৫৩ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -১২।
ডেমাজানি শাখায় প্রথমে আমি দ্বিতীয় কর্মকর্তা ছিলাম। সে সময় কেউ কৃষি ঋণের জন্য আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হলে আমার কাছে তদবীর নিয়ে আসতো । আমি যেন ম্যানেজার সাহেবের কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করি। অধিকাংশই আমার এলাকার কৃষক। আমার বাপ-দাদাদেরও তারা চিনতো। তো তদবীরে এলে আমি তাদের বলতাম ,ম্যানেজার সাহেব লোন না দিলে আমি কি করবো? আমি ম্যানেজার হলে না হয় দিয়ে দিতাম। কোন কর্মচারী ছুটি চেয়ে না পেয়ে আমার কাছে মনের খেদ জানালে আমি বলতাম আমি তো ম্যানেজার নই।ম্যানেজার হলে আপনার ছুটি আটকাতো না। নিজের গা বাঁচিয়ে এ সব নিরাপদ উত্তর দিতাম। এমনকি গার্ড সোলায়মান বগুড়া থেকে ক্যাশ নিয়ে আসলে বা ক্যাশ দিতে গেলে গাড়ী ভাড়া বাবদ মাত্র ৫/- টাকা পেত। সে ১০/- টাকার আর্জি জানাতো। বাজেট নাই বিধায় ম্যানেজার দিত না।সোলায়মান বিষয়টি আমার সাথে শেয়ার করলে আমি বলতাম তোমাকে অন্ততঃ দশটি টাকা দেয়া উচিৎ। তখন কেন যে এ সব কথা বলতাম তার সঠিক কারণ আজ আর মিলাতে পারছি না। হয়তো আমার বিশ্বাস ছিল ম্যানেজার হলে আমি এ সব পারবো অথবা বয়সে- অভিজ্ঞতায় অপরিপক্ক ছিলাম অথবা নিজের এলাকা তাই হয়তো এমন জনপ্রিয় উত্তর দিতাম। কিন্তু উপরওয়ালা হয়তো এমন দ্বায়িত্বহীন মন্তব্যের কর্মফল তখন নির্ধারণ করেছিল। কয়েক মাস বাদে দ্বিতীয় কর্মকর্তার টেবিল থেকে সরিয়ে আমাকে যখন ঐ শাখার ম্যানেজার করা হলো তখন পূর্বক্তো সবাই আমার কাছে ধর্না দেয়া শুরু করল। দেখলাম , কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ঐ সব কৃষককে ঋণ দেয়া যাচ্ছে না। লোকবল সংকটে ছুটি দেয়া যায় না। নির্ধারিত বাজেট অতিক্রম করে খরচ করা যায় না। সাক্ষাৎ বুমেরাং।
ম্যানেজার হবার পর বুঝতে পারলাম আমাকে ব্যাংকের অনেক ব্যবসায়িক টার্গেট পূরণ করতে হবে। আমানত সংগ্রহ, মুনাফা অর্জন, ঋণ আদায়,ঋণ প্রদান ইত্যাদি । চেষ্টাও শুরু করলাম। কিন্তু আমানত সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখলাম অবাক পৃথিবী ! টাকা জমা করার মত অর্থ নাই কারো। অবাক করলো আরো কৃষি ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা নেই কারো। নতুন ম্যানেজারী। বুঝতে পারছিলাম না এতসব কেমনে ম্যানেজ করবো। শাখায় লোকবলের সংকট প্রকট। প্রায় প্রত্যহ অফিস শেষে অঞ্চল প্রধান মহোদয়ের নিকট গিয়ে এসব সমস্যার কথা বলতাম। উনি বেশ পরামর্শ দিতেন। একদিনের কথা বেশ মনে পড়ছে। সেদিন সন্ধ্যায় চেম্বারে যেয়ে দেখি স্যার একা একা বেশ খোশমেজাজে বসে আছেন। আমি আমার সমস্যার কথা বলতেই স্যার সেদিন হঠাৎ বলে বসলেন সমস্যা ম্যানেজ করার জন্যই তো তোমাকে ম্যানেজারীর দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তোমাকেই সবকিছু ম্যানেজ করতে হবে।
শুধু তোমাকে নিয়ে ব্যস্থ থাকলে তো আর চলবে না। সত্যিই তো , বগুড়া জোনে তখন ৩২টি শাখা উনি শুধু আমাকে নিয়ে ব্যস্থ থাকলে তো চলবেনা। আমি স্যারের যুক্তি মনে-প্রাণে মেনে নিয়ে সম্মতি সূচক মাথা ঝাঁকালাম। আমি স্যারের কাছ থেকে বিদায় নেবার জন্য উসখুস শুরু করে দিলাম। স্যার তা বুঝতে পেরে বললেন – বসো । চা-বিস্কিট খাও।
চা-বিস্কিট খেতে খেতে স্যার আমাকে সেদিন অনেক টিপস দিলেন । বললেন
-ম্যানেজার করার জন্য তোমাকে আমি ধাপে ধাপে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। প্রথমে সেকেন্ড অফিসার বানায়েছি। তার পর ঢাকায় ব্রাঞ্চ ম্যানেজমেন্টের উপর দু সপ্তাহের ট্রেনিং করিয়ে নিয়ে এসেছি। তার পর গত সপ্তাহে মানে জুন মাসের এক তারিখে তোমাকে ম্যানেজার বানায়েছি। ঠিক কিনা ? আমি অবশ্য বেঠিক হবার কোনও কারন দেখি না। স্যারের স্মৃতি শক্তি বরাবরই অসাধারণ । সবার পারিবারিক পরিচয় সহ প্রতিটি কথা মুখস্থ বলতেন। যা হোক, আমি স্যারের সামনে চুপচাপ বসে তখন অতীত বাদ দিয়ে ভাবছি ভবিষ্যৎ এর কথা। জুন মাস শেষ হবার আর আড়াই সপ্তাহ বাঁকি। সব ব্যবসায়িক টার্গেট পূরন করতে পারবো তো। দূরদর্শী স্যার আমার মনের কথাও বুঝি টের পেলেন। হঠাৎ করেই তখন তার অফিসের একজনকে ডেকে ১৯৮৮ সালের ষান্মাসিক লক্ষ্যমাত্রার ফাইলটি আনতে বললেন। আমার অর্জনতব্য টার্গেট , কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে এবং সেজন্য কি করনীয় তা বুঝিয়ে বললেন। এর পর এক সময় প্রসঙ্গ পাল্টায়ে বললেন-
দেখ জালাল , আমি সারাজীবন ভাল ম্যানেজার না হয়ে ভাল লীডার হবার চেষ্টা করেছি। তুমিও তাই করবে। ব্যবস্থাপনা শাস্ত্রও তাই বলে।
-স্যার , আমি তো ব্যবস্থাপনার ছাত্র নই। অর্থনীতির ছাত্র ছিলাম। তাই ম্যানেজার আর লীডারের মধ্যে পার্থক্য কি , তা যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।
- দেখ আমি তোমাকে একটি লেটার ইস্যু করে ম্যানেজার বানায়েছি। তুমি যদি শুধু এ অথরিটির বলে শাখাটি পরিচালনা কর , তা হলে তুমি ম্যানেজার , আর তুমি যদি তোমার গুডউইল দ্বারা শাখাটি পরিচালনা করো তা হলে তুমি, লীডার।
- তার মানে স্যার ম্যানেজার চলে অথরিটির বলে আর লীডার চলে গুডউইল এর বলে।
-এক্সাক্টলি ।ম্যানেজারের থাকে সাব-অর্ডিনেট কিন্তু লীডারের থাকে ফলোয়ার । আবার দেখ কোন কাজ শেষ হলে ম্যানেজার বলে আমি এ কাজটি করেছি। আর লীডার বলে আমরা এ কাজটি করেছি।
- গর্বের কথা সব সময় বহুবচনে বলতে হয় এটি আমি জানি , স্যার।
-কি জান ?
- যেমন স্যার কেউ যদি বলে চারটি পরীক্ষাতেই আমার ফার্স্টক্লাশ আছে , তাহলে শ্রোতারা ভাবে যে লোকটা গর্ব করে কথা বলছে। আর যদি বলে যে আমাদের তো চারটি পরীক্ষাতেই আমার ফার্স্টক্লাশ আছে -তখন কখাটি অনেক মার্জিত শোনা যায়।
-ঠিকই বলেছ , গর্বের কথা বহুবচনে ও ভাববাচ্যে বলতে হয়। যা বলছিলাম , ম্যানেজার সব সময় নিজে ক্রেডিট নিতে চায় আর আর লীডার সাথের সবাইকে ক্রেডিট দিতে চায়। ম্যানেজার সবাইকে কন্ট্রোল করতে চায় আর লীডার বিশ্বাস করে অণুপ্রেরনা দেয়। ম্যানেজার সঠিকভাবে কাজ করতে বলে আর লীডার সঠিক কাজ করতে বলে। কর্মজীবনের ধারাবাহিকতায় তোমাদের মধ্যে অনেকেই ম্যানেজার বা জেনারেল ম্যানেজার হবে কিন্তু লীডার হতে হলে কর্মজীবনের বাহিরে কিছু অন্যরকম গুনাবলীর প্রয়োজন। তবে লীডার কে কিন্তু সৎ ও কৌশলী হতে হবে।
অন্য আর একটা কথা তোমাকে বলি – প্রায় সব ম্যানেজারই বলে ভাল ক্যাশিয়ার নাই , ভাল অফিসার নাই , পিওন নাই ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো সমস্যা । তুমিও বলবে । কিন্তু আমি বলি সমস্যা উল্টোটা। আমাদের ভাল প্রফেশনাল লীডার নাই।কর্মচারিদেরকে ইন্সপায়ার করা শিখতে হবে । কর্মচারিদের বাচ্চারা কোন স্কুলে পড়ে , কারো বাবার অসুখ কিনা সে সব খবর কিন্তু একজন প্রফেশনাল লীডার রাখে।
ব্যাংকের যে যে কাজটা করছে সেইটা করতে তাকে অনুপ্রানিত করতে হবে। নিজেও নিজের কাজ নিয়ে অনুপ্রানিত থাকতে হবে। নারী কর্মচারির সাথে পুরুষ কর্মচারির চিন্তার পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। স্যার বোধ হয় সেদিন আরো অনেক কথাই বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু আরো ২/৩ জন ভিজিটর স্যারের রুমে ঢোকায় এবং স্যার আমাকে যেহেতু এতক্ষণ অনেক সময় দিয়ে ফেলেছেন তাই মনে হলো আমার এখন স্যারের চেম্বার থেকে বিদায় নেওয়াই উত্তম।
- স্যার, আমি আমার সর্বশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা চেষ্টা করবো। স্যারের নিকট থেকে বিদায় নেবার অছিলায় একটা উপসংহার টানতে চেষ্টা করলাম।
- দেখ ,পরিশ্রমের মাধ্যমেই সব কিছু হয়না। প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী হলো গাধা। সে কিন্তু বনের রাজা না। অতিরিক্ত পরিশ্রম বা অতিরিক্ত কাজ অবশ্যই তোমাকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখবে কিন্ত পাশাপাশি এটিও মনে রাখবে Only yours results are rewarded not your efforts. ঠিক আছে আজকে যাও। আমি ২/৪ দিনের মধ্যেই তোমার শাখা ভিজিটে আসবো।
ছালাম দিয়ে স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
স্যারের কথায় অণুপ্রানিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি লীডার হবার চেষ্টা করবো। পরবর্তীতে সারা জীবন সে চেষ্টা করেছি। ব্যক্তিগত অর্জনের দিকে তেমন নজর দিতে পারি নাই।
