বঙ্গ-নিউজঃ বৈরী আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে আজ বুধবার সকাল থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যাওয়া তিন হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। আজ যাদের সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা ছিল তাঁরা অনেকেই কক্সবাজারের দিকে চলে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ মো. শহীদুল ইসলাম বঙ্গ-নিউজকে বলেন, বজ্রমেঘের ঘনঘটার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ছয়টা থেকে আজ বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত কক্সবাজারের ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগর ও নাফনদী উত্তাল। এ অবস্থায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বিপজ্জনক। তাই মাছ ধরার ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও এ সতর্ক সংকেত বলবৎ থাকতে পারে।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে পর্যটক জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, দ্য আটলান্টিক ক্রুজ ও এলসিটি কাজলে করে আড়াই হাজারের মতো পর্যটক সেন্টমার্টিন বেড়াতে যান। সেখানে রাত্রি যাপন করতে প্রায় দেড় হাজারের পর্যটক থেকে যান। এর আগের দিন যাওয়া আরও দেড় হাজারের মতো পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করছিল।এদিকে, আজ বুধবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকেরা এসে ভিড় করছিল টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাটে। তবে এ নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় তারা কক্সবাজারের দিকে চলে যাচ্ছেন।
পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের টেকনাফের ব্যবস্থাপক শাহ আলম ও এলসিটি কাজলের ব্যবস্থাপক মনির আহমদ বঙ্গ-নিউজকে বলেন, সতর্ক সংকেতের কারণে আজ কোনো জাহাজ টেকনাফ থেকে ছেড়ে যেতে পারেনি। ফলে গত সোম ও মঙ্গলবার সেন্টমার্টিনে বেড়াতে এসে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় আটকা পড়েছে পর্যটকেরা। সংকেত কেটে গেলে টেকনাফ থেকে জাহাজ গিয়ে তাদের ফেরত আনা হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফ অঞ্চলের পরিদর্শক (পরিবহন) মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সতর্ক সংকেত অমান্য করে পর্যটক পরিবহন করলে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে এ নৌপথে জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, দ্য আটলান্টিক ক্রুজ ও এলসিটি কাজল চলাচল করছে। রুট পারমিট না থাকায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি গ্রীন লাইন-১ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এমভি ফারহান ক্রুজের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ায় বে-ক্রুজ নামে আরও একটি জাহাজ বন্ধ রয়েছে।
সেন্টমার্টিনে থাকা পর্যটকদের মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ার হামিদুর রহমান নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ও টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হোসাইনের ভাষ্য, আজ ভোররাত তিনটা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয় এবং সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তাই অধিকাংশ পর্যটক হোটেল-মোটেল ও কটেজে আটকা পড়ে আছেন। সাগরও প্রচণ্ড উত্তাল। তাই স্থানীয় কোস্টগার্ড সদস্যরা ট্রলারও ছেড়ে যেতে দিচ্ছে না ।
সী ফাইন রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী আবদুর রহিম বলেন, হঠাৎ করে আবহাওয়ার সতর্কবার্তার কারণে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে পর্যটক জাহাজ ও সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে বিভিন্ন হোটেল-মোটেল-কটেজে প্রায় তিন হাজারের মতো শিশু, নারী ও পুরুষ আটকা পড়েছেন।
সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সেকান্দর আলী বলেন, আটকে পড়া পর্যটকেরা দ্বীপের ১০৬টি হোটেল-মোটেল ও কটেজে অবস্থান করছেন। সংকেতের কারণে সাগর উত্তাল থাকয় জাহাজ চলাচল আজ বুধবারও বন্ধ রয়েছে।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল হাসান বলেন, যারা সেন্টমার্টিন দ্বীপে আছেন তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে এবং ভাটার সময় কোনো পর্যটক যাতে সাগরে না নামে সে ব্যাপারে প্রচার চালাতে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫১:২৪ ৭২৬ বার পঠিত