“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ -জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ -জালাল উদদীন মাহমুদ
শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৬৫ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -২৪ -অপূর্ব ভোজন -৫।

স্যার বড় ছেলেকে বললেন একটা খালি প্লেট দেন তো। এতো খাবার তো খেতে পারবো না। আমরা খাবার গুলি তুলে রাখবো। আমার আর রফিকের ব্যবস্থাপনায় স্যার বোধ হয় সন্তষ্ট হতে পারছিলেন না। তাই এবার ব্যবস্থাপনার দ্বায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিতে চাইলেন। স্যারকে কেমনে বোঝাবো যতই ভাল বোলিং করা হোক –ব্যাটসম্যানতো এখানে শক্ত। আমি বিনয়ের সাথে স্যারের নির্দেশনার খুঁত ধরে বললাম- স্যার মনে হয় একটা প্লেটে হবে না ঐ সামনের ফাঁকা বড় গামলা দুটাতে রাখতে হবে। কিন্তু চার পাশ থেকে সবাই আবার অবিরামভাবে সাহস দেয়া শুরু করলো । বড় ছেলে নিশ্চিত ছিল যে সাহস করে খাবার শুরু করলেই খানা শেষ করতে কোন সমস্যাই হবে না। তার এ কথা পাশে থেকে সবাই সমর্থন করতে লাগলো । বেশ কিছুক্ষণ ধরেই আমাদের সামনে দু একজন করে দর্শকের আগমণ লক্ষ্য করেছিলাম। জমায়েতে নবাগত একজন বৃদ্ধ লোক আমাদের দিকে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে দৃষ্টিপাত করে জানালো তিনি নাকি বয়সকালে লোহা খেয়ে লোহা হজম করেছেন। জনমতের তোয়াক্কা না করে আমি নিজে উঠে গিয়ে ফাঁকা বড় গামলা দুটো আমাদের সামনে নিয়ে আসলাম । তিন জনই বাড়তি খাবার ওখানে রাখলাম। এমন সময় লাজুক লাজুক চেহারা নিয়ে একজন এসে বেশ বড় গলায় বললো- আস-সালামো-আলাইকুম। স্যার তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন -খাবার সময় সালাম দিতে নাই। মুরুব্বী জানালো ইনি তার একমাত্র জামাই। জামাই এসেই বিন্দু মাত্র দ্বিধা না করে মাছ মাংস যা যেখানে পেল সবই আমাদের প্লেটে তুলে দেয়া শুরু করলো। আমাদের ততক্ষণে এসব গা-সওয়া হয়ে গেছে। আমরা সব খাবার আবার গামলাতে তুলে রাখলাম। এমন সময় বড় ছেলে সিদল ভর্ত্তা কুনটি (কোথায়) ?  সিদল ভর্ত্তা কুনটি ? বলে সে দ্রুত তা নিয়ে আসলো। স্যার আমার মুখের দিকে তাকালেন। আমি বললাম স্যার এটা এ এলাকার স্পেশাল। কালো কচু, যেকোনো ছোট মাছের শুঁটকি, রসুন ও আদা দিয়ে এটা বানান হয়। এটা একটু টেস্ট করে দেখতে পারেন। স্যার টেস্ট করলেন, আমরাও একটু একটু করে খেলাম ,মনে হলো সবাই মজাও পেয়েছেন। স্যার বললেন - সিদল নামটিও তিনি কখনও শোনেন নাই। আমি জানালাম অন্যান্য এলাকার মানুষ না জানলেও উত্তরবঙ্গের মানুষের নিকট সিদল খুব পরিচিত একটি পছন্দের খাবার। উত্তরবঙ্গের ছেলে, বুড়ো পুরুষ মহিলা সবার নিকট সিদল এর প্রচুর চাহিদা আছে। সিদল সাধারণতঃ শোল মাছ ও টাকি মাছের সাথে রেঁধে খেতে হয়। কিন্তু এখানে ভর্তা আকারে দিয়েছে।