আলবার্ট আইনষ্টাইন বলেছিলেন একজন সত্যিকারের লীডারের মূল্য প্রকাশ হয় তাঁর অবদানের মাধ্যমে , তার ব্যাক্তিগত অর্জনের মাধ্যমে নয়। আলবার্ট আইনষ্টাইন এ উক্তির মধ্যেই আমি আমার সান্তনা খুঁজে পাই।
স্যার বলেছিলেন লীডার কে সৎ ও কৌশলী হতে হয়। জীবনে যদি এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যে এ দুটির যে কোন একটা বেছে নিতে হবে , অপরটিকে ছেড়ে দিতে হবে তখন কৌশলকে ছেড়ে দিয়ে সততাকেই বেছে নেবার সিদ্ধান্ত সেদিন নিয়েছিলাম।
যা হোক ,অচিরেই আমি বুঝতে পারলাম ম্যানেজার হিসেবে আমাকে মূলতঃ ৭ টি কাজ করতে হবে-অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচালনা করা তথা প্রশাসন ,উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা,ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জন করা ,স্টেটমেন্ট প্রদান, প্রচারনা চালান তথা মার্কেটিং ,নিরাপত্তা সম্পর্কে সজাগ থাকা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান (প্রযুক্তি এবং নতুন ম্যানেজমেন্ট থিওরির সাথে কি আপডেট থাকার বিষয়টি তখনো মাথায় আসেনি ) ।
উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে লিঁয়াজো (তৈল মর্দন –চামচেমি শব্দ গুলি এড়িয়ে ভদ্র ভাষায় লিঁয়াজো বললাম) রক্ষা করার বিষয়টির গুরুত্ব তখনই মাথায় আসা হয়তো উচিৎ ছিল , কিন্তু তখন তাও মাথায় আসেনি। নজরুলের গানে আছে “বরষায় ফুটল না বকুল পউষে ফুটিবে কি সে ফুল ?” উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে লিঁয়াজো রক্ষা করার ফুলটি আমার বেলায় পউষে আর ফোটেনি।সারা জীবন নিজে গোল না করে স্ট্রাইকারের পায়ে গোল করার জন্য বলের যোগান দিয়ে গেছি। লোকে স্ট্রাইকার এর নামে ধন্য ধন্য করেছে। তবে আমার হতাশ হবারও কিছু নাই , যারা প্রকৃত সমঝদার তারা হিসেবে রেখেছে বলের যোগানটি কে দিয়েছিল ?
যা হোক ম্যানেজারী জীবনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমেই এলাকার জনগণের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে নজর দিলাম।
এ শাখা থেকে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের বেতনের অর্থ বিতরণ করা হতো। মাসের প্রথম দিকে এ বেতনের সময়টাতে শাখার কাজের পরিধি ও বৈচিত্র্য বহুগুনে বেড়ে যেত।পরবর্তীতে শিক্ষকদের অধিকাংশের সাথে আমার সু সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার বাড়ী একটু দুরে হলেও সহকর্মী রন্জুর বাড়ী ব্যাংক ভবনের একেবারেই নিকটে। শিক্ষকদের প্রায় সবাই তার চেনা। বয়সে আমার সম সাময়িক রন্জু সাহেব মাস্টার সাহেবদের যাকে যে সর্ম্পকে ডাকতো আমিও তাই ডাকতাম। কাউকে নানা কাউকে মামা কাউকে চাচা কাউকে বা ভাই। কত সুখ স্মৃতি যে আছে তাদের সাথে । কত রসের আলাপ যে জমতো। মাস্টার সাহেবেরা বেতন নেয়ার সময় তুলনামূলক ভাল পোষাক পরে আসতেন। তো এক মামা বেতনের দিনে টাই পরে আসতেন । তবে শার্টের কলারের সাথে না পরে সরাসরি নিজের গলার সাথে টাইটা পরতো। মনভুলা ,তবে খুব ভাল মানুষ। মনে করে দেয়ার সাথে সাথে আবার ঠিক করতো। তবে প্রত্যেকবারই একই কারন দেখাতো- তাড়াহুড়ো। কিছু রসিক মাস্টার সাহেব পানের ডিব্বা নিয়ে আসতো আমাকেও পান অফার করতো। মাঝে মধ্যে জর্দাও। আমি একদিন হাসতে হাসতে বলেছিলাম মহিলার নামে নাম নয় এমন জর্দা আনতে পারলে খাবো। উনি ঐ ছোট বাজার ঘুরে এসে বললো এমন জর্দা নাই। তবে ডেমাজানি বাজারে তখন বেশী দোকানই ছিলনা।
