“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ জালাল উদদীন মাহমুদ
রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৮৪ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -৪৩ , ”আম নিয়ে বিড়ম্বনা”-৫(শেষ)

এক সময় আম নিয়ে দুলাল সাহেবের ঘটনাও চাপা পড়ে যায়। কিন্তু রাজশাহী - চাঁপাই নবাবগঞ্জের আম নিয়ে কেচ্ছা-কাহিনীর অব্সান হয় না। এমনি একটি কাহিনী আজ খুব মনে পড়ছে। বছর তিনেক আগে রাজশাহীর বাঘার আমার এক বন্ধু হঠাৎ অফিসে আমার সামনে এসে হাজির। অনেক দিন পর দেখা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি তার সাথে নানান গাল গল্প করলাম। তবে শুরু থেকেই লক্ষ্য করেছিলাম তার মন কি যেন কি কারণে দুঃখে ভারাক্রান্ত। দুপুরে এক সাথে খেলাম। তারপর জিজ্ঞাসা করলাম তার হঠাৎ ঢাকায় আগমনের হেতু। সে বললো তুমি তো জান বাঘায় আমার বড় দুটি আম বাগান আছে। বছর ত্রিশেক আগে আমি যখন চাকুরীতে যোগদান করি তখন আমাদের সার্কেল অফিসের বস কথাটা জেনে যায়। সে দাবী করে বসে ঢাকায় আমাদের হেড অফিসে কিছু আম পাঠাতে হবে। আমি যেন পাঁচ মন আমের ব্যবস্থা করে দেই। বস সহ অফিসের সবাই চাপাচাপি শুরু করে। অবশেষে আমি রাজি হই। সেই শুরু। বসের পরে বস গেছে নতুন বস এসেছে আর আমি আম সরবরাহ করেই গেছি। যে বছর কোনও নীতিমান বস আমার কাছ থেকে আম চান নাই সে বছরও অফিসের কোনও না কোন স্টাফ ঢাকায় পাঠানোর নাম করে আমার কাছ থেকে আম নিয়েছে। হাতে গোণা কয়েকজন বস কেবল আমার কাছ থেকে জোর করে টাকা দিয়ে আম নিয়েছে। অনেকে টাকা দিতে চাইলেও আমি আবার নেইও নাই । কারণ পৈতৃক বাগান আমার । সৌজন্য করেও অনেক সময় অনেককে আম দিতে হয়। অফিসের সবাই বলতো আম দেবার কারণে ঢাকার হেড অফিসে আমার নাকি অনেক সুনাম হচ্ছে। আমি অবশ্য কোনদিন ঢাকার হেড অফিসে এসে আমার সুনামের বিষয়টি যাচাই করি নাই। প্রয়োজনও মনে করি নাই। তুমিতো জান আমার চাকুরীর তেমন বদলী বা প্রমোশনও নাই। আমার মত সবাই বছরের পর বছর একই অফিসে কাজ করে। আমিও করছি। কিন্তু হঠাৎ কয়েক দিন আগে আমার রংপুর-এ বদলী হয়েছে। ভাবলাম আম দেবার সুবাদে হেড অফিসের সবাই তো আমাকে চেনে। ঢাকায় যেয়ে একটু বদলী ঠেকানোর তদবীর করে আসি। তুমিতো জান তোমার ভাবী রাজশাহীর একটা বেসরকারী কলেজে চাকুরী করে। দুই ছেলেও রাজশাহীতে পড়ে। চাকুরীর শেষ সময়ে এসে অহেতুক হয়রাণীমূলক এ বদলী আমার জন্য খুব যন্ত্রণা দায়ক। তাই গতকাল হেড অফিসে বদলী ঠেকানোর তদবীরে গিয়েছিলাম। কাহিনী দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে দেখে তাকে থামিয়ে দিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কাজ হলো?