স্যার বললেন এটি কিভাবে বানায় ? বুঝলাম স্যার পুরা প্রস্তুত প্রণালী জানতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি তো জানি না। আমি না জানলে কি হবে রফিক আছে না ? রফিক বললো পরে সে একটা কাগজে লিখে তা স্যারকে দিবে। যাক- স্যার এ খাবারে মজা পেয়েছেন – এতে সবাই খুশী। বালতিতে আমাদের হাত ধুতে দেয়া হলো। এখানে আসার আগে রফিক বলেছিল এ এলাকায় দাওয়াত খেতে গেলে জোরাজুরি করা ছাড়া ফিরে আসা যাবেনা। রফিকের কথা ভুল প্রমাণিত হলো । শেষ পর্যন্ত মহা আয়োজনের অম্ল-মধুর মহাভোজ পর্বের মধুর সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। আমি তো বটেই স্যার ও রফিককেও খুশী খুশী মনে হচ্ছিল। আমাদের কথা না হয় বাদই দিলাম বেচারা স্যারের উপর অনেক ধকল গেল।

কিন্তু আমাদের খুশী নিমিষেই কর্পূরের মত উড়ে শূণ্যে মিলিয়ে গেল। প্লেট গুলি ধুয়ে আবার ভাত দেয়া হলো। বিশাল এক কাঁসার বাটিতে দুধ নিয়ে হাজির বড় ছাওয়াল। এবার মুরব্বী উঠলেন। সবার পাতে দুধ তুলে দিতে দিতে বললেন আপনাদের দোয়া আর আশীর্বাদে আমার তিনডা দুধের গাই। এ দুধের সাথে মিডা লাগেনা। খাইয়াই দ্যাখেন। বাড়ীর গরুর খাঁটি দুধ। খাঁটি দুধের কথা শুনে স্যারের বোধ হয় একটু লোভ হলো –বাটিতে করে একটু দুধ দিতে বললেন। বড় কাঁসার বাটি ভরে দুধ দেয়া হলো। স্যার কয়েক চুমুক পান করলেন। আমরাও করলাম। পাতের ভাত পাতেই থাকলো। রফিক বললো খুব ঘন করে জ্বাল দেয়া তাই মিডা মানে চিনি-গুড় লাগেনা। তবুও রফিক সহ সবার বাটিতে জামাই একটু করে মিছরি দিলেন। ইনফর্মারের ভূমিকায় অবতীর্ণ রফিক স্যারকে জানালো এ এলাকায় দৈ ও দুধ ভাতের সাথে খাওয়া হয়। রফিকের কথাও মনে হয় স্যারের গা-সওয়া হয়ে গেছে। কিছু বললেন না। রফিক কিন্তু প্রথা ভাঙার অপরাধে নিজের অজান্তেই স্যারকে পরোক্ষভাবে দোষী করলেন । আমিও রফিকের কথা হজম করে গেলাম। কারন তখন রফিকের কথা হজমের চেয়ে পেটের খাবার হজমের চিন্তা আমার মাথায়।
মাথার চিন্তা মাথাতেই থাকলো । সামনে হাজির দৈ-এর বিশাল ভান্ড । স্যার বোধ হয় ভাবলেন - বগুড়ার দৈ, না খেলে কি হয় ? কিন্তু পেটে তো অনেকক্ষণ থেকেই আর জায়গা নেই। এবার আমি ও স্যার যৌথ প্রচেষ্টায় রফিককে দিয়ে দৈ-এর ভান্ড টা অন্যত্র সরে রাখার ব্যবস্থা করলাম। শত অনুরোধ গায়ে মাখলাম না। রফিক অবশ্য ভান্ড টা অন্যত্র সরে রাখার আগে তাদের বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে একটা বাটিতে কিছু দৈ নিয়ে গিলে ফেললো।
এ সময় আমার স্থির বিশ্বাস হলো কোনও বাঙালী কোনও আমলে অনুরোধে ঢেঁকি গিলে থাকলেও থাকতে পারে।

দৈ-এর ভান্ডটা দুরে সরে রেখে এসে রফিক আমার দিকে মুখ করে নীচু গলায় বলে উঠল –সবই খাওয়ালো কিন্তু বগুড়ার বড় লাল আলু ভাজি আর আঠাওয়ালা হাগড়াই আলুর ভর্তা তো খাওয়ালো না। খেলে কিন্তু স্যার খুব মজা পেতেন । ভাগ্যিস আমি ছাড়া রফিকের এ কথা কেউ শুনতে পায় নি। আমি রফিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে তাকে চুপ থাকতে বললাম। রফিক চুপ মেরে গেল । কিন্তু সেটা কয়েক দন্ডের জন্য মাত্র। এবার অনুচ্চ স্বরে বললো-”আলুর ডাল দিয়ে ডিম” তো খেতে দিলনা ? স্যার শুনে ফেলেছেন দেখে আমি বললাম স্যার সিদলের মত ”আলুর ডাল দিয়ে ডিম ” উত্তরবঙ্গের একটা স্পেশাল খাবার। রফিক অনুচ্চ স্বরে বললেও স্যার চেঁচিয়ে বললেন স্পেশাল না স্পেশালের বাবা হোক আর কিছু খাওয়া যাবে না। বড় একটা গামলাতে নানা ধরনের পিঠা নিয়ে জামাই দাঁড়িয়ে ছিল , স্যার বোধ হয় সেটা লক্ষ্য করেছেন । হঠাৎ চিৎকার করায় সে হতচকিত হয়ে পড়লো। আমি কিন্তু বুঝলাম পুঞ্জিভুত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এটি। তবে স্যার মানে বসের এ চিৎকারে মনে হয় রফিক কিছুটা সম্বিৎ ফিরে পেল। সেও জোরে জোরে চিৎকার করে ধমকের সুরে বাড়ীর সবাইকে তাড়াতাড়ি খাবার পর্ব শেষ করে দিতে বললো , পিঠা হাতে দাঁড়ানো জামাইকে ধাক্কার মত করে দুরে সরিয়ে দিল। মুরুব্বী , বড় ছেলে , মেঝ ছেলে , ছোট ছেলে , জামাই , সমবেত দর্শক সবার মধ্যে এ সময় একটা চাঞ্চল্য দেখলাম। তারা তাড়াতাড়ি সামনের খাবার গুলি সরিয়ে ফেললো। পিঠার গামলা সহ জামাইও দুরে সরে গেল। আমি ভাবলাম আহা, এ চিৎকার যদি আরো আগে করা হতো।

এবার ছোট ছেলেকে নকশা করা পিতলের রেকাবী ভর্তি পান –সুপারী –জর্দা আনতে দেখলাম। এ এলাকায় তখন তেমন চায়ের প্রচলন ছিলনা। নারিকেলের পাতার খিলের মত কি যেন দিয়ে পানগুলি ত্রিভুজ আকৃতির করে গেঁথে রাখা হয়েছে। রফিক লোভাতুর দৃষ্টিতে সে দিকে একবার তাকালো ,বিশেষ করে জর্দার কৌটার দিকে। কিন্তু স্যারের গম্ভীর মুখ পানে চেয়ে তা নিতে গিয়েও নিল না। কি যেন বলতে গিয়ে আমতা আমতা করে তোতলাতে লাগলো। এই প্রথম রফিক পেটের কথা পেটেতেই রাখলো ,মুখ দিয়ে বের করলো না।

ততক্ষণে বেলা অনেকদুর গড়িয়ে গেছে। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ২২:২১:২৫   ৬৯৫ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিনোদন’র আরও খবর


১৬ ব্যান্ডের সবচেয়ে বড় কনসার্ট আজ আর্মি স্টেডিয়ামে
এবার হিন্দি সিনেমার নায়িকা বাংলাদেশের জয়া আহসান
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস, —”পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো”
শুভ জন্মদিন সুরের পাখী রুনা লায়লা
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
রক্তাক্ত অমিতাভ বচ্চন হাসপাতালে
চঞ্চল,মেহজাবীন, তিশা, ফারিণ,পলাশ, শাহনাজ খুশি -সবাই গেলেন আমেরিকায়
দুই না তিন পুত্র সন্তানের বাবা শাকিব খান! সূত্রঃ জনকন্ঠ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
বুবলীর সন্তানের বাবা শাকিব খান, বয়স আড়াই বছর

আর্কাইভ