বঙ্গ-নিউজঃ নতুন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখের ওপর ভরসা করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের নিয়েই আগামী পাঁচ বছর সরকার পরিচালনা করতে চান তিনি। উদ্যমী এই নেতাদের নিয়ে বাংলাদেশকে বদলে দিতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তাই নতুন মন্ত্রিসভা সারা দেশে চমক সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে বাদ দিতে হয়েছে নানা ইস্যুতে বিতর্কিতদের। বাদের তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রবীণ এবং সফল মন্ত্রীও। তবে সবকিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বঙ্গ-নিউজকে বলেন, ‘নতুন মন্ত্রিসভা তারুণ্যনির্ভর, যা দেশবাসীর প্রত্যাশিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। সে কারণে তারুণ্যের ওপর তিনি ভরসা রেখেছেন। আমি মনে করি, তারুণ্যের এই মন্ত্রিসভা দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘নতুন মন্ত্রিসভার সামনে সব সময়ই চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে তারণ্যের উদ্ভাবনী সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে প্রবীণরাও আছেন মন্ত্রিসভায়। আগের মন্ত্রিসভার অনেকে বয়সের কারণেই হোক, আর নানা কারণেই হোক, সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিতেন। অথবা সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হতো। এবার তরুণরা ত্বরিত গতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে আশা করি।’ সূত্রমতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর উদ্যমী মন্ত্রিসভা গঠনের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন ও পুরনোদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু করার জন্য মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করেন। এ জন্য সরাসরি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা এবং যেসব তরুণ এ চেতনা বাস্তবায়নে রাজনীতির মাঠে পারঙ্গমতার প্রমাণ দিয়েছেন তাদের বেছে নেন তিনি। কারণ দেশ গড়ার যে সুযোগ এবার আওয়ামী লীগের সামনে এসেছে; ভবিষ্যতে তা না-ও আসতে পারে। সে কারণে চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে তিনি তরুণদের বেছে নিয়েছেন নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায়। গত দুবার শরিক দলের নেতাদের নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলেও তার নতুন মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী প্রথমবারের মতো সরকারের দায়িত্ব পালন করতে আসছেন।
প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সরকারে আসছেন এই প্রথমবার। তিনজন শেখ হাসিনার গত সরকারেও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আর একজন আগে সরকারে থাকলেও গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। শেখ হাসিনা তার এবারের সরকারে তিন মন্ত্রণালয়ে তিনজনকে উপমন্ত্রী করেছেন, তাদের সবাই নতুন মুখ। কয়েক দিন আগে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখবেন। এটা একেবারেই তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। মন্ত্রিসভার বিষয়ে এ জবাবটা আমি দিতে পারছি না। তবে বড় চমক থাকবে এটা নিশ্চিত। জানা গেছে, দেশের ৬৪টি জেলা থেকে পর্যায়ক্রমে দল ও মহাজোটের শরিক দলের নেতাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশে সমউন্নয়ন নিশ্চিত করতে দল এ রকম পরিকল্পনা করেছে। ফলে যেসব জেলা থেকে আপাতত মন্ত্রিসভায় কেউ নেই, সেসব জেলার দিকে সরকারের নীতিনির্ধারকদের নজর থাকবে। মন্ত্রিসভায় রাখা না গেলেও অনেকে পাবেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব। যারা যে মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, তাদের সেসব মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আলোচিত ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে যারা মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন না, আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন তারা। দল পরিচালনায় তাদের কার্যক্রম বিবেচনা করে পরবর্তীতে দলের শীর্ষ পদ দেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়। দলীয় সূত্রমতে, চলতি বছরই শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। তখনই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করার কথা এখনই ভাবছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সরকারের পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে এমন পরিকল্পনা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলের শীর্ষ পদে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। জনপ্রিয় ও একাধিকবার নির্বাচিত হলেও যেসব সংসদ সদস্যকে এবার মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে না, তাদের মধ্যে অনেককে তখন দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৯:৫৩ ৫৮১ বার পঠিত