বঙ্গ-নিউজঃ সরকার নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার জন্য কমিটি করে দিলেও টানা চতুর্থ দিনের মতো সড়কে নেমেছেন পোশাক শ্রমিকরা। বুধবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুরের কালশি, সাভার ও আশুলিয়ার রাস্তায় অবস্থান নেন পোশাক শ্রমিকেরা। পুলিশের সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় তাদের সংঘর্ষও হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) এক বৈঠকে মালিক পক্ষের পাঁচ জন, শ্রমিক পক্ষের পাঁচ জন এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এই কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন বঙ্গ-নিউজকে বলেন, ‘মজুরির অসঙ্গতিগুলো দূর করতে এক মাস সময় না নিয়ে যদি তিন দিন বা এক সপ্তাহ সময় নেওয়া হতো, তাহলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হতো। তবে মঙ্গলবারের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে— সেটিও মন্দ হয়নি।’ তিনি মনে করেন, ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে আসবে।
মঙ্গলবারের (৯ জানুয়ারি) বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া পোশাক শ্রমিকদের বেতন কাঠামোতে কোনও বৈষম্য বা অসঙ্গতি থেকে থাকলে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই তা সংশোধন করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে সংশোধিত গ্রেডিংয়েই বেতন পাবেন শ্রমিকরা। এই সিদ্ধান্তের পরও কেন আন্দোলন হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদ-উল ইসলাম খান বঙ্গ-নিউজকে বলেন, ‘মজুরির অসঙ্গতিগুলো দূর করতে এক মাস সময় নেওয়া ঠিক হয়নি। এটি তিন দিনেই সমাধান করা যেত। এখন পর্যন্ত ওই কমিটিতে শ্রমিকদের কারা থাকবেন, তা জানা গেলো না। মালিকদের কারা থাকবেন, জানা যাচ্ছে না। কমিটি এখনও কাজ শুরু করেনি। আবার মঙ্গলবারের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা হয়তো শ্রমিকদের অনেকেই জানেন না।’
এক সপ্তাহ ধরে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে রাজধানীর উত্তরা, সাভার ও আশুলিয়া এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলছে। মঙ্গলবার মজুরি নিয়ে অসন্তোষ-বিক্ষোভের মধ্যে সুমন মিয়া নামে এক শ্রমিক মারা যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের ১২ সদস্যের একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার শ্রম ভবনে সরকার, মালিক ও শ্রমিকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি হয়। এই কমিটি এক মাসের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামোর কোনও গ্রেডের মধ্যে অসঙ্গতি থাকলে তা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দেবে। বৈঠকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা বলা হয়। তবে এরইমধ্যে আজ বুধবার (৯ জানুয়ারি) আবারও নতুন করে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এফবিসিসিআই’র সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বঙ্গ-নিউজকে বলেন, ‘শ্রমিকদেরকে ভুল বুঝিয়ে একটি পক্ষ তাদেরকে আন্দোলনে রাখছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা বলেছি, মজুরির অসঙ্গতিগুলো এক মাসের মধ্যে ঠিক হবে। কাজেই এখন আন্দোলনে থাকার কোনও যৌক্তিকতা নেই।’
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বঙ্গ-নিউজকে বলেন, ‘মজুরির অসঙ্গতিগুলো সমাধান করা হবে— এটা আমরা বলেছি। তারপরও যারা আন্দোলনে থাকছে, তাদের অন্য কোনও এজেন্ডা আছে। তা না-হলে আজ কেন তারা অফিস ফেলে রেখে রাস্তায় থাকবে।’
জানতে চাইলে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বঙ্গ-নিউজকে বলেন, ‘শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়া উচিত। মজুরির অসঙ্গতিগুলো যেহেতু এক মাসের মধ্যে সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এখন আন্দোলনের কোনও যুক্তি নেই।’
এদিকে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতকরণ, অপারেটর ও হেলপারের মধ্যে বেতন বৈষম্য দূর করার দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা টানা চারদিন ধরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুরে আন্দোলন করছেন। উল্রেখ্য, বেতন কাঠামোতে বৈষম্য দূর করাসহ বিভিন্ন দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন পোশাক শ্রমিকরা।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বঙ্গ-নিউজকে বলেন, ‘মজুরির অসঙ্গতিগুলো এক মাসের মধ্যে ঠিক হবে। মঙ্গলবারের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হলেও অনেক শ্রমিক বিষয়টি এখনও জানেন না। এ কারণে প্রত্যেক ফ্যাক্টরিতে এই সিদ্ধান্ত নোটিশ আকারে ঝুলিয়ে দিলে শ্রমিকরা হয়তো আন্দোলন থেকে সরে আসবেন।’ তিনি মনে করেন, যাতে সব ফ্যাক্টরি দ্রুত এই নোটিশ জারি করে, সেজন্য মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৯:২৯ ৪১৯ বার পঠিত