বঙ্গ-নিউজঃ ভারতজুড়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধ্। ১৭টি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন ও কেন্দ্রীয় কর্মচারী ইউনিয়ন এই বন্ধের ডাক দিয়েছে। কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন এই বন্ধে সমর্থন জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে এবং ১২ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশজুড়ে এই বন্ধ্ চলছে। ১২ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা, মাসিক বেতন ন্যূনতম ১৮ হাজার রুপি, মাসিক ৬ হাজার রুপি সর্বজনীন পেনশন দেওয়াসহ বেসরকারি সংস্থাকে জাতীয়করণ বন্ধ করা। এই বন্ধ্ প্রতিহত করার জন্য কলকাতায় নামানো হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি পুলিশ। শহরের বিভিন্ন বাজার, অফিস চত্বর, বাস ডিপো, ফেরিঘাট, মেট্রো স্টেশন মিলিয়ে ৩০০ স্থানে রয়েছে পুলিশের দল।
এই বন্ধে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ট্রেন পরিষেবা। রাজ্যের সবখানে বন্ধ্ সমর্থকেরা অবরোধ করেছে ট্রেন। এ কারণে দূরপাল্লাসহ বহু লোকাল ট্রেন আটকে পড়েছে বিভিন্ন রেলস্টেশনে। রাজ্যজুড়ে চলছে সড়ক অবরোধ, বাস ভাঙচুর, পুলিশ-বন্ধ্ সমর্থনকারী এবং বাম-তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ। পুলিশ কয়েক শ বন্ধ্ সমর্থককে আটক করেছে। তাদের মধ্যে আছেন সিপিএমের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী, বাম শ্রমিক নেতা অনাদি সাহুসহ আরও অনেকে।
সকাল থেকেই বন্ধ্ সমর্থকেরা নেমে পড়ে সড়ক ও রেল অবরোধে। আর এই অবরোধের কারণে বিভিন্ন স্টেশনে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, রিষরা, বেলঘরিয়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, রামপুরহাট, জলপাইগুড়ি, উলবেড়িয়া, লক্ষ্মীকান্তপুর, সোদপুর, বরাসাত, মধ্যমগ্রাম, বনগাঁ, হাসনাবাদ, যাদবপুর, গড়িয়া, আগরপাড়া, টিটাগড়, মসলন্দপুর, মথুরাপুর, কল্যাণী, হাওড়া, ব্যান্ডেল, চন্দননগর, উত্তরপাড়া, উলবেড়িয়া, সমুদ্রগড়, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, দত্তপুকুর ইত্যাদি স্টেশনে বন্ধ্ সমর্থনকারীরা বন্ধের বড় বড় ব্যানার নিয়ে বসে পড়ে ট্রেনের সামনে। তারা কয়েকটি ট্রেনের ওভারহেড তারে কলাপাতা ছুড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ্ করেও দেয়। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। এ সময় পুলিশ বন্ধ্ সমর্থকদের তুলতে গেলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এ ছাড়াও বন্ধ্ সমর্থকেরা মিছিল করে সকাল থেকে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে। তারা কলকাতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি বাস ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ বন্ধ্ সমর্থনকারীদের তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এ সময় অবরোধকারীদের আটক করে। বাম দল সূত্রে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে কয়েক শ বন্ধ্ সমর্থনকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ শ্রীরামপুরে বন্ধ্ সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। বর্ধমানের জামুরিয়া, কলকাতার গড়িয়া, আসানসোল, বারাসাতসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি বাস ভাঙচুর হয়েছে। খড়গপুরে সড়ক অবরোধ করে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। যাদবপুরে বন্ধ্ সমর্থকেরা প্রধানমন্ত্রী মোদির কুশপুতুল দাহ করেছে। অন্যদিকে, বহু শিল্পাঞ্চলে মিশ্র প্রভাব দেখা দিয়েছে। তবে তারাতলা, হুগলি, চাপদানি, ভদ্রেশ্বর শিল্পাঞ্চলে বন্ধের ভালো সাড়া পড়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই বন্ধ্ প্রতিহত করার জন্য জনগণ এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পাল্টা শ্রমিক সংগঠন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, বন্ধে তৃণমূল বাধা দিলে পাল্টা জবাব দেবে বন্ধ্ আহ্বানকারীরা।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক নির্দেশ জারি করে বলেছে, এই বন্ধে সব সরকারি কর্মীকে উপস্থিত থাকতে হবে নিজ নিজ দপ্তরে। কেউ ছুটি নিতে পারবেন না। অনুপস্থিত থাকলে কেটে নেওয়া হবে তাঁদের বেতন ও ছুটি। পাশাপাশি পরিবহনমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছে, বন্ধে কারও গাড়ি বা বাস ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বন্ধের দিন কলকাতাকে সচল রাখতে বাড়ানো হবে বাস, ট্যাক্সি, ট্রাম, লঞ্চ বা ফেরির সংখ্যা। যদিও ইতিমধ্যে ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়ন এই বন্ধে সমর্থন জানানোর ঘোষণা দেওয়ায় গোটা দেশে ব্যাংকের এটিএম পরিষেবার ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
বন্ধ্ উদ্যোক্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কোনো বাধা মানবেন না। প্রয়োজনে তাঁরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। চলবে তাঁদের রেল ও রাস্তা অবরোধ, যানবাহন আটকোনার আন্দোলন। এ জন্য রয়েছে তাঁদের বিশেষ স্ট্রাইক টিম। দেশের সব কারখানা, ব্যাংক, বিমাসহ সব দপ্তরে ধর্মঘট সফল করতে রয়েছে পৃথক টিম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ধর্মঘট পালনের জন্য পৃথক ছাত্র-যুব ব্রিগেড রয়েছে। শুধু তা–ই নয়, সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে যে ৭ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মী ছুটি নিতে পারবেন না। এর অন্যথা হলে ওই কর্মীর ছুটি বাতিল হবে। কাটা যাবে বেতন।
বাংলাদেশ সময়: ০:৪৭:৩৯ ৪১৪ বার পঠিত