বঙ্গ-নিউজ: জোট গঠন হওয়ার শুরুতে জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গটি বেশ আলোচনা-সমলোচনা মধ্যেই ছিল। নির্বাচনের পরে এসে সেই প্রসঙ্গ আবারও প্রকট আকার ধারণ করছে। এ ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোটকে অটুট রেখে বিএনপি অন্য জোটসঙ্গী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সম্প্রসারণের চিন্তা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ আহ্বান করেন তাতে সাড়া দেওয়ার আগে ‘সংলাপ ডাকার’ মূল রহস্য খুঁজে বের করতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জোট গঠনের আগে থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতকে না রাখতে ঐক্যফ্রন্টের বিএনপি ছাড়া অন্য শরিকদের চাওয়াকে তেমন পাত্তা দিচ্ছে না বিএনপি। জামায়াতকে ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপি দলটির মধ্যে কোনো আলোচনাও নেই।
এদিকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে বলছেন, জামায়াতের কোনো নিবন্ধন নেই। তার পরও যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে তাদের এড়িয়ে চলবে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী যে দলগুলো এখনো ২০-দলীয় জোটের বাইরে রয়েছে বিশেষ করে আট বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক বাম জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক করতে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
তারা আরও জানান, ঐক্যফ্রন্টের উদ্দেশ্যেই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা। ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে এ দেশে স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে কেবল সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলেই আইনের সুশাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে বলে মনে করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় জালিয়াতির যে নির্বাচন হয়েছে তা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন তারা। এ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপিও দিয়েছে বলে জানান। চলতি মাসে তারা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চলমান বাস্তবতায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘ভোট ডাকাতি, জবরদখল ও অনিয়মের নানা চিত্র’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আট বাম দলের জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোট ‘চুরি বা জালিয়াতি’ নয়, ‘প্রকাশ্য ভোট ডাকাতি’ করতে ৩০ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীনরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘সহায়তা’ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সবাইকে চাই। দেশে একটা সত্যিকারের জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে চাই।
এমন বাস্তবতার মধ্যে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলবেন কিনা এমন প্রশ্নে শনিবার (১২ জানুয়ারি) জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট্রের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এটি বলা যেতে পারে।’ ড. কামাল হোসেনের এ বক্তব্যের মধ্যে নতুন করে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ইস্যু চাপা পড়ে জামায়াত ইস্যু সামনে চলে এসেছে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘জামায়াত ইস্যুটা নিয়ে উনাকে এমনভাবে বিরক্ত করা হয়েছে…। জামায়াতকে নেওয়ার বিষয়ে ড. কামাল হোসেন পরামর্শ দিতে পারেন? যিনি সংবিধান রচনা করেছেন; সেই ব্যক্তিকে পদে পদে এভাবে নাজেহাল করা, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের কারণে তার গাড়িতে হামলা পর্যন্ত হয়েছে। আমাদের কি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি মনে হয়? দেখতে হবে যুদ্ধাপরাধী কোনো ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে আছে কিনা। রাজাকার তো নৌকায় উঠেছে। আমাদের সঙ্গে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জামায়াত প্রসঙ্গে বলেন, জামায়াত ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল, তারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করতে চায়। বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে রাজনীতি করে। তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শ ভিন্ন। তবে আমরা যদি জামায়াতকে ছেড়ে দিই, তা হলে আওয়ামী লীগ যে তাদের টেনে নেবে না সেই নিশ্চিয়তা কে দিবে? দিতে পারবে না। আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জেরই জামায়াতের একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের একটা ভোটব্যাংক আছে এটাই মূল কারণ। বিএনপি-জামায়াত বিচ্ছিন্নের ইস্যুটা সামনে আনার অর্থ হচ্ছে বিএনপি জোটের ভোটব্যাংক নষ্ট করা।
এদিকে জামায়াতকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংলাপের বার্তায় বিএনপিতে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। বিএনপির একাধিক নেতাকে এমনও প্রশ্ন করতে শোনা যায় ড. কামাল কি সরকারের কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন? বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদার তিন নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কারণেই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলায় কারাবন্দি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে বলা হলো আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ও সূক্ষ্ম কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চুপ। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কোনো কর্মসূচিও নেই। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদেরও কোনো চিন্তা নেই। তারাও নিজ নিজ পদ-পদবি নিয়ে বেশ ভালোই আছেন। এ অবস্থায় আবার সংলাপে গেলে সরকারকে বৈধতাই দেওয়া হবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
তবে সংলাপের বিষয়ে এখনো তেমন কোনো ধারণা করতে পারছেন না ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এ বিষয়ে মোস্তফা মহসীন মন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের আগে দুদফা সংলাপে অংশ নিলেও আমাদের কোনো দাবি মানা হয়নি। এখন কী কারণে আবার সংলাপ তা বোঝা যাচ্ছে না। যাব কিনা তা পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪২:৩১ ৪৬৮ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম