স্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার ছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী রাফিকে হত্যার মূল হোতা লম্পট অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। যৌন হয়রানির পর সহপাঠি দুই বান্ধবীর উদ্দেশ্যে আবেগঘন চিঠি লিখেছিলো রাফি। সেই লেখা চিঠি উদ্ধার করে দেখা যায়, সেখানে রাফিকে ওই হুজুর গায়ে হাত দেওয়ার আগে যে কুপ্রস্তাব দেয়। হুজুর ডেকে নিয়ে তাকে প্রশ্ন দেয়ার লোভ দেখিয়ে কোন ছেলের সঙ্গে প্রেম না করার পরামর্শ দেন। সেই হুজুরের এমন কুপ্রস্তাবের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার করেছিল মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। কিন্তু দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেল রাফির।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে বাড়ি থেকে এগুলো উদ্ধার করেছে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ। চিঠিতে দিন-তারিখ লেখা না থাকলেও বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি দগ্ধ হওয়ার কয়েকদিন আগের লেখা বলে মনে করছে তদন্তকারীরা।
ওই সূত্র জানায়, তার পড়ার টেবিলে খাতায় দুই পাতার ওই চিঠিতে তামান্না ও সাথী নামের দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছে রাফি। ওই চিঠিতে রাফি আত্মহত্যা করবেনা বলেও উল্লেখ করে সে। তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজ উদদৌলাহ গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবীতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাফি। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটুক্তিতেও তার মর্মাহত কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
পাঠকদের উদ্দেশে চিঠিটি তুলে ধরা হলো:
তামান্না, সাথী,
‘তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ঔ দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন প্রেম করলে কি সে খারাপ ??? তোরা সিরাজ উদ দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস। তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কি হইছে ? উনি আমার কোন জাগায় হাত দিয়েছে এবং আরো কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় রুমের ভেতর বলতেছে— নুসরাত ডং করিসনা। তুই প্রেম করিসনা। ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভালো লাগে। ওরা তোরে কি দিতে পারবে? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেবো। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে। বোন এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলে…।
আমি লড়বো শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে চিঠিটি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এটিও ওই ঘটনার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখিতদের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এখন ওই শিক্ষার্থীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তাঁর শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েটির ফুসফুসকে সক্রিয় করতে গতকাল মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করা হয়।
আদরের মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শোনার পরপরই গতকাল বার্ন ইউনিটের সামনে বৃদ্ধ বাবা কাউসার মোহাম্মদ মুসা বুকফাটা আর্তনাদ করতে থাকেন, ‘আমার মা কই গেল রে, মা তুই যান না, ফিরে আয়।’ মা শিরিনা আক্তার বুক চাপড়ে আর্তনাদ করছিলেন। জ্ঞান হারান ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। তাঁদের পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন নুসরাতের মামা সৈয়দ সেলিম। ভাগ্নের কাঁধে সান্ত্বনার হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মামা সৈয়দ সেলিম বলেন, ‘নুসরাত আমার বড় আদরের ভাগ্নি ছিল। এমন একটি মেয়েকেও যৌন হয়রানি করল অধ্যক্ষ। তারপর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। নুসরাত বড় হয়ে বাবার মতো শিক্ষক হতে চেয়েছিল। তার এই স্বপ্নকে যারা জ্বালিয়ে দিয়েছে, তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৬:৪৫ ৮৪৪ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম