“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ জালাল উদদীন মাহমুদ
বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৬৪ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -২৩ -অপূর্ব ভোজন -৪।

মেজ ছাওয়াল আসার সাথে সাথে গামলাকে গামলা মাংশ আসতে থাকলো। একটা প্লেটে দেখলাম হাঁস-মুরগীর ডজন দুয়েক ছিলা সিদ্ধ ডিম , হলুদ ও তেলে ভাজা। শতবার , হাজার বার , কোটি বার নিষেধ সত্ত্বেও সবার পাতে আবার ভাত দেয়া হলো। অনুরোধ –উপরোধ-নিষেধ –বারন কোন কিছুই কাজে আসছিল না। মেজ ছাওয়াল মাংশ পাতে তুলে দেবার জন্য থালার চেয়েও মনে হয় বড় ,এমন বিশাল এক পিতলের চামচ নিয়ে সামনে দন্ডায়মান । গ্রামীণ মজলিসে খাবার সময় এরকম বড় পিতলের চামচ বা ডিব্বা আমি দেখেছি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে আমি মেজ ছাওয়ালের সাথে আপোষ করাই শ্রেয় মনে করলাম। বললাম, আগেই দিয়েন না, কে কোন মাংস খায় তা আগে শুনে নেন। কোন গামলায় কোন মাংস আছে তা আগে বলেন। মেঝ ছাওয়াল একে একে দেখালো- এখানে কবুতর, এখানে মুরগী, এখান হাঁস এখানে খাসী, এখানে গরু। স্যার নেগিটিভ কথা পজেটিভ করে বললেন -ভেড়া আর মহিষ বাদ রাখলেন কেন, এগুলোও আনলে পারতেন। রফিক নতুন কিছু আবিস্কারের ভঙ্গিতে হঠাৎ বলে বসলো -স্যার এদিকে ঘুঘু পাখির মাংস পাওয়া যায়- খেতে খুব স্বাদ। স্যার অনেক আগে থেকেই রফিকের উপর চরম বিরক্ত হয়ে আছেন। তিনি পানি খাচ্ছিলেন । রফিকের এ কথাতে তিনি সশব্দে পানির গ্লাসটা রেখে দিয়ে বললেন এই মিঞা, এখন তারা ঘুঘু পাবে কোথায়? রফিক দমে যাওয়ার পাত্র নয়। কে বিরক্ত হলো, কে কি ভাবলো- তাতে তার কোনও দিনেই কিছু যেতে আসতো না। মুখে যা আসতো নির্দ্বিধায় তাই বলে বসতো। উপযুক্ত তথ্য যে তার হাতে আছে এটা প্রমাণের জন্য ভাত মুখে নিয়েই এক হাত উপরে তুলে সে ফুলা গালে বলে উঠলো- স্যার এ এলাকায় একজনের বাড়ীতে কোনও খাবার থাকলে অন্য বাড়ীতে গেষ্ট আসলে- সবাই তাদের খাবার গেষ্টের জন্য দিয়ে দেয় স্যার। কোন বাড়ীতে জামাই –ঝি আসলে তারা দুধ -পিঠা বানাতে চাইলে পাড়া পড়শীরা মাগনা দুধ দিয়ে যায়। রফিকের কথার হাতে হাতে প্রমানও মিললো। মিনিট দশেকের মধ্যেই এক বাটি রান্না করা ঘুঘুর মাংস হাজির। জানা গেল পাশের বাড়ী থেকে আনা হয়েছে। তখন মানুষ পাখি মারার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এখনকার মত সচেতন ছিল না। ঘুঘুর মাংশের দিকে ইংগিত করে স্যার শ্লেষাত্মক  কন্ঠে রফিককে শুধু বললেন- আপনিই বেশি করে খান।

রফিক এবার বিনয়ের ভান করে বিশেষ এক আঞ্চলিক ঢংয়ে বলে বসলো-জালাল সাহেবের বাসায় কি খান না খান , এখানে এই সুযোগে একটু ভাল করে খেয়ে নেন স্যার । সবার সামনে আমাকে লজ্জা দিয়ে কথা বলাতে স্যারের মত আমারও রফিকের উপর বিরক্তির আর সীমা রেখা থাকলো না। এ কথার কোন জবাবও অবশ্য আমি দিতে পারলাম না।

মাংশের মধ্যে স্যার শুধু মুরগীর একটা ছোট টুকরা নিলেন, আমিও তাই, রফিক তার সাথে খাসীর সিনার এক পিছ নিল। আমি খাবার আসন থেকে নেমে হাত জোড় করে মুরুব্বীসহ মেজ ছেলেকে অনুরোধ করলাম –কাউকে যেন জোর করে আর কিছু দেয়া না হয়। মনে হলো, আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছি। আমার কড়া ডোজের অনুরোধের কারনে মেঝ ছাওয়াল আগ বাড়িয়ে কারো পাতে আর কোন মাংশ তুলে দিতে উৎসাহ বোধ করলো না। ভাবলাম রফিককে বাদ দিয়ে শুরু থেকে আমি যদি কথা বলতাম তাহলে খাবার নিয়ে এত বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতো না। কিন্তু আমি সে মূহুর্তে নিজেকে যে অতিমূল্যায়ন করছিলাম তা টের পেতে বেশী সময় অবশ্য লাগলো না। দৃশ্যপটে বাড়ীর বড় ছাওয়াল হাজির। কথা নেই বার্তা নেই সে পাইকারী ভাবে ঘুঘু পাখির মাংশ সহ সর্ব প্রকার মাংস সবার পাতে দিয়ে দিল। আমরা শুধু অবাক- বিস্ময়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। লম্বা দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে মুরব্বী অমায়িক ভাবে কিন্তু গর্বের সাথে বললো- আমার বড় ছাওয়াল। স্যার এবার আমার বাম হাতে চিমটি কেটে বললেন- এসব কি? আমাদের কি রাক্ষস ভাবছে নাকি ? আজ মনে হচ্ছে স্বয়ং রাক্ষস বংশের কেউ হলেও সেদিন এ ভোজ সভায় ফেল মারতো।

রফিক বিষয়টি খোলাসা করার জন্য বললো- মহিলা ছাড়া একে একে বাড়ীর সবাই আসবে স্যার। সবাই খাবার তুলে দিবে। শুধু তাই না স্যার খাওয়া শেষ করে না গেলে জুতা –স্যান্ডেল লুকায়ে রাখবে, যেতে দিবে না। আমার অবশ্য রফিকের এ কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো। স্যারের মুখের দিকে তাকালাম –সেখানে হতাশা না আতংক বিরাজমান তা সঠিক বোঝা গেল না।

তবে এটা বোঝা গেল যে একে একে বাড়ীর সব ছেলেই খাবার দিতে আসবে। আতংকিত হয়ে আমি বাড়ীর মুরুব্বীকে বললাম- চাচা আপনার কয় ছেলে ?

চাচা বললেন- সবই আল্লাহর ইচ্ছা বাবা। আপনাদের দোয়ায় আমার পাঁচ ছাওয়াল এক বেটি। দুই ছাওয়াল ক্ষ্যাতে গেছে। মেয়ের জামাই এখুনি হামার বাড়ীতে আসলো -ওযু করে এটি খানা দিতে আসবি ।

আমি মনে মনে জামাইকে সামলানোর উপায় খুঁজতে লাগলাম। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ২২:২৮:০৩   ৪৮১ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিনোদন’র আরও খবর


১৬ ব্যান্ডের সবচেয়ে বড় কনসার্ট আজ আর্মি স্টেডিয়ামে
এবার হিন্দি সিনেমার নায়িকা বাংলাদেশের জয়া আহসান
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস, —”পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো”
শুভ জন্মদিন সুরের পাখী রুনা লায়লা
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
রক্তাক্ত অমিতাভ বচ্চন হাসপাতালে
চঞ্চল,মেহজাবীন, তিশা, ফারিণ,পলাশ, শাহনাজ খুশি -সবাই গেলেন আমেরিকায়
দুই না তিন পুত্র সন্তানের বাবা শাকিব খান! সূত্রঃ জনকন্ঠ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
বুবলীর সন্তানের বাবা শাকিব খান, বয়স আড়াই বছর

আর্কাইভ