 

আমার এ ছোট প্রশ্নে হঠাৎ সে আবেগগ্রস্থ হয়ে পড়লো। প্রথমে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে এবং পরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিল সে। আমি কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়লাম। ভাগ্যিস আমার সামনে আর কেউ ছিল না। কি ঘটেছে তা তো আর আমি জানিনা। তবে মনে হলো ঘটনা যাই হোক তাকে কাঁদতে দেয়া উচিৎ। শুনে ছিলাম কাঁদলে নাকি মন হাল্কা হয়। যদিও আমার জীবনে আমি এর তেমন প্রমাণ পাইনি। অনেক কেঁদেছি। সাময়িক উপশমও হয়তো পেয়েছি। কিন্তু ফাইনালি মন আর হাল্কা হয় নাই। নারীরা নাকি আরো বেশি কাঁদে।পূর্ণবয়স্ক হতে হতে প্রতিবছর নারীরা গড়ে ৬৪ বার কেঁদে ফেলে, আর পুরুষেরা কাঁদে মাত্র ১৭ বার। আবার বুড়ো বয়সে পুরুষ ও নারীর হরমোনে সমতা আসার পর মেয়েরা কাঁদে কম কিন্তু পুরুষদের কান্না বাড়ে! সামনে সে কাঁদছে আর আমি এ সব ভেবে চলেছি। বাঘার বন্ধুর কান্না এক সময় থেমে গেল। রুমাল বের করে চোখ মুছলো। তারপর হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে আমার হাত চেপে ধরে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে বলে উঠলো জালাল, আমি ত্রিশ বছর ধরে বছরে পাঁচ মণ করে বাগানের আম দিয়ে আসছি আর শুনছি হেড অফিসে আমার অনেক নাম হচ্ছে। কিন্তু জালাল, দেখ আমি কোনও দিন হেড অফিসে আসিও নাই। ত্রিশ বছর ধরে শুনে শুনে আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস হয়েছিল যে হেড অফিসের সবাই আমার নাম জানে। কাল প্রথমে বড় স্যারের রুমে ঢুকেছিলাম। পরিচয় দিলাম আমি রাজশাহীর বাঘার অমুক। তারপর বদলীর বিষয়টি খুলে বললাম। স্যার তো আমাকে চিনলেনই না উল্টা বললেন আপনি বদলী বাতিলের তদবীরে আমার কাছে কেন আসলেন? আর একবার যদি আসেন আপনার এ বদলী ক্যান্সেল করে আমি সিলেট বদলী করে দিব। বের হয়ে যান এখুনি। আমি বের হতে গড়িমসি করছিলাম দেখে স্যার পিওন ডেকে আমাকে বের করে দিল। আমি বের হয়ে আসার সময়ও স্যার উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে গালিগালাজ করছিল। স্যারের রুম থেকে অপমানিত হয়ে বাহিরে আসলাম। বাহিরের অন্যান্য অফিস স্টাফদের আমার পরিচয় দিলাম- আমি রাজশাহীর বাঘার অমুক। আম পাঠানোর প্রসঙ্গটাও তুললাম। আমের কথা বলার সাথে সাথে ২/৩ জন বলে উঠলো আপনি অফিসের ভিতর এসব অপেনসিভ কথা কেন বলেন? বের হয়ে যান। বস যে আমাকে পিওন ডেকে বের করে দিয়েছে এ কথাটা অফিসে জানাজানি হয়ে গেছে। তাই তারাতো খারাপ ব্যবহার করবেই। শুধু একজন আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে সব কথা শুনলো। বললো রাজশাহী থেকে আম এ অফিসে ঠিকই আসে। কিন্তু আপনার নামে না। ওখানকার বসের নামে। আপনার কোনও কোনও বস প্রমোশন –ভাল পোস্টিং ইত্যাদি কাজে আপনার আম ব্যবহার করেছে। সাহেব , এ জগতের সর্বত্রই প্রতারণার জয়। আমি বললাম তাহলে সবাই যে বলতো , হেড অফিসে আমার অনেক সুনাম এ আম দেবার জন্য। ভদ্রলোক বলল, আপনি অনেক সরল লোক দেখছি। সারা জীবন বাড়ীর কাছের অফিসে চাকুরী করেছেন তো। নর্থ বেঙ্গলের আরো অনেককে এরূপ সহজ সরল দেখেছি। একবার বাহির থেকে চাকুরী করে আসেন , দীন দুনিয়া সবই বুঝতে পারবেন।

