স্টাফ রিপোর্টার, বঙ্গ-নিউজঃ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তাবলিগ জামাতের দিল্লি মারকাজের অনুসারীদের অংশগ্রহণে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্যায়ের সময় একদিন বাড়ানো হয়েছে; আখেরি মোনাজাত সোমবারের পরিবর্তে হবে মঙ্গলবার।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ইজতেমার মাঠ গোছানোর প্রস্তুতিতে সময় কম পাওয়া এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সাদপন্থি মুরুব্বীদের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে এ তারিখ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
“এ সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এ পক্ষের আখেরি মোনাজাত হবে।”
রোববার ফজরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
মাওলানা হাফিজ বয়ান করেন উর্দু ভাষায়। বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের মাওলানা আব্দুল্লাহ মুনসুর তা বাংলায় তরজমা করে শোনান।
বয়ান শুরুর পরপরই শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টি। শীতল বাতাস আর বৃষ্টির মধ্যেই মাঠে বসে বয়ান শুনতে হয় ইজেতমায় যোগ দেওয়া হাজার হাজার মানুষকে।
তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে এবার চার দিনের ইজতেমা হচ্ছে দুই ভাগে ভাগ করে। ইজতেমার প্রথম দুই দিন বরাদ্দ ছিল ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার মাওলানা জুবায়েরের ছেলে জুহাইরুল হাসানের অনুসারীদের জন্য। আখেরি মোজাতের মধ্য দিয়ে শনিবার ওই অংশের সম্মিলন শেষ হয়।
আর রোববার সকালে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছের নাতি দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের ইজতেমা। আখেরি মোজাতের মধ্য দিয়ে সোমবার তাদের অংশের সম্মিলন শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে এ পক্ষের মুরুব্বীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইজতেমার সময় একদিন বাড়িয়ে আখেরি মোনাজাত মঙ্গলবার করার সিদ্ধান্ত হয়।
সাদপন্থি মুরুব্বী হারুন-অর রশিদ বলেন, দুই পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী শুক্রবার জোবায়েরপন্থিদের ইজতেমা শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু এবং শনিবার দুপুরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তারা বয়ান শুরু করেন একদিন আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বাদ আছর থেকেই।
“শনিবার তাদের আখেরি মোনাজাতের পর ময়দান এলাকায় পরিত্যক্ত ও উচ্ছিষ্ট খাবার এবং বিভিন্ন আবর্জনা ফেলে রেখেই মাঠ ত্যাগ করেন। মধ্যরাতের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিলেও স্বল্প সময়ে রাতের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষে মাঠের পুরো আবর্জনা সরানো সম্ভব হয়নি।”
হারুন বলেন, এ পরিবেশের মধ্যেই পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী রোববার সকালে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করেন। বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু করা হয় এদিনের বিশ্বইজতেমা। এর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি। বৃষ্টি হওয়ায় ময়দানের কোনো কোনো স্থানে পানি ও কাদা জমে যায়। এ প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে বয়ান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। পরে যথারীতি বাদ জোহর শুরু হয় বয়ান।
তিনি বলেন, ময়দানে বসে কয়েক কয়েক লাখ মুসল্লি বয়ান শুনতে থাকেন। নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায়ও যথাসম্ভব মাঠ গোছানো হয়। শীত-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নেন। ময়দানের গুছানোর কাজ করতে গিয়ে সমস্যা দেখা গেছে। ময়দানের কিছু কিছু মাইক, কোথাও পানির লাইন ও গ্যাস লাইনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। টয়লেট পরিষ্কারর করার জন্য পানি সরবাহের বেশ কিছুসংখ্যক মোটর পাওয়া যায়নি। এছাড়া বৈদ্যুতিক তার, বাথরুম ও পানির লাইনের ফিটিংসের মালামাল না থাকায় দ্বিতীয় পর্বে আসা মুসল্লিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
পরে বিষয়টি সিটি করপোরেশনের নজরে এলে মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারের সুবিধার্থে ৩১টি নতুন পানির মোটর এনে তা দ্রুত সংযোগের ব্যবস্থা করে দেন। পরে মাইক, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সকল কাজ সম্পন্ন করা হয় বলে হারুন জানান।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, জোবায়েরপন্থিরা মাঠ খালি করে দেওয়ার পর শনিবার মধ্যরাতের মধ্যেই প্রশাসন ইজতেমা ময়দানটি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং সাদপন্থি মুরুব্বীদের কাছে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। মাঠে টুকটাক কিছু সমস্যা থাকলেও তা সব সমাধান করা হয়।
“ইজতেমা মাঠের বিভিন্ন খিত্তায় মুসল্লির সংখ্যা গত দুই দিনের তুলনায় অনেকটা কম লক্ষ্য করা গেছে। রোববার বিদেশি নিবাসেও মুসল্লির সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। তারপরও ইজতেমা এলাকায় আইনশৃঙ্খলাসহ সকল ব্যবস্থাপনা আগের মতই বহাল রয়েছে।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা, যানজট নিরসনসহ সার্বিক বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ইজতেমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৮:৪২ ৫১৯ বার পঠিত