বঙ্গ-নিউজ: সরকারি মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি, বাস্তবায়নের দাবি ও শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। সাভার ও আশুলিয়ায় বুধবার (৯ জানুয়ারি) ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বিক্ষোভে রাস্তায় নামে অন্তত ৭০ পোশাক কারখানার শ্রমিক।
বুধবার গাজীপুর, টঙ্গী, নাওজোড়, ভোগড়া বাইপাসসহ বেশ কয়েকটি স্থানে শ্রমিকরা বিক্ষোভ, ভাঙচুর, মহাসড়ক অবরোধ করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর জেলা প্রশাসন বিজিবি মোতায়েন করেছে। কারখানাগুলোর সামনে পুলিশের জলকামানসহ সাঁজোয়া যান রয়েছে।
এছাড়া আশুলিয়ার প্রায় ২৫টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ হেমায়েতপুরে অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ ও ডার্ড লি. নামের দুটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষুব্ধ একাধিক শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নতুন মজুরী কাঠামোতে হেলপারদের বেতন তিন হাজার টাকা বাড়লেও অপারেটরদের বেড়েছে মাত্র এক হাজার টাকা। কারখানার ভিতরে মোবাইল নিতে না দেওয়ায় আমরা অসুস্থ হলে কিংবা কেউ মারা গেলেও আমাদের পরিবার তাৎক্ষনিকভাবে সে খবরটিও পাবে না।
শিল্প পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ঘোষিত মজুরী কাঠামোতে বৈষম্য করা হয়েছে, এমন অভিযোগে গত কয়েকদিন ধরেই তা সংশোধনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
বাসন থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোক্তার হোসেন জানান, সকালে সিটি করপোরেশনের নাওজোড়, কড্ডা, ভোগড়া বাইপাস এলাকার বিভিন্ন করাখানার শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে আসে। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের বাইরে বের করে আনার চেষ্টা করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকরা কয়েকটি কারখানা ভবনের কাচ ভাঙচুর করে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক সানা শামিনুর রহমান জানান, কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে মজুরী কাঠামোর বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এসময় তিনি সরকারের উপর আস্থা রেখে শ্রমিকদেরকে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ এমদাদ হোসেন ও স্থানীয়রা জানায়, সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে সিটি করপোরেশনের গাজীপুর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করে। শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকটি কারখানা ভবনের গ্লাস ভাঙচুর করে। পরে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ গিয়ে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে আধা ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
পুলিশের পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক করিম জানান, মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে তারা মূল সড়কে অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। গত তিনদিন ধরে একই দাবিতে বিমানবন্দর, উত্তরা, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুরে সড়কে অবস্থান নেয় গার্মেন্টস কর্মীরা।
টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কামাল হোসেন জানান, টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকায় সকাল থেকে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে প্রায় ১৫টি কারখানার ভবনের কাঁচ ভাঙচুর করে। এছাড়া শ্রমিকরা কারখানার ২/৩টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি আরো জানান, দুপুরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই সব এলাকার অধিকাংশ কারখানা বুধবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
সাভার ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক গোলাম নবী বলেন, সকালে থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে আমরা তাদেরকে সরিয়ে দেই। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি জলকামান ও সাজোয়া যানের টহল অব্যাহত রয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গাজীপুরের টঙ্গী, গাজীপুর, হোতাপাড়া, কোনাবাড়ি ও মৌচাক এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বুধবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন শুরু করেছে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে ৫০ এর বেশি শ্রমিক আহত হয়েছে। এ সময় নয়জন পুলিশও আহত হয়েছে। পরে চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বেলা পৌনে চারটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাভারের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও আশুলিয়ার কয়েকটি জায়গায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে সাভার ও আশুলিয়ায় আজ বুধবার আবার রাস্তায় নামে পোশাক শ্রমিকেরা। সাভারের উলাইল, গেন্ডা, থানা রোড এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নেমে আসে শ্রমিকেরা। তখন কিছু এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ জলকামান ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়।
শিল্প পুলিশ-১ এর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আজ ৭০ টির মতো কারখানার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে। এসব কারখানায় আজ কোনো কাজ হয়নি। শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে নয়জন পুলিশ আহত হয়েছেন।’
আশুলিয়ার বাইপাইল, কাঠগড়া, পুকুরপাড়েও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বেলা সাড়ে তিনটায় এ বিক্ষোভ চলছিল। এখন সাভারে অবশ্য শ্রমিকেরা রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে।
বিক্ষোভের জেরে ডার্ড গ্রুপ ও স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এক সপ্তাহ ধরে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে রাজধানীর উত্তরা, সাভার ও আশুলিয়ার এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলছিল। গতকাল মঙ্গলবার মজুরি নিয়ে অসন্তোষ-বিক্ষোভের মধ্যে সুমন মিয়া নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বিক্ষোভরত শ্রমিকেরা গতকাল দাবি করেন, পুলিশের গুলিতে তিনি মারা গেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের ১২ সদস্যের একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়।
গতকাল রাজধানীর দৈনিক বাংলা এলাকার শ্রম ভবনে সরকার, মালিক ও শ্রমিকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি হয়। বৈঠকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা বলা হয়। তবে এর মধ্যে আজ আবার নতুন করে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৫:৫২ ৫১২ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম