৭৯তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -৩৮ , মোহাম্মদ হোসেন স্যার -৪ (শেষ)
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন- ‘যে দেশে গুণের সমাদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না। আমরা গুণীর যে কতদুর সমাদর করি তার কিছূ উদাহরন অবশ্য আমার হাতে আছে-
১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট যখন জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন,
সে অনুষ্ঠানে এর স্থপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাষ্ট্রীয় ভিআইপিরা চলে যাওয়ার পর
স্থপতি মাইনুল হোসেন সেখানে গিয়ে জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে দুর থেকে দেখেছিলেন তার
সৃষ্টিকর্ম।
ভারতের পুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিমের ওপর পিএইচডি করা হয় । শাহ আব্দুল করিম জীবিত থাকা অবস্থায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি তাঁকে নিয়ে গবেষণা করেছে।
রাজার দৃষ্টি পড়ে ঘুঁটে কুড়ানীর ভাগ্যও ফেরানোর দিন আর নেই। তা আর সম্ভবও নয়। সম্রাট বিক্রমাদিত্যের , সম্রাট আকবরের বা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নবরত্ন সভায় স্থান পাবার সুযোগও আর নাই। সুযোগ থাকলেও এদেশে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায়না। ঘরের গুণী মানুষকে প্রায়ই আমরা দাম দেই না ,কিন্তু পরকে আপন করে নেই ! বর্তমানে গুণী জনকে সন্মান জানানোর প্রচেষ্টা দেশে শুরু হয়েছে। শুধু শুরু হলে হবে না , তা অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশ্বকবি বলেছিলেন -
হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!
মানুষের অধিকারে
বঞ্চিত করেছ যারে,
সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।
কবি নজরুল লিখেছিলেন-
মুছাফির মোছ রে আঁখিজল
ফিরে চল আপনারে নিয়া
আপনি ফুটেছিল ফুল
গিয়াছে আপনি ঝরিয়া ।
এ লেখার সময় আমার মনে হচ্ছে –এ দেশ সব সময় দুর্ভাগা নয় , শুধু অপমানও করে না , মুছাফিরকে সর্বদা আঁখিজল মুছতে হয়না , ফুল ঝরে পড়লেও ফুলের কদর শেষ হয় না। গুণী মানুষকে সন্মান করার মত আরেকজন গুণীর মাঝে-মধ্যে দেখাও মেলে।তবে যিনি গুণীকে সন্মান করেন তাকে সন্মান জানাতে আমরা কিন্তু বরাবরই কুণ্ঠিত।
নিঃসন্দেহে মোহাম্মাদ হোসেন স্যার একজন গুণী মানুষ । গুণী মানুষকে সম্মান করাও আরেকজন গুণীর কাজ। আর এই আরেকজন গুনীর কাজটিই করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান এমডি জনাব মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম স্যার। আমি আগেই বলেছি তিনি জাতির জনকের সুমহান স্মৃতি অগ্রণীর বুকে ধারন করার স্বারক নির্মাণ করে ইতোমধ্যেই কিংবদন্তীতূল্য উচ্চতায় নিজেকে তথা গোটা অগ্রণী ব্যাংককে নিয়ে গেছেন। তারই উদ্যেগে সুসজ্জিত হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক ভবনের ৫ম তলার এক্সিকিউটিভ ফ্লোর এবং এ ফ্লোরের নামকরণ করেছেন তিনি এল আর সরকার, এক্সিকিউটিভ ফ্লোর । এ মহান কাজগুলি যে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না বরং নিজস্ব প্রেরণায় গুণীজনকে প্রাপ্য সন্মান জানাতে তিনি যে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ -নির্মানাধীন ভবনের নাম “ অগ্রণী বাংক মোহাম্মদ হোসেন ভবন” রাখায় তা আবারও প্রমাণিত হলো।অগ্রজ গুণী ব্যাংকারদের একের পর এক এরুপ সুস্পষ্টভাবে সন্মানিত করার ঘটনা এর আগে ব্যাকিং জগতে কখনই প্রকটভাবে দেখা যায় নাই। এসব মহৎকাজের জন্য আমি স্যারকে সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাই । স্বপ্ন দেখি ,এ ভবন যুগযুগ ধরে মহাকবি মধুসূধনীয় কায়দায় প্রতিটি ব্যাংকারকে আহ্বান জানাবে -
দাঁড়াও ব্যাংকার ,
চাকুরী যদি করো ব্যাংকে-
দাঁড়াও এখানে , তিষ্ঠ ক্ষণকাল,
এ ভবন স্থলে।
এ ভবন মহা স্মৃতি বিজড়িত-
এম ডি পদবীধারী ব্যাংকার
মোহম্মাদ হোসেন এর সনে।
জানি ,সত্যিকার গুণীজনেরা কদরের আশায় বসে থাকেনা।আমাদের দেশে গুণের কদর না থাকা সত্ত্বেও হাজার হাজার গুণী জন্মগ্রহণ করেছেন , করছেন , করবেন। তবুও সাধ্যমতো গুণী ব্যক্তিদের সম্মান, শ্রদ্ধা, সংবর্ধনা জানাতে হবে। একটি দেশের জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে সমাজের গুণী ব্যক্তিদের সম্মান করতেই হবে।
যিনি গুনীকে সন্মান জানান তাকেও সন্মান জানাতে হবে। কিন্তু এর নজির আমি কিন্তু বাংলা সাহিত্যে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় খুঁজে পাই নাই। যিনি গুনীর কদর করতে জানেন তার ব্যাপারে প্রবাদ বাক্য সম বাক্য,কবিতা ,গান সচরাচর দেখা যায় না। ”তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী, অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি।”- কবিগুরু এখানে যে গীতিকার গানটি লিখেন আর সুরকার সুর দেন তাদের কিন্তু আড়ালেই রেখেছিলেন।
চাঁদকে সবাই ভালবাসি আমরা। কিন্তু চাঁদতো অন্ধকারেই লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যেত যদি সূর্য না তাকে আলোকিত করতো। কিনতু সূর্য্যের প্রশংসা আমরা তেমন করিনা। ভুলে যাই , চাঁদের সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য সূর্য্যের অবদানই বেশি।
এতদিন বিস্মৃতির আড়ালে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা লুৎফর রহমান সরকার এবং মোহাম্মদ হোসেন স্যারদেরকে রবিসম কিরণ বিকরণের মাধ্যমে আলোকিত করে যিনি সবার সামনে মেলে ধরেছেন ভবিষ্যৎ-এ কোন না কোন গুণী ব্যাংকার তাঁকেও এভাবে সন্মানিত করতে এগিয়ে আসবেন -এ প্রত্যাশা আমরা এখন করতেই পারি।(ক্রমশঃ)
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০৪:১৯ ৫২৪ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম