“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৮০তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -৩৯ , ”আম নিয়ে বিড়ম্বনা”-১

বগুড়ায় একটা ডায়ালগ এক সময় খুব প্রচলিত ছিল মাহবুব সাহেবের(ছদ্মনাম)আম, দুলাল সাহেবের কাম। সংশ্লিষ্ট কোন প্রসংগ এলে এ ডায়ালগ টা ব্যবহার করা হতো তখন। ডায়ালগের উৎপক্তিটা কিভাবে হলো তা একদিন আমি দুলাল সাহেবের নিকট থেকে জানতে চেয়েছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম একদিন কিন্তু দুলাল সাহেব মিনিমাম দশদিন আমাকে সে কাহিনী শুনায়েছে। শুনতে শুনতে আমারও মুখস্থ হয়ে গেছে।
দুলাল সাহেবকে যারা চিনতেন ,তারা সবাই একমত হবেন যে, দুলাল সাহেব ছিলেন গল্প বলার উস্তাদ। বেশ রসিয়ে রসিয়ে তিনি ঘটে যাওয়া মজার কাহিনীর বর্ণনা দিতে পারতেন।তবে স্টক বোধ হয় ছিল তার সীমিত। একই ঘটনা রিপিট হয়ে যেত। হোক না রিপিট দুলাল সাহেব একবার শুরু করলে তা শেষ না করে কিছুতেই ছাড়বে না। ভার্চুয়াল জগৎ নাই ,নেট নাই -সে যুগে এ সব রসের গল্প বারবার শোনা শ্রোতার তেমন অভাব হতো না। গল্প বলার ফাঁকে ফাঁকে দুলাল সাহেব অবশ্য চা-পান-বিড়ি-সিগারেট যে যা খায় তাকেই তাই অফার করতো। চা পানীয়টা যে এমনই, “টা” ছাড়া জমে না কিছুতেই। দুলাল সাহেব এটাও খুব ভাল করেই বুঝতো।এমন হৃদয়খোলা বক্তার শ্রোতার অভাব অন্ততঃ সে কালে ছিল না। তা ছাড়া তার গল্প বলার ঢংটাও ছিল চমৎকার। মজার ঘটনা গুলো মনে রাখার ক্ষেত্রে তার স্মৃতি শক্তিও ছিল কিন্তু অসাধারণ।
যা হোক , মাহবুব সাহেবের আম, দুলাল সাহেবের কাম ডায়ালগ টার উৎপত্তির ইতিহাসটাই এখন শুরু করি।

মাদলা শাখার ম্যানেজার দুলাল সাহেবের যে পটুয়াখালী বদলী হয়েছে তা আগেই জানায়েছি। এ বদলী দুলাল সাহেবের জীবনে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সৃষ্টি করে। তিনি বগুড়ায় আবার ফিরে আসার জন্য অস্থির হয়ে উঠেন। বগুড়ায় ফিরে আসার জন্য তিনি রীতিমত তদবীর শুরু করেন।বিভিন্ন স্থানে ধর্ণা দিতে থাকেন।এমনকি HPD -ও শুরু করেন। HPD মানে হাতে পায়ে ধরা আর কি।

একদিন দুলাল সাহেব বগুড়ায় একজনের নিকট থেকে নাকি জানতে পারেন ঢাকার একজনের বদলীর তদবীরে হাত আছে ।এ কারনে বগুড়ার অনেকেই নাকি তার কাছে বিভিন্ন তদবীরে যায়। ঐ তদবীরকারী ভদ্র লোক অবশ্য ব্যাংকের কেউ ছিলেন না।তো, দুলাল সাহেব এক ছুটির দিনে তার বদলীয় জন্য ঐ ভদ্র লোকের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। বাসার সামনে গিয়ে দেখেন বগুড়ার অন্য এক শাখার ম্যানেজার মাহবুবসাহেবও তার একটা তদবীর নিয়ে এই মাত্র সেখানে পৌঁছেছেন। মাহবুব সাহেবের বাড়ী আবার রাজশাহী অঞ্চলে। তখন আমের মৌসুম চলছে। মাহবুব সাহেব ট্যাক্সিতে বড়বড় তিন ঝুঁড়ি আম নিয়ে এসেছেন। এতগুলি আম আনতে গিয়ে বেচারার অবস্থা একেবারে কাহিল । একটা ঝুঁড়ি প্রায় তার কোলের উপর ছিল। বাঁশের ঝুঁড়ির খড়-কূটা দিয়ে সারা গা মেখে একাকার ।