মাস্টার সাহেবদের নামে কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ঋণ দেয়া হতো । বেতনের সময় যার কিস্তি কাটা নিয়ে কারো কারো সাথে অনেক সময় মনোমালিন্যেরও সৃষ্টি হতো। তখন বেতন অনেক কমছিল। অনেকেই তদবীর করতো এ মাসের কিস্তি যেন না কাটা হয়। তবুও তাদের রুরাল ফিন্যান্স প্রজেক্টের আওতায় ঋণ দেয়াকে আমি নিরাপদ মনে করতাম, যেহেতু আমাদের এখানেই তাদের বেতন জমা হতো। এ নিরাপদ খাত থেকে ব্যাংকের অনেক মুনাফা হতো। আমি কোন সময়ই এ বেতন দেবার কাজকে অতিরিক্ত ঝামেলার কাজ বলে মনে করতাম না। তাদের সাথে পরিচিত হওয়া , কথা বলাকে আমি একটা সুযোগ হিসেবে নিতাম। জুন-ডিসেম্বর মাসের আমানতের টার্গেট অর্জনের সময় তাঁরা স্বেচ্ছায় আমাকে সহযোগীতা করতেন। অনেকে এ সময় নিজের বেতন পর্যন্ত তুলতেন না –বলতেন বেতন পরে নিব আপনার টার্গেট আগে পূরন করেন। পরিমানে ছোট ছোট হলেও সংখ্যায় অনেক হতো। শিক্ষকদের নিজ নিজ এলাকায় কৃষি ঋণ আদায় করতে গেলে তারা অনেক সহযোগীতা করতেন। সুসর্ম্পকের কারনে তারা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে আমার ব্যাংকিং কাজে সহায়তা করতেন। তাদের মাধ্যমে এলাকায় আমার একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল। কৃষিঋণ বিতরণে অনেক স্থানেই ভুঁয়া ঋণ দেয়া হয়েছে। আমার সময়ে ওখানে এরুপ ঘটে নাই। তাতে অনেকখানি অবদান ঐ শিক্ষকদের । তাদের মাধ্যমে আমি ঋণপ্রার্থীদের অনেক তথ্য পেতাম। Information is money but knowledge is power-এ বাক্যে Information এর গুরুত্বকে কিন্তু খাটো করা হয় নাই।সব শিক্ষকই যে সহযোগীতা করতো বা নির্ভরযোগ্য তথ্য দিত এমন নয়। স্বয়ং আল্লাহ তা”লা সত্যবাদীদের সঙ্গী হতে বলেছেন। আমি যদি বুঝতে পারতাম তথ্য প্রদানকারী সত্যবাদী – তাহলে তার সাথে গভীর বন্ধুতা গড়ে তুলতাম। ঠকিনি কখনো।সব সময়েই ব্যাংকের সব ব্যবসায়িক টার্গেট পূরন করতে আমি সক্ষম হয়েছিলাম।
কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায় ছিল আমার অন্যতম প্রধান কাজ। এজন্য অবশ্য ৩ জন মাঠ সহকারীও ছিল।
এ সময় প্রধান কার্যালয় থেকে কৃষিঋণ আদায় করার জন্য একজন করে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের বিভিন্ন শাখায় প্রেরণ করা হয়। কৃষি ঋণের পরিমান যেহেতু ডেমাজানী শাখায় বেশী তাই এখানেও একজন এলেন। শুরু হলো আমার জীবনের অন্য অধ্যায়। বনে গেলাম বাঙালী কাবুলিওয়ালা।(ক্রমশঃ)
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৮:১৯ ৬৩৭ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম