক আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয় নাই।
নুসরাতকে প্রথমে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাঠানো হয় ২৫০ শয্যার ফেনী সদর হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সবশেষ চিকিৎসাধীন অবস্থা মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আবু তাহের জানান, নুসরাতের শরীরের ৭০-৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিলো।
এদিকে মৃত্যুর আগে পুলিশের জবানবন্দিতে নুসরাত জানিয়েছে, পরীক্ষার কেন্দ্রের বাইরে তাকে কয়েকটি মুখোশপরা মেয়ে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় তারা তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলাটি তুলে নিতে বলে। নুসরাত তাতে অস্বীকৃতি জানালে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে মুখোশপরা মেয়েদের পরিচয় জানাতে পারেনি নুসরাত।
সোনাগাজি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। তদন্তে অভিযুক্ত কেউ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:১২:০৫ ৯৯৭ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম