রংপুর ভ্রমণ- (রঙে ভরা রংপুর)
এখন মনে করেন আমরা রংপুর শহরে যেয়ে সেই গানটি শুনছি- রংপুর যাইয়া দেখি রংয়েরি মেলা জানলা খুইলা দেখি দুধ আর কলা।— । রংপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল ও বিভাগীয় শহর। রংপুর অঞ্চল তামাকের জন্য বিখ্যাত ।এখানে উৎপাদিত তামাক দিয়ে সারা দেশের চাহিদা মেটানো হয়। রংপুরে প্রচুর পরিমাণ ধান-পাট-আলু ও হাড়ি ভাঙ্গা আম উৎপাদিত হয়। ভাওয়াইয়া গানের জন্মভূমি রংপুর।এ অঞ্চলের নদী-নালা কম হবার কারনে পূর্বে গরুর গাড়ির ব্যাপক প্রচলন ছিল। আর গরুর গাড়ির গাড়োয়ান গাড় চালাতে চালাতে বিরহ ব্যথায় কাতর হয়ে আপন মনে গান ধরতো।রাস্তায় গাড়ির চাকা রাস্তার উঁচু-নিচু স্থানে পড়লে তার গানের সুরে আধো-ভাঙ্গা বা ভাঁজ পড়ে যায । এই রকম সুরে ভাঙ্গা বা ভাঁজ পড়া গানকেই ‘ভাওয়াইয়া’ গান বলে । প্রেম-বিয়োগে উদ্বেলিত গলার স্বর জড়িয়ে যেরকম হয়, সেরকম একটা সুরের ভাঁজ উঁচু স্বর হতে ক্রমশঃ নীচের দিকে নেমে আসে। এ রুপ সুরে ভাঁজ পড়া ভাওয়াইয়া গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ গানের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গুলি হচ্ছে এ গানগুলোতে স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলী ইত্যাদিতুলে ধরা হয়। যেমনঃ গরুর গাড়ি চালক (গাড়িয়াল) কে উদ্দেশ্য করে তার স্ত্রী বলছে - ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাঞা রে। যেদিন গাড়িয়া উজান যায়। আব্বাসউদ্দিনকে ‘ভাওয়াইয়া গানের সম্রাট’ বলা হয়। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “উত্তরের সুর”ছবিতে একজন ভাওয়াইয়া গায়কের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়। এখানে দারিদ্র্যের কারনে ধীরে ধীরে ভাওয়াইয়া গানের বিলুপ্তির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।উল্লেখ্যযোগ্য জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া-
1.ওকি গাড়িয়াল ভাই
2.কি ও কাজল ভোমরা
3.তোরসা নদীর ধারে ধারে
4.নাইওর ছাড়িয়া যেও মোর বন্ধু
5.নদী না যাই ওরে বৈদ
6.ফাঁন্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে।
রংপুরের ভাষা বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলাদেশে ভাষাটি রংপুরী, বাহে বাংলা, আঞ্চলিত বাংলা, কামতাপুরীয়া নামে পরিচিত। ভারতে কামতাপুরী, দত্তা, রাজবংশী, রাজবাঁশি, রাজবাশি, রাজবাংশি, গোয়ালপারীয়া, কোচ রাজবংশী ; নেপালে তাজপুরি, আসামে কোচ রাজবংশী নামে পরিচিত।পৃথিবীতে এ ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশী।আসামের ধুবড়ী, কোকরাঝার, চিরাং, বঙাইগাঁও এবং গোয়ালপার পারা জেলায় এই ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা সৰ্বাধিক, দরং জেলাতে এই ভাষাভাষী কিছু সংখ্যক লোক আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুরি উত্তর দিনাজপুর দক্ষিণ দিনাজপুর এবং দাৰ্জিলিং এর তরাই অঞ্চল, বিহারের কাটিহার, পূৰ্ণিয়া এবং কিষানগঞ্জ জেলার কিছু অঞ্চল, নেপালের মোরেং এবং ঝাঁপা জেলা, ভূটানের কিছু অঞ্চল তথা বাংলাদেশের অবিভক্ত রংপুর জেলায় এই ভাষার মানুষ আছে। মেঘালয়, ত্ৰিপুরা এবং সম্বলপুর (ওড়িশা)তে এই ভাষার লোক আছে। অঞ্চলভেদে রাজবংশী, গোয়ালপারীয়া, উত্তর বঙ্গীয়, দেশী ভাষা, রংপুরী ভাষা আদি বিভিন্ন নামে পরিচিত। সম্প্রতি ২১ শে ফেব্রুয়ারী তারিখে দেশপ্রিয় পার্কের এক সভায় ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজবংশী ও কামতাপুরীকে আলাদা ভাষা ও অন্যান্য লিপিতে লেখার স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন৷
থাক সেসব কথা - আগামী কাল আপনাদের রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলাতে নিয়ে যেতে চাই। সাথে মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি পায়রাবন্দ ভ্রমণ ফ্রি । (চলবে)
Chat Conversation End
বাংলাদেশ সময়: ২১:১৭:৪৮ ৯৪৮ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম