এ আমের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে নফল উদ্দিন পাইকার নামের একজনের নাম। তিনি অবশ্য এখন থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে মারা গেছেন।তার বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর থানার তেকানি গ্রামে। তার আবিস্কৃত মাতৃগাছটি এখনও বেঁচে আছে।
এইসব এলাকার মাটি লাল হওয়ায় ধান পাটসহ অন্যান্য ফসলের ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা আবাদী জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁড়িভাঙ্গা আমের চারা রোপণ করে আমের বাগান গড়ে তোলে। সরকারিভাবে আমটি গাছ থেকে পাড়ার পর দীর্ঘসময় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে হাড়িভাঙ্গা আম হতে পারে রংপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল।
রংপুরের মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত জমিদার বাড়ীর বাগানে রাজা তাজ বাহাদুর সিং এর আমলে রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল । এ বাগানটি যমুনেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। উল্লেখ্য যমুনেশ্বরী নদী বৃহত্তর রংপুর এবং বগুড়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাবনা জেলার বাঘাবাড়ির নিকট হুরা সাগরের সাথে মিলিত হয়েছে । যা হোক জমিদার বাড়ীর বাগানে রাজা তাজ বাহাদুর সিং এর আমলে রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগানটিতে নফল উদ্দিন পাইকার এর যাতায়াত ছিল। নফল উদ্দিন পাইকার এর পরিচয় নীচের প্যারাতে দিচ্ছি তার আগে বলে রাখি রাজা তাজ বাহাদুর সিং এ বাগানটি আর নাই। ১৯৮৮ সালের বন্যা ও ভাঙ্গনে যমুনেশ্বরী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ।
তমির উদ্দিন পাইকার এর পুত্র নফল উদ্দিন পাইকার, তার বাড়ী খোরাগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামে।তিনি আমের ব্যবসা করতেন । তিনি জমিদারের বাগানসহ অন্য আম চাষীদের আম পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন । আগেই বলেছি জমিদার বাড়ীর বাগানে রাজা তাজ বাহাদুর সিং এর আমলে রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগানটিতে নফল উদ্দিন পাইকার এর যাতায়াত ছিল। জমিদার -বাগানের বিভিন্ন আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুমিষ্ট সুস্বাদু, ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় তিনি ঐ গাছের একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ জমিতে রোপন করেন । তার বাড়ী বরেন্দ্র এলাকায়। বরেন্দ্র প্রকৃতির জমি শুষ্ক হয়। শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হয়। গাছটির গোড়ায় পানি দেয়ার সুবিধার্থে নফল উদ্দিন পাইকার একটি হাড়ি বসিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে গাছটিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে কে বা কারা তার হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলেন । তিনি অন্যভাবে পানি দেবার ব্যবস্থা করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই গাছটি ফলবান বৃক্ষে পরিণত হয় । গাছের আম অত্যন্ত সুমিষ্ট সুস্বাদু, ও দেখতে সুন্দর হয়। নফল উদ্দিনের, বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশী ও ভোক্তাবৃন্দ উক্ত গাছের আম খাওয়ার পর এত সুস্বাদু আমের উৎস সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন , কে বা কারা যে গাছটির পানি সেচের হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিল এটি সেই গাছেরই আম । গাছকে সনাক্তকরণের লক্ষ্যে নফল উদ্দিন কর্তৃক বারবার উচ্চারিত “হাঁড়িভাঙ্গা” শব্দটিই প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এ আমটি “হাঁড়িভাঙ্গা” নামে পরিচিত লাভ করে ।
এখন সারা দেশেই আম উৎপাদন হয়। গত কয়েক বছরে দেশের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শুরু করে সবখানেই বিপুলসংখ্যক আমবাগান গড়ে উঠেছে। আম উৎপাদনে দিনের পর দিন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে আমাদের দেশ। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ আম রপ্তানি শুরু করেছে। প্রথম বছর ৫২২ টন আম ইউরোপে রপ্তানি হয়েছে। সে সময় বাংলাদেশ থেকে কিছু আম নিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট। ২০১৬ সালে প্রায় ৩০০ টন আম রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এটি কৃষি বাণিজ্যিক খাতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা বললে ভুল হবে না। (শেষ)
********************
বাংলাদেশ সময়: ৯:১০:১৩ ১৯৭০ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম