বঙ্গ-নিউজঃ ঠিক ছিল আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন লোকসভার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু হঠাৎই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক দিন আগেই মাঠে নামছেন মোদি বিরোধীদের অন্যতম মমতা। কারণ আজ পশ্চিমবঙ্গে প্রচারণা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দান ও দার্জিলিংয়ের শিলিগুড়িতে জনসভা করবেন। মোদি ও বিজেপিকে একচুলও ছাড় দিতে নারাজ মমতার তাই পরিকল্পনায় রদবদল। মোদি যখন শিলিগুড়ির সভা শেষ করে কলকাতার পথে রওনা দেবেন ঠিক তখনই মোদির বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে কোচবিহার জেলার দিনহাটায় দলীয় প্রার্থীর হয়ে জনসভা করবেন মমতা। মোদির বক্তব্যের পর তৃণমূল সম্পর্কে যাতে ভোটারদের মনে ভুল ধারণা না যায়- তা আটকাতেই পাল্টা কাউন্টার দেবেন মমতা। অন্যদিকে, গতকাল জাতীয় কংগ্রেসের সদর দফতর আকবর রোডে ‘কংগ্রেস করে দেখাবে’ শিরোনামে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন সভাপতি রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ চলতি সপ্তাহেই পাল্টা ইশতেহার ঘোষণা করতে চলেছেন। ইতিমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ইশতেহার প্রকাশ করেছে কলকাতায়। অবশ্য কংগ্রেসের ইশতেহার নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কংগ্রেস তাদের ইশতেহারকে ‘জনতার আওয়াজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। কংগ্রেস দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এ ইশতেহার সব প্রথম ভোটার ও যুবা সম্প্রদায়কে পড়ে দেখার অনুরোধ করেন। ভারতের লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে জনকল্যাণের ঢালাও প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে মোদি বনাম রাহুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুঙ্গে উঠেছে। ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে অন্য কংগ্রেস নেতারা রাহুল গান্ধীকেই ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী বলে উল্লেখ করলেও রাহুল নিজে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এটা দেশের মানুষ স্থির করবেন। তাদের জিজ্ঞাসা করুন।’ প্রধানমন্ত্রী মোদি তাদের প্রচারে পাকিস্তানবিরোধী বিমান হানা উল্লেখ, জাতীয়তাবাদ এবং কংগ্রেসকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুবিরোধী আখ্যা দিয়েছেন। সেই সময়ে রাহুল গান্ধী বেকারদের চাকরি, ন্যূনতম আয় গ্যারান্টি দিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ‘প্রকৃত সমস্যার’ দিকে মোড় ঘুড়িয়েছেন। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ শীর্ষ নেতারা। শ্রোতাদের আসনে অন্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
জাতীয় কংগ্রেসের ইশতেহারে প্রধান প্রতিশ্রুতি হলো- ভারতের ২৫ কোটি গরিবের পরিবারের গৃহকর্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ৬ হাজার রুপি দেওয়া হবে। দ্বিতীয় প্রধান প্রতিশ্রুতি- সরকারি চাকরিতে যে ২২ লাখ পদ শূন্য রয়েছে তা এক বছরের মধ্যে পূরণ করা হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় ৩০ লাখ চাকরি ও পঞ্চায়েতে ১০ লাখ বেকারকে চাকরি দেওয়া। সব সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ। বিধানসভা ও লোকসভায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ। কৃষককে সম্পূর্ণ ঋণমুক্তি। কৃষকের জন্য বিশেষ বাজেট, যেমন পৃথক রেল বাজেট তৈরি। আইন করে সরকারকে বাধ্য করা প্রত্যেককে স্বাস্থ্যসুবিধা দেওয়া। শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট বর্তমানের ২ শতাংশের পরিবর্তে জাতীয় বিকাশ দরের ৬ শতাংশ করা হবে। এভাবে সমাজের সব স্তরের জন্য ১৫ দফা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো হবে। জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণসহ জাতীয় পররাষ্ট্র পরিষদ গঠন করা হবে। সীমান্তে এমন পরিবেশ তৈরি করা হবে যাতে তা সমৃদ্ধি ও শান্তির প্রতীক হয়। মোদি সরকার গঠিত নীতি আয়োগ বাতিল করে ফের যোজন কমিশন নিয়োগ করা হবে। তেমনি নাগরিকত্ব আইন বাতিল করা হবে। অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গে টানটান উত্তেজনা : আজ দুপুর ১টা নাগাদ উত্তরবঙ্গের বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকে হেলিকপ্টার বা সড়কপথে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় পৌঁছবেন। দুপুর ১টা ২০ মিনিট নাগাদ শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশনের পাশে রেলওয়ে ময়দানে প্রথম জনসভায় উপস্থিত থাকবেন মোদি। সভা উপলক্ষে ইতিমধ্যে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। তৈরি হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয়। সে সভা শেষ করে বাগডোগরা বিমানবন্দর হয়ে তিনি পৌঁছবেন কলকাতায়। বিকাল ৩টা নাগাদ ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে দ্বিতীয় সভাটিতে উপস্থিত থাকবেন মোদি। ১১ এপ্রিল প্রথম দফায় গোটা দেশের সঙ্গেই নির্বাচন হবে এ রাজ্যের আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে। তাই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সিন্ডিকেট, বেকারত্ব, দলীয় কর্মীদের ওপর হামলা, অনুপ্রবেশসহ একাধিক ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে যে নিশানা করতে চলেছে তা মোটামুটি পরিষ্কার।
এদিকে গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহকে মাথায় রেখেই এই প্রথম ব্রিগেডে কোনো জনসভায় দর্শকদের মাথার ওপরে ছাউনির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমপক্ষে ১৫ লাখ মানুষের জায়গা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এ ব্রিগেডে। জার্মান অ্যালুমিনিয়ামের হ্যাঙার দিয়ে ঢাকা হচ্ছে ব্রিগেডের প্রায় ২৫ লাখ বর্গফুট এলাকা। তার ওপর থাকছে অ্যালুমিনিয়ামের শিট। মোট তিন মঞ্চ করা হয়েছে- ৬০/৩২ ফুটের মূল মঞ্চে মোদি ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা বসবেন। ৪০/২০ ফুটের বাকি দুটি মঞ্চে থাকবেন রাজ্য-জেলা স্তরের নেতারা। যদিও কোন মঞ্চে কারা বসবেন, কারা কোন গেট দিয়ে ঢুকবেন তা সবটাই ঠিক করবেন মোদির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজির কর্মকর্তারা।
ঐতিহাসিকভাবে এ ব্রিগেড ময়দানের গুরুত্ব অনেকটাই। রাজ্যের প্রতিটি বড় বড় আন্দোলন-রাজনৈতিক জনসভা-প্রতিবাদ সভা করা ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ’৭২ সালে এ ব্রিগেড ময়দানেই বিজয় সমাবেশ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে বহু মানুষ এখানে জমায়েত হবেন। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন তাই তাদের কথা ভেবেই এ ছাউনির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ গরমের দিনে আমাদের সমর্থকদের স্বাস্থ্যের দিকটা আমাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।’ ব্রিগেডের সভার পরই ৭ ও ১০ এপ্রিল আরও দুটি জনসভায় রাজ্যে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে ৪ এপ্রিল মাথাভাঙায় প্রচারণা করবেন তৃণমূল নেত্রী। এরপর ৫ এপ্রিল প্রচারণায় অংশ নিতে আসাম সফরে যাবেন মমতা। আসাম থেকে ফের উত্তরবঙ্গে ফিরে আরও একাধিক সভা করে কলকাতায় ফিরবেন ১৩ এপ্রিল। তৃণমূলসূত্রে খবর, প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে দুটি করে জনসভার লক্ষ্য নিয়েই প্রচারণায় নামছেন তৃণমূল নেত্রী। ৩ এপ্রিল শুরু করে ১৭ মে পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে প্রায় ১০০ প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যাবে মমতাকে।
বাংলাদেশ সময়: ৭:২৯:০৪ ৭৪৫ বার পঠিত