আম্র পালী আমের নাম করণের ইতিহাস –এ পর্যর্ন্ত সূচনা ছাড়াও ৪ পর্বে প্রকাশিত হয়েছে। পর্বগুলি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হলেও অনিয়মিত ছিল। তাই অনেকের পক্ষেই হয়তো সবগুলি পর্ব পড়া সম্ভব হয় নাই। তাই নীচে সূচনা সহ ৪টি পর্ব একত্রে দিলাম।
একটি নতুন জাতের আম যা যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরাওপার্বত্য এলাকায় বেশী উৎপাদিত হয় , তার নাম কি ? তার নাম আম্র-পালী ।
আম্র পালী - আমের সাথে জড়িত আছে এক অপরুপা সুন্দরী মহিলার নাম। তিনি এখন থেকে ২৫০০ বছর আগে জন্মেছিলেন । ২৫০০ বছর আগে ভারতের এক শ্রেষ্ঠ নর্তকীর নাম ছিল আম্র পালী। তার রূপে আগুন জ্বলতো | সেই আগুনে ঝাঁপ দিতে চায় সবাই |
ঘন আমবনে গাছের নিচে এক পরিত্যক্ত কন্যাশিশুকে খুঁজে পেয়েছিল এক নিঃসন্তান বিত্তহীন দম্পতি | তারা তার নাম রাখেন আম্রপালী।আমগাছের নিচে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বলে এই নামই রাখা হয়েছিল | সংস্কৃতে আম্র মানে আম এবং পল্লব হল পাতা | অর্থাত্ আমগাছের নবীন পাতা | সেই বালিকা কৈশোরে পা দিতে না দিতেই নিদারুণ সমস্যায় পড়লেন তার বাবা মা | সমস্যার কারণ মেয়ের রূপ । আম্রপালী কে নিয়ে রিতীমত যুদ্ধ বেধে যায়| খ্রিস্টের জন্মের ৫০০-৬০০ বছর আগে | ভারতবর্ষের বৈশালী রাজ্যে (বর্তমান বিহার রাজ্য)| গ্রামের মহাজন, শহরের বণিক, জনপদের রাজা সবাই তাকে পেতে চায় ? সাধারণ মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য অস্থির । কি হবে আম্র পালীর ?
আম্র পালীর রুপে-গুণের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তাকে বিবাহ করার জন্য বহু রাজপুত্র উদগ্রীব হয়ে উঠলেন,ক্রমে তাঁরা পরস্পরের মধ্যে কলহে প্রবৃত্ত হতে লাগলেন। তা দেখে আম্র পালীর পিতা চিন্তিত হয়ে পড় লেন ,কারণ কণ্যার পাণিপ্রাথীদের মধ্যে যাঁকেই তিনি বিমুখ করবেন তিনিই হয়ে উঠবেন তার ঘোরতর শক্র। উপায়ান্তর না দেখে তখন আম্র পালীর পিতা শহরের গণ্য-মান্য ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শের জন্য এক সভা আহ্বান করলেন। সেই সভায় আম্রপালীর বিবাহ প্রসঙ্গ উপস্থাপন করা হলে সভাস্থ ব্যক্তিবর্গ আম্রপালীকে সভায় উপস্থিত করানোর জন্য আম্র পালীর পিতাকে অনুরোধ জানালেন। পিতার আদেশে কন্যা আম্রপালী সভায় উপস্থিত হয়ে-সমাজপতিদের চাপে যে সিদ্ধান্ত নিল তা জানাব কিনা ভাবছি। বিষয়াবলী অশ্লীল মনে হতে পারে। তবে সব কিছু বিবেচনা করতে হবে সে সময়ের প্রেক্ষাপটে।
আম্রপালী বাস করতেন বৈশালী শহরে । বৈশালী ছিল প্রাচীন ভারতের একটি শহর। এটি বর্তমানে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের বিহার রাজ্যের অন্তর্গত একটি প্রত্নক্ষেত্র । গৌতম বুদ্ধ একাধিকবার বৈশালীতে এসেছিলেন। তাঁর সমসাময়িক কালে বৈশালী ছিল একটি সমৃদ্ধ ও বর্ধিষ্ণু শহর। চীনা পর্যটক ফাহিয়েন (খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দী) ও হিউয়েন সাংয়ের ভ্রমণবিবরণীতে বৈশালী শহরের কথা উল্লিখিত হয়েছে।
বৈশালীতে তৎকালীন প্রচলিত নিয়মানুসারে সর্বাঙ্গসুন্দরী রমণী বিবাহ করতে পারতেন না তিনি হতেন গণভোগ্যা। অতএব সর্বাঙ্গসুন্দরী রমণীরুপে স্বীকৃতা আম্রপালীকেও এই প্রচলিত নিয়ম শৃঙ্খলে আবদ্ধা হতে হবে। সমাজপতিরা বিধান দেয়, আম্রপালী কোনওদিন বিয়ে করতে পারবেন না | কারণ এত রূপ যৌবন নিয়ে তিনি কোনও একমাত্র পুরুষের ভোগ্যা হতে পারেন না |
সেদিনের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হল, আম্রপালী হবেন বৈশালীর নগরবধূ ( অনেকে বলেন নগরবধূর ইংরেজী courtesan. courtesan মানে a woman, usually with a high social position, who in the past had sexual relationships with rich or important men in exchange for money. | অর্থাত্ বহু পুরুষের ভোগ্যা ) | বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থে তাঁকে জনপদকল্যাণী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে | এই জনপদকল্যাণী বা নগরবধূ কিন্তু সামান্য গণিকা বা দেহপসারিণী নন | তিনি হবেন নৃত্যগীতে পারদর্শী, অভিজাত আদবকায়দায় রপ্ত এক সুন্দরী | উচ্চবংশের পুরুষই পেতে পারবেন তাঁর সঙ্গসুখ | জনপদকল্যাণী নিজেই নিজের সঙ্গী নির্বাচন করতে পারবেন | কিন্তু বিয়ে কোনওদিনও নয় | তাঁকে লক্ষ্য করে সে আমলে বৈশালীতে নতুন আইন তৈরি হয়ে গেল, অনিন্দ্য সুন্দরী নারী কখনও পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হতে পারবেন না। জনসাধরণের আনন্দের জন্য তাঁকে উৎসর্গ করা হবে।
এইসব সিদ্ধান্ত সেদিনের সভায় গৃহীত হলে আম্রপালীর পিতা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও বিচলিত হয়ে পড়লেন,কিন্ত সভায় গৃহীত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রতিবাদ করতেও সাহসী হলেন না। স্নেহময় পিতার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে আম্রপালী তখন কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে সভায় এই সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছায় শিরোধার্য করে নিলেন। আম্রপালীর উক্ত শর্তগুলি ভীষণ অশ্লীল মনে হবে। সে গুলি জানাব কিনা বুঝতে পারছি না।(ক্রমশঃ)
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৬:০৮ ৪৭৬ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম