বঙ্গ-নিউজ: আগামীকাল রোববার (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষ শঙ্কা প্রকাশ করলেও নির্বাচন কমিশন বলছে শান্তিপূণ উৎসব মুখর ভোট হবে এবার।
সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ হবে। এরই মধ্যে ইসির সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে।
ইসি সচিব বলেন, ভোটের দিন ইসির অনুমোদন ছাড়া কোনো যান্ত্রিক যানবাহন চলবে না। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, সরকারি গাড়ি, সেবা সংস্থা যেমন- ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্র পরিবাহী গাড়ি এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভোট দেয়ার জন্য পোস্টাল ব্যালটের আবেদন করেছেন কিনা তা জানা নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বলতে পারবেন।
ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার ছাড়া কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে ভোটাররা চাইলে সঙ্গে মোবাইল ফোন বহন করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে তা সুইচড অফ রাখতে হবে। ভোটাররা কোনোভাবেই বুথ ও কেন্দ্রে ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।
ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়ার বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ফলাফল ঘোষণা হবে। প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রেই ভোট গণনা করবেন। এ সময় সহকারী রিটার্নিং, প্রার্থীর এজেন্টেরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। ভোট গ্রণনা শেষে প্রিজাইডিং অফিসার লিখিত ফলাফল সংশ্লিষ্টদের সরবাহর করবেন। পরে এ ফলাফল রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। রিটার্নিং অফিসাররা তা ইসিতে পাঠাবেন। ইসির ফোয়ারা প্রাঙ্গণে স্থাপিত মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে। এ চত্ত্বরে ইসি শটি মনিটরের মাধ্যমে ফলাফল প্রর্শন করবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএমের ভোট কেন্দ্রে স্মার্টকার্ড বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিয়ে গেলে ভোট দান সহজ হবে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, সারা দেশে ভোট কেন্দ্রের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে ভোটার এলাকা, ভোটার কেন্দ্র ও কেন্দ্রের নম্বর পাওয়া যাবে। আজ শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে এ সেবা চালু হবে। নির্বাচনের নিরাপত্তায় ইসির তরফে প্রায় ৭ লাখের কাছাকাছি নিরাপত্তা সদস্য, সাত লাখ বেসামরিক কর্মকর্তা ও এক লাখ পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক ও অন্যান্যরা থাকবেন। আশা করি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।
পোলিং অফিসাররা সকাল ৮টার আগেই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নিয়োগপত্র দেখাবেন। এসব বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ইসি ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, ইসি এরই মধ্যে যতগুলো অভিযোগ পেয়েছে সবই তদন্ত কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারের কাছে আইজিপির মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রে মামলা দায়েরেরও নির্দেশনা দিয়েছি।
এক নজরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট: নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এবার ১০ কোটি ৪২ লাখেরও বেশি ভোটেরর এ নির্বাচনে লড়াইয়ে রয়েছেন ১৮৬১ জন। এরমধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১৭৩৩ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১২৮ জন।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ৭ লাখের মতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৭ লাখের মতো ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে সাংবাদিক, পর্য্যবেক্ষকসহ প্রায় ১ লাখের মতো লোকবল মিলিয়ে ১৫ লাখ লোক নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ আসনে ভোট হবে। এক প্রার্থীর মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট হবে ২৭ জানুয়ারি।
জানা যায়, ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। ১২ নভেম্বর পুনতফসিল করা হয়। রিটার্নিং অফিসার ৬৬ জন ও সহকারি রিটার্নিং অফিসার ৫৮২ জন। ভোটকেন্দ্র ৪০,১৮৩, ভোটকক্ষ ২,০৭,৩১২ ভোটার সংখ্যা ১০, ৪২, ৩৮, ৬৭৭ জন। পুরুষ ৫,২৫,৭২,৩৬৫, মহিলা ৫,১৬,৬৬,৩১২ এবার রাজনৈতিক দল ৩৯টি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী- ২৯৯ নির্বাচনী এলাকায় ১৮৬১ জন। রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১৭৩৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ১২৮ জন।
ভোটেকেন্দ্রে নিয়োজিত ফোর্স এর সংখ্যা প্রায় ৬,০৮,০০০। এরমধ্যে পুলিশ ১,২১,০০০; আনসার ৪,৪৬,০০০; গ্রাম পুলিশ ৪১,০০০। সেনাবাহিনী (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন): ৪১৪ প্লাটুন (৩৮৯ উপজেলায়)। নৌবাহিনী (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন): ৪৮ প্লাটুন (১৮ উপলোয়)। কোস্টগার্ড (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন): ৪২ প্লাটুন (১২ উপলোয়)। বিজিবি (প্রতি প্লটুনে ৩০ জন): ৯৮৩ প্লাটুন। র্যাব (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন): ৬০০ প্লাটুন।
মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা র্যাবসহ প্রায় ২০০ প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার জন)। তাছাড়া সারাদেশে জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল দল নিয়োজিত রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তরা জানান, নির্বাচনী মাঠে নির্বাহী হাকিম ১৩২৮ জন। (আচরণবিধিতে ৬৫২ জন; আইন-শৃঙ্খলা ফোর্সের নেতৃত্বে ৬৭৬ জন)। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির: ১২২টি (২৪৪ জন)।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা থাকবে, প্রিজাইডিং অফিসার: ৪০,১৮৩ জন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার: ২,০৭,৩১২ জন। পোলিং অফিসার: ৪,১৪,৬২৪ জন।
পর্যবেক্ষক থাকবে, দেশি: ৮১টি প্রতিষ্ঠানের ২৫,৯০০ জন। বিদেশি পর্য্যবেক্ষক: ৩৮ জন (ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েল্থ থেকে আমন্ত্রিত)। কূটনৈতিক বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা: ৬৪ জন। দূতাবা ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি: ৬১ জন।
এবার ৬টি আসনে ইভিএম ভোটার ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৪ জন; কেন্দ্র ৮৪৫টি, ভোটকক্ষ ৫,০৪৫টি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৪৮ জন। রংপুর-৩ ভোটার ৪,৪১,৬৭১ জন। খুলনা-২ ভোটার ২,৯৪,১১৬ জন। সাতক্ষীরা-২ ভোটার ৩,৫৬,২৪৬ জন। ঢাকা-৬ ভোটার ২,৬৯,৩১৫ জন। ঢাকা-১৩ ভোটার ৩,৭২,৭৭৫ জন। চট্টগ্রাম ৯ ভোটার ৩,৯০,৪৩১ জন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে ভোটের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচনী এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা করা যাবে না।
সেক্ষেত্রে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা করা যাবে না। এ বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা স্থানীয়ভাবে প্রচারের মাধ্যমে প্রার্থী ও দলকে অবহিত করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ৯:০২:৩৬ ৩৫৩ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম