বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডলারের বিপরীতে রুপির অব্যাহত দরপতন সুখবর হয়ে এসেছে ভারত ভ্রমণে আগ্রহী বাংলাদেশিদের জনঅবশ্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিচারে মুদ্রা বাজারের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের পক্ষে যাবে না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।এক মাস আগেও যেখানে প্রতি ডলারের বিনিময়ে ৫৪ রুপি পাওয়া যেত, এখন সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৬০ রুপির মতো। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী কয়েক দিনে রুপির দর আরো কমতে পারে।অবশ্য ভারতের অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম তার দেশের ব্যবসায়ীদের অভয় দিয়ে বলেছেন, রুপির দরপতনে এখনো শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। শিগগিরই অবস্থা বদলাতে শুরু করবে। তাছাড়া এতে ভারতীয় রপ্তানিপণ্য কিছুটা সুবিধাই পাবে।
তবে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা বা ভ্রমণের জন্য যারাই এখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে, রুপির দরপতন থেকে সুবিধাই পাচ্ছেন তারা। দেশ থেকে তারা সঙ্গে করে যে ডলার নিয়ে গেছেন, তা ভাঙিয়ে এক মাস আগের তুলনায় বেশি রুপি পাওয়া যাচ্ছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়ায় বিষয়টি। এক বছর আগেও যেখানে প্রতি ডলার কিনতে ৮৪ টাকা লাগত, এখন সেখানে ৭৭-৭৮ টাকায় তা পাওয়া যাচ্ছে।
রেটিনা থেরাপি নিতে সম্প্রতি দ্বিতীয় দফা কলকাতায় এসেছেন বাংলাদেশি মাসুদা হক। আট মাস আগে তিনি যখন প্রথম দফা এসেছিলেন, সেই তুলনায় তার এবারের খরচ বেশ খানিকটা কমে এসেছে ডলার-রুপি-টাকার এই খেলায়।
অর্থাৎ, এবার দেশ থেকে রওনা হওয়ার সময় ডলার কিনতে তার আগের তুলনায় কম টাকা খরচ হয়েছে। আর কলকাতা পৌঁছে সেই ডলার ভাঙিয়ে রুপি পেয়েছেন আগের চেয়ে বেশি।
“দুই দিকেই লাভ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য দারুণ স্বস্তির বিষয়। টাকা ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী আর রুপি দুর্বল হওয়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে”, বলেন ৪৫ বছর বয়সী মাসুদা।
একই সুবিধা পাচ্ছেন হাবিব তানভীরের মতো শিক্ষার্থী ও মোহাম্মদ সামশুলের মতো ব্যবসায়ীরা।
সামশুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন আমি একই টাকায় আরো বেশি মালের অর্ডার দিতে পারছি। এরকম চললে ভালই হতো।”
রুপি-টাকার বিনিময় হার পর্যটকদের জন্য সুখবর হয়ে এলেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়।
২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩.৮ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশের মাত্র ০.৬ বিলিয়ন ডলারের মতো।
ভারত গত সেপ্টেম্বরে বেশ কিছু বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি খুব একটা। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকা মূলত ফল, মাছ আর তৈরি পোশাকের মধ্যেই আটকে আছে।
অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করছে তুলা, সেরিয়াল, বয়লার ও যন্ত্রপাতি।
রুপির সাম্প্রতিক দরপতনের ফলে ভারতীয় রপ্তানি পণ্য বাংলাদেশের বাজারে আরো বেশি সুবিধা পাবে, যা অবশ্যম্ভাবীভাবে বাণিজ্য ভারসাম্য আরো বাড়াবে। একই সঙ্গে টাকা ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়ে ওঠায় বাংলাদেশি পণ্যের জন্য ভারতীয় বাজারে ঢোকা আরো একটু কঠিন হয়ে যাবে।
১৯৮৬ সালে প্রতি রুপির বিনিময়ে আড়াই টাকা পাওয়া যেত। ১৯৯৯ সালে এই ব্যবধান কমে আসে এবং রুপির মান দাঁড়ায় ১ টাকা ১৪ পয়সার সমান।
গত এক দশকের উত্থাপন পতনের পরও বর্তমানে প্রতি রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার মান ১টাকা ২০ পয়সা বা ৩০ পয়সার মধ্যে রয়েছে।
রুপির মান আরো পড়ে গেলে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ আরো বাড়বে। কিন্তু বাণিজ্যে সেই সুবিধা বাংলাদেশি পণ্য পাবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৭:২৫ ৪১৩ বার পঠিত