দুলাল সাহেবকে দেখে তিনি খুশী হয়ে আমগুলো নামাতে একটু হেল্প করতে বললেন । মাহবুব সাহেব আবার বয়সে না হলেও পদবীতে দুলাল সাহেবের সিনিয়র। দুলাল সাহেব সহজ সোজা লোক ছিলেন। তিনি সাথে সাথে হাত লাগালেন।আম নামানো হলো। উনি আবার দুলাল সাহেবকে বললেন ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে মিলে আমগুলো গেটের মধ্যে ঢুকাতে। গেট খোলাই ছিল। এ ফাঁকে মাহবুব সাহেব হাত-পা-শার্ট-প্যান্ট ঝেড়ে, প্যান্ট ভালভাবে ইন করে মাথায় চিরুনী দিয়ে ভিতরে ঢোকার জন্য রেডী হতে লাগলেন।
ও দিকে হয়েছে কি- তদবীরকারী ভদ্রলোক দোতলা থেকেএতক্ষণ সব দৃশ্য দেখছিলেন। তিনি যখন দেখলেন- সব আমের ঝুঁড়ি ঢোকানো হয়েছে তখন দোতলা থেকেই দারোয়ানকে হুকুম দিলেন গেট বন্ধ করে গেস্টকে নিয়ে উপরে আসতে। অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে দুলাল সাহেব এখন গেষ্ট রুমে আর মাহবুব সাহেব গ্রীলের নেট দ্বারা তৈরী বন্ধ গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে কলিং বেল টিপছেন। দারোয়ান তখনও আমগুলো উপরে তুলতে ব্যস্থ।
দুলাল সাহেবের সাথে তদবীরকারী স্যারের পরিচয় পর্ব শেষ হলে দুলাল সাহেব বললেন- স্যার বাহিরের উনি আমাদের অমুক শাখার ম্যানেজার। স্যার বুঝলেন ,বাহিরের উনি যদি ভিতরে ঢোকে তাহলে আবার আম দেবার কারনটি জানাজানি হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া ঐ ম্যানেজার তো খালি হাতে এসেছে।সবচেয়ে বড় কথা হলো সাক্ষী রেখে এ ধরনের কোন কাজ করা উচিৎ নয় ।বাজারে আরো দুর্নাম রটতে পারে। তাই ভদ্রলোক স্যার দারোয়ানকে বলেদিলেন বাহিরের উনাকেএখন চলে যেত বলো। ভিতরে যেন না ঢুকতে পারে। এ সময় দুলাল সাহেব কেবল আমতা আমতা করতে থাকলো কিন্তু কিছুস্পষ্ট করে বলতেও পারলোনা । অবশ্য বলার সুযোগও মিললো না তার।গেটের গ্রীলের দরজার ভিতর দিয়ে তাকিয়েদুলাল সাহেব দেখলেন মাহবুব সাহেব বাহিরে দাঁড়ায়েই আছে। গেট তালাবদ্ধ। দুলাল সাহেবের অবশ্য তখন কিছু আর করারও নাই। এদৃশ্য ঐ স্যার ভদ্রলোকও দেখলেন এবং দারোয়ানকে ডেকে ধমক দিয়ে বললেন বাহিরের উনাকে তাড়াতাড়ি বিদায় করে দাও। খবরদার ভিতরে ঢুকতে দিবে না। আগামীকাল আসতে বলো।অনেকক্ষন ধরে দারোয়ানের সাথে একটা বোঝাপড়ার চেষ্টা করলেন মাহবুব সাহেব । কিন্তু কোন লাভ হলো না। উপায়ান্তর না দেখে বিফল মনোরথ হয়ে মাহবুব সাহেব এক সময় চলে গেলেন। তখন তো আর মোবাইল ছিল না তাই দুলাল সাহেবের সাথে যোগাযোগের তার কোনও সুযোগও ছিল না। এবার ভদ্রলোক স্যার দুলাল সাহেবের সাথে আলাপ শুরু করলেন।
- রাজশাহীর আম বুঝি। বেশ টসটসে ,হিমসাগর না? (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ১০:২০:৩৫   ৪৯৫ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিনোদন’র আরও খবর


১৬ ব্যান্ডের সবচেয়ে বড় কনসার্ট আজ আর্মি স্টেডিয়ামে
এবার হিন্দি সিনেমার নায়িকা বাংলাদেশের জয়া আহসান
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস, —”পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো”
শুভ জন্মদিন সুরের পাখী রুনা লায়লা
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
রক্তাক্ত অমিতাভ বচ্চন হাসপাতালে
চঞ্চল,মেহজাবীন, তিশা, ফারিণ,পলাশ, শাহনাজ খুশি -সবাই গেলেন আমেরিকায়
দুই না তিন পুত্র সন্তানের বাবা শাকিব খান! সূত্রঃ জনকন্ঠ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
বুবলীর সন্তানের বাবা শাকিব খান, বয়স আড়াই বছর

আর্কাইভ