বঙ্গ -নিউজ: ফেনীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আলোচিত অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা সাবেক জামায়াত নেতা। ২০১৬ সালে তাকে নানা অভিযোগের কারণে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানিয়েছেন ফেনী জেলা জামায়াতের আমির এ কে এম শামসুদ্দিন।
জানা গেছে, ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি, প্রতারণা, নাশকতা ও যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ফেনী ও সোনাগাজী থানায় চারটি মামলা রয়েছে। চেক জালিয়াতির মামলায় ২০১৭ সালেও জেল খেটেছিলেন তিনি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, প্রিন্সিপাল হওয়ার পর থেকে মাদ্রাসার বখাটে ছাত্রদের দিয়ে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন সিরাজ উদ দৌলা। যাদের দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কোণঠাসা করে রাখতেন। তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তাসহ একাধিক অভিযোগ উঠলেও প্রভাবশালীদের দিয়ে ধামাচাপা দিতেন।
তারা আরও জানায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পূর্বে অধ্যক্ষ সিরাজ পূর্বের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবদুল হালিম মামুনকে সরিয়ে ওই স্থানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে বসান। শেখ মামুনকে সরিয়ে দেওয়ার কারণই ছিল তিনি একাধিকবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাবর অধ্যক্ষের যৌন হেনস্তার বেশ কয়েকটি ঘটনার লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও তিনি অধ্যক্ষের কক্ষ সাইক্লোন শেল্টারের নির্জন দোতলা থেকে নামিয়ে নিচতলা, মাদ্রাসায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের জন্য একাধিকবার আবেদন করেন।
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় মাদ্রাসাটির ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ৮০ ভাগ অগ্নিদগ্ধ হওয়া রাফি বর্তমান অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ওই ছাত্রী। এ ঘটনার ৬ মাস আগে ওই অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন মাদ্রাসার আরেক ছাত্রী।
নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ছিলেন, একজন লম্পট প্রকৃতির লোক। রাফির গায়ে হাত দেয়ার ঘটনায় আমি নিজেও অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদ করেছি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনাগাজী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাফীর গায়ে অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় প্রভাবশালী একটি মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসার একটি মাত্র প্রবেশ পথ। গেইটের দারোয়ান ছিল, পুলিশ ছিল, পরীক্ষা কেন্দ্রে বহিরাগত কোন লোকই ছিল না। নুসরাত জাহানের গায়ে কে বা কাহারা আগুন লাগিয়েছে, তার চাইতে বড় কথা হলো, অগ্নি সংযোগকারী সেই দূর্বৃত্তরা পুলিশ, দারোয়ানকে এড়িয়ে কিভাবে প্রবেশ পথ দিয়ে বের হয়ে গেলো, তা অবাক হওয়ার বিষয়।’
গত রোববার (৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম, ফেনীর পুলিশ সুপার এবং উক্ত মাদ্রাসার গর্ভনিং বডির সভাপতি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পি.কে এনামুল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ সোনাগাজী থানায় বেলা ১১ টা থেকে নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠী আলীম পরীক্ষার্থীদেরকে তার কক্ষে এক এক করে ডেকে রাফীর অগ্নিদগ্ধ’র ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান এবং প্রত্যেকের বক্তব্য রেকর্ড করেন।
বিকেলে এডিশনাল ডিআইজি সাংবাদিকদের এক ব্রিফিং এ বলেন, তিনি ছাত্রী ও শিক্ষকদের বক্তব্যের পর বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত পেয়েছেন এবং কিছু ঘটনা আঁচ করতে পেরেছেন, যা তদন্তের স্বার্থে তিনি প্রকাশ করতে রাজী নন। তদন্ত শেষে এ নারকীয় ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সোনাগাজীর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেল সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার সবকিছু সময় মতো বের হয়ে আসবে, তবে একটু ধৈয্যের ব্যাপার।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৪:৩৬ ৬৯৪ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম