বঙ্গ-নিউজঃ ফুল মানেই অপার সৌন্দর্যের এক নাম। প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি হল ফুল। যেকোনো মানুষের মনকে প্রফুল্ল করতে ফুলের জুড়ি নেই। আর তাইতো ফুলের বাগানে প্রবেশ করতেই মন হয়ে উঠে উজ্জীবিত ও প্রফুল্ল। আর যদি বিশাল এলাকা নিয়ে দৃষ্টিজুড়ে শুধু বাহারি রঙের ফুল আর ফুল চোখে পড়ে তবে তো স্বর্গের অনুভূতি মর্তে পাওয়া হয়ে যায়। আর তেমনি দুটি স্বর্গীয় সৌন্দর্যের ফুলের বাগানের কথা জানাবো আজ। এই বাগানগুলো একেকটা ফুলের স্বর্গ রাজ্য। আসুন তাহলে শব্দের বাহনে চড়ে ঘুরে আসা যাক জাপানের কোয়াচি ফুজি গার্ডেন ও ফ্রান্সের মনেট গার্ডেন থেকে।
ভাবুন তো, বাহারি রঙ্গের বিশাল ফুলের টানেলের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছেন আপনি। ঠিক যেনো শিল্পীর রঙ্গিন ক্যানভাস আপনার চোখের সামনে। আর সেই ফুলের অপূর্ব সৌরভের ছড়াছড়ি চারদিকে। এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা আপনি পেতে পারেন কোয়াচি ফুজি গার্ডেনে।
জাপানের ফুকুওকায় অবস্থিত কোয়াচি ফিজি গার্ডেন জাপানের অপরূপ সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই বাগানের মূল আকর্ষণ হল এই ফুলে আবৃত টানেল। এখানে মূলত দুটি টানেল রয়েছে যা উইস্টেরিয়া ফুলে আবৃত। এই দুটি টানেলের একটি ৮০ মিটার ও অপরটি ২২০ মিটার লম্বা। প্রায় বাইশ ধরণের উইস্টেরিয়া ফুল দিয়ে টানেলগুলোকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যার ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে ফুলের রঙ্গিন ভুবনে চলে এসেছেন। টানেলের ভিতরে জায়গায় জায়গায় রাখা আছে বসার বেঞ্চ। উইস্টেরিয়া ফুলের এই রঙিন রাজ্যের সৌন্দর্য চিত্রশিল্পীর আঁকা কোনো ছবির চেয়ে কম নয়। উস্টেরিয়া ফুলের বিচিত্র রঙ আর মোহনীয় সৌরভ এখানে এই স্বর্গীয় সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।
এই বাগানটি মশাও মিজোগুচি নামের একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে। ১৯৭৭ সালে প্রথম এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং তার পরপরই এটি দ্রুত জাপানের অন্যতম আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট হয়ে উঠে। হাজার হাজার পর্যটকদের পাদচারণায় মুখর থাকে এই অপরূপ সৌন্দর্যের বাগানটি।
কোয়াচি ফুজি গার্ডেন দেখতে যাবার মোক্ষম সময় হচ্ছে এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে এই বাগানের আসল সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। কারণ এ সময়টাতে উইস্টেরিয়া ফুলগুলো তাদের আসল রঙ্গিন সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। এছাড়া এ সময় আসলে আপনি উইস্টেরিয়া ফেস্টিভালও উপভোগ করতে পারবেন।
ফ্রান্সের মনেট গার্ডেন পৃথিবীর বিখ্যাত বাগানগুলোর একটি। চিত্র শিল্পী ক্লড মনেট তার শৈল্পিক মনের সকল রঙ দিয়ে গড়ে তুলেছেন এই বাগানটি। আর তাই এর সৌন্দর্যও অত্যন্ত নান্দনিক যা যে কাউকেই দারুণভাবে মোহিত করে।
পুরো বাগানটি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশ মনেট হাউজের পাশের খালি জায়গা নিয়ে তৈরি হওয়া ক্লস নরম্যান্ড স্থল উদ্ভিদের বাগান। আর অপর অংশটি জলজ বাগান বা ওয়াটার গার্ডেন যার চারপাশে জাপানি শিল্পকলার নানান সৃষ্টিশীল কারুকাজ রয়েছে।
প্রথম অংশের বাগানটি প্রায় এক হেক্টর জায়গায় নিয়ে বিস্তৃত। এখানে বিভিন্ন রঙ ও জাতের টিউলিপ, অরিয়েন্টাল পপি, আইরিশসহ আরো অনেক ফুলের অপূর্ব শোভা দেখতে পাবেন। আর জলজ বাগানের অংশে রয়েছে মনেটের বিখ্যাত একটি চিত্রকর্মের আদলে অপরূপ সৌন্দর্যের জাপানিজ ব্রিজের রেপ্লিকা। এই জলজ বাগানের মূল সৌন্দর্য হল ফুটে থাকা অপূর্ব সব শাপলা ফুল। এই সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
এই বাগানের পুকুরের চারপাশে চেরি, রডেন্ড্রনসহ আরো বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো আছে যা এই বাগানের শোভা আরো বেশি বৃদ্ধি করেছে। বাগানের ভিতরের মনেট হাউজটি আরেকটি দেখার মত জিনিস। এর ভিতরের চিত্রকর্ম, স্টুডিও ও জাপানিজ চিত্রকর্ম দেখে আসতে ভুলবেন না।
প্রতি বছর পাঁচ লক্ষের মতো পর্যটক এই বাগানের রূপ বৈচিত্র্য দেখার জন্য এখানে হাজির হন। এই বাগানটি বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৪:৪০ ৩৩৫১ বার পঠিত