বঙ্গ-নিউজ ডটকম: ম্যানচেস্টারের ভদ্রলোক পারিবারিকভাবে পোর্টসমাউথের সমর্থক। আন্তর্জাতিক একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে চাকরিসূত্রে বাংলাদেশে আছেন। পঞ্চাশোর্ধ সেই ব্রায়ান ক্লার্ক প্রেসবক্সে এসে সুপার কাপের ফাইনালে বাজি ধরেছিলেন মোহামেডানের পক্ষে। মাঠে বসে সাতটি ফুটবল বিশ্বকাপ দেখা ক্লার্কের অনুমান মিথ্যা হয়নি। ফাইনালে শেখ রাসেলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সুপার কাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল মোহামেডান। আর হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকেও ইতিহাস গড়া হলো না শেখ রাসেলের। একই মৌসুমে চারটি শিরোপা জেতার রেকর্ডটা অধরাই থেকে গেল।
গ্যালারি ভরা দর্শক। আতশবাজি-পটকার কানফাটানো শব্দ। স্নায়ুক্ষয়ী উপভোগ্য উত্তেজনা। মাঠে মারামারি…লাল কার্ড, হলুদ কার্ড। অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ গড়ানো। অবশেষে টাইব্রেকার। নখকামড়ানো অপেক্ষা দুই দলের। একটা আদর্শ ও অসাধারণ ফাইনালের সব রসায়নই ছিল কালকের ম্যাচে।
বিদেশি ছাড়া টুর্নামেন্ট। স্থানীয় খেলোয়াড়দের ওপর কর্মকর্তাদের আস্থার সংকট। বকেয়া পারিশ্রমিকের দাবিতে খেলোয়াড়দের আন্দোলন। প্রথম দিকে সুপার কাপে খেলার অস্বীকৃতিতে অটল মোহামেডানের এমন বাজিমাত এই মৌসুমের ফুটবলে সবচেয়ে বড় চমকই বলতে হবে। ম্যাচ শেষে মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা দিলেন ল্যাপ অব অনার। আর মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মিঠুন, এমিলি, জাহিদরা।
ম্যাচ শুরুর দিকে আক্রমণে উঠেছে শেখ রাসেলই। কিন্তু সেটা প্রথম ১০ মিনিট। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, খেলাটা হেলে গেছে মোহামেডানের দিকে। কিন্তু মোহামেডানের দুর্ভাগ্য, ৯০ মিনিটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি। পুরো টুর্নামেন্টে গতিময় ফুটবল খেলা মোহামেডান ১২০ মিনিট খেলেছে একই ছন্দে। প্রথমার্ধে সাতটি কর্নার আদায় করে নেয় তারা, কিন্তু গোল পায়নি একটি থেকেও। উল্টো প্রতি-আক্রমণ থেকে প্রথমে এগিয়ে যায় শেখ রাসেলই।
২৭ মিনিটে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে জাহিদের ক্রস, চমৎকার প্লেসিংয়ে বল জালে পাঠান এমিলি (১-০)। উচ্ছ্বাসে জার্সি খুলে ফেলা এমিলি এর পরই দেখেন হলুদ কার্ড।
ওয়াহেদ আর মোবারকের দারুণ বোঝাপড়ায় দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে মোহামেডান। ওয়াহেদ বেশ কয়েকবার ঢুকে গেছেন শেখ রাসেলের রক্ষণদুর্গে। ৫২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে নিয়ে বক্সে ঢুকেও পারেননি গোল করতে। সেবার গোলরক্ষক বিপ্লবকে ফাঁকি দিলেও জোরালো শটটি বাম পোস্টে লেগে ফেরে। তবে পরের মিনিটেই সাফল্য পেয়ে যান মোহামেডানের তরুণ স্ট্রাইকার। বিপ্লবের হাত ফসকে যাওয়া বল থেকে সমতায় ফেরান দলকে (১-১)। ৭৪ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল শেখ রাসেল। আনোয়ারের ক্রস থেকে মাথা ছোঁয়ালেই চলত এমিলির। কিন্তু পারেননি যুগ্মভাবে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া এই স্ট্রাইকার।
১১৯ মিনিটে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন শেখ রাসেলের লিঙ্কন ও মোহামেডানের ওয়াহেদ। দুজনই মাঠ ছাড়েন লাল কার্ড দেখে। নির্ধারিত সময়ে বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত সেভ করেছেন বিপ্লব। কিন্তু টাইব্রেকারে তাঁর চেয়ে বেশি মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তরুণ মামুন খান। এমিলির শট ঠেকাতে না পারলেও নাহিদ আর সবুজকে ফিরিয়েছেন দারুণ দক্ষতায়। মোহামেডানের চারটি গোল মোবারক, মেজবাবুল, সোহাগ ও মিন্টুর। শুধু রজনীর শট ফিরিয়েছেন বিপ্লব।
ফাইনালের আগে শেখ রাসেল কোচ মারুফুল হক বলেছিলেন, ‘মৌসুমের তিনটি শিরোপা জেতা দল কেন চতুর্থটি পাবে না?’ চতুর্থটি তাঁকে উপহার দিতে পারলেন না খেলোয়াড়েরা। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হলো আত্মবিশ্বাসী কোচকে। শেখ রাসেলের খেলোয়াড়েরাও কি কাল রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পেরেছেন?
মোহামেডান: মামুন, মিন্টু, তপু, রজনী, ইয়াসিন, মারুফ (শরীফুল/ইকবাল), সোহাগ, মেজবাবুল, সোহেল, মোবারক, ওয়াহেদ।
শেখ রাসেল: বিপ্লব, উত্তম, লিঙ্কন, নাহিদ, ইমরুল, মামুন মিয়া, মামুনুল, জাহিদ (ইমন বাবু), আনোয়ার (সবুজ), মিঠুন, এমিলি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৬:৫১ ৪৭৪ বার পঠিত