আমার দিকে তাকিয়ে বন্ধুটি জানালো তার চাকুরীতো আছে মাত্র এক বছর। এখন দীন দুনিয়া বোঝার জন্য বাহিরে পোস্টিং নিয়ে কি লাভ হবে ? আবার সে মুখে রুমাল চেপে ধরে কান্না থামালো। আমি তাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা খুঁজে পেলাম না। এ সময় তার মোবাইলে একটা কল আসলো । কল শেষে বিদায় নেবার জন্য সে উঠে দাঁড়ালো। তখন তাকে অনেক শান্ত মনে হচ্ছিল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সে বললো আমি আম দিয়েছি কি দেই নাই এটা বিষয় না । এভাবে একজন বস কি তার অধঃস্থনের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে ? রংপুরে বদলী হয়েছে –না হয় যাব রংপুরে। কিন্তু আমার রাজশাহীর অফিসের সবাই তো জেনে যাবে যে বস আমাকে এ ভাবে পিওন ডেকে বের করে দিয়েছে। মোবাইলের যুগে এতক্ষণ সবাই হয়তো জেনেও গেছে। কারণ কিছুক্ষণ আগে তোমার ভাবী ফোন করে জানতে চাচ্ছিল –তোমার ঢাকার অফিসে কি হয়েছে। আমার এক কলিগের স্ত্রী তার সাথে একই কলেজে চাকুরী করে। সেই হয়তো কথাগুলো বলে থাকবে।
আমার সাথে এবার সে বিদায়ী মোলাকাত করলো। বললো তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে গেলাম-পারলে মাফ করো।

বছর ত্রিশেক আগে দুলাল ভাইকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত প্রবাদ সম বাক্যটি মনে পড়ে গেল-একজনের আম আরেক জনের কাম। ভাবলাম জগতে তারাই একমাত্র উদাহরণ নয়। কত ক্রেডিট, কত পরিশ্রমের ফসল এ জীবনে যে অন্য একজন নিয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। ঠেকে ঠেকে শেষকালে না হয় বুঝতে পেরেছি নিজের দাবী নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। নিজের ঢাক নিজেকেই পেটাতে হয়। অন্য কেউ উড়ে এসে আপনাকে মার্কেটিং করবে এমন ভাবলে আপনার পরিশ্রমের ফসল দিয়ে শুধু অন্যের গোলা ভরে উঠবে। কিন্তু এখন আর এ সব জ্ঞান দিয়ে আমার বা আমার সেই বন্ধুর কি লাভ ? সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়। সে হোক না ইহকালের হোক না পরকালের। ফকির লালন গেয়েছেন-

সময় গেলে সাধন হবে না
দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন জানলে না
তুমি কেন জানলে না
সময় গেলে সাধন হবে না ।

বাংলাদেশ সময়: ১০:০৮:১৬   ৬৩২ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিনোদন’র আরও খবর


১৬ ব্যান্ডের সবচেয়ে বড় কনসার্ট আজ আর্মি স্টেডিয়ামে
এবার হিন্দি সিনেমার নায়িকা বাংলাদেশের জয়া আহসান
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস, —”পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো”
শুভ জন্মদিন সুরের পাখী রুনা লায়লা
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
রক্তাক্ত অমিতাভ বচ্চন হাসপাতালে
চঞ্চল,মেহজাবীন, তিশা, ফারিণ,পলাশ, শাহনাজ খুশি -সবাই গেলেন আমেরিকায়
দুই না তিন পুত্র সন্তানের বাবা শাকিব খান! সূত্রঃ জনকন্ঠ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
বুবলীর সন্তানের বাবা শাকিব খান, বয়স আড়াই বছর

আর্কাইভ