গতকাল রাত ১২টা থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী

Home Page » জাতীয় » গতকাল রাত ১২টা থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী
সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮



ছবি:ইন্টারনেট থেকে

বঙ্গ-নিউজ:  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহনের আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। ভোটের উত্তাপে উতপ্ত এখন সারাদেশ। ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটলেও এখনো বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপরও সতর্ক নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এর মধ্যেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে গতকাল রাত ১২টা থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে ইসির প্রস্তুতিও শেষপর্যায়ে। কাল থেকে জেলায় জেলায় পাঠানো হবে ব্যালট পেপার। ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, ভোটগ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ। ব্যালট মুদ্রণও শেষপর্যায়ে। কয়েকটি আসনে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সেই আসনগুলোয় শেষ মুহূর্তে ব্যালট মুদ্রণ হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন। নির্বাচনী প্রশিক্ষণও শেষ। ভোটগ্রহণের জন্য সিল-প্যাডসহ নির্বাচনী সামগ্রী ইতিমধ্যে জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কাল থেকে ব্যালট পেপার মাঠ পর্যায়ে পাঠানো শুরু হবে।

ইসি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ২২৩ আসনের ব্যালট মুদ্রণ পুরোপুরি শেষ। জামায়াত নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত এবং কয়েকটি আসনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানকার ব্যালট মুদ্রণ করা যাচ্ছে না। ইসির সিদ্ধান্ত পেলে আজকালের মধ্যেই সেগুলোও ছাপানো হবে। তবে যাই হোক ২৮ তারিