বঙ্গ-নিউজ: বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না থাকার পরেও বিশ্বের দ্রত বর্ধনশীল পাঁচ দেশের একটিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আর রপ্তানি ও রেমিটেন্সে ভর করে চলতি অর্থবছর শেষে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭.৩ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে বিশ্ব ব্যাংক। এ প্রবৃদ্ধিও অনেক বলেই মনে করে তারা।
দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা নিয়ে করা বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটেড’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এমন তথ্যই দিয়েছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ে এ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.৩ শতাংশ। রপ্তানি-আমদানি, রাজস্ব আদায়, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং সরকারি বিনিয়োগসহ অর্থনীতিক সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে চলতি অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করছি।
এ সময় ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট জে সম বলেন, এই প্রবৃদ্ধিও অনেক। বিশ্বে যে পাঁচ দেশের জিডিপি সবচেয়ে দ্রত বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যাংক খাতের সংস্কার, রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ অর্থনীতির বড় বড় খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে চারটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিই বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ইথিওপিয়া ৮.৮ শতাংশ, রুয়ান্ডা ৭.৮ শতাংশ, ভুটান ৭.৬ শতাংশ এবং ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ। জিবুতি, আইভরি কোস্ট ও ঘানার সঙ্গে পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
যদিও সরকার চলতি অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মত আট শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছে। সম্প্রতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই- ফেব্রয়ারি) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বছর শেষে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করে।
তবে, ২০১৯-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে ছিলেন তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশামক ৮৬ শতাংশ।
চলতি বছরে জিডিপি নিয়ে সরকারের প্রত্যাশা ও বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলনের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। সরকারের চেয়ে সামান্য কম জিডিপির পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বুধবার প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে এডিবি।
এ বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে আমরা এ হিসাব পেয়েছি। অন্যদের হিসাব তারাই দিতে পারে। তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি আর্থিক সংস্কার আনতে পারলে বাংলাদেশে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনাও রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, ৭ শতাংশের বেশি বা টেকশই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে দেশকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে। একদিকে, ডলারের অবমূল্যায়ন, অন্যদিকে, বেক্সিট ইস্যু, চীনের অর্থনীতি, চীন-আমেরিকা সম্পর্ক ইত্যাদি। তবে আমাদের যদি ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে যেতে হয়, তাহলে এখানে ভালো বিনিয়োগ থাকতে হবে। ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানবসম্পদকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আর্থিকখাতে সংস্কার আনতে হবে। শক্তিশালি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আর্থিক স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীলতা রাখতে হবে। একইসঙ্গে রাজস্ব বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে রাজস্বখাতে লক্ষে পৌঁছাতে না পারায় প্রতি বছর ঘাটতি বাজেট বাড়ছে। তার মতে, রাজস্ব না বাড়ায় কারণ হতে পারে, হয় রাজস্ব আইন যুগোপযোপী না অথবা প্রশাসনের দুর্বলতা।
খেলাপি ঋণ নিয়ে তিনি বলেন, ঋণখেলাপি একটি ছোঁয়াচে রোগ। একবার কেউ খেলাপি হওয়ার পর বারবার তাকে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। অথচ অন্যরা ঋণ পায় না। ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ এ রোগটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। একই ঋণগ্রহীতা বারবার পুনঃতফসিল করছেন। এক্ষেত্রে সবাইকে সমান চোখে দেখে মূল্যায়ন করতে হবে। না হলে এ ছোঁয়াচে রোগ কমানো যাবে না। যে ঋণ পুনঃতফসিল করা হচ্ছে তার অর্থনৈতিক যুক্তিটা কী? খেলাপি ঋণের সবটাই অনিচ্ছাকৃত নয়। অনিচ্ছাকৃত হলে একবার, দুইবার হতে পারে। কিন্তু বারবার খেলাপি হলে তা কিছুতেই অনিচ্ছাকৃত নয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি উভয় সংকটে রয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমিয়েছে। এটাকে বলে উভয় সংকট।
রাজস্ব আয়ের বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ, যা সপ্রতিকালের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ হিসাবে এবার বাজেট ঘাটতি ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং তার আগের অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অবকাঠামো খাতে বিশেষ করে সড়কের ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য সহজ উপায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানবসম্পদের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে উন্নয়ন করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব রয়েছে। আর মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৫৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৬ নম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ৯:০২:০৮ ৫১১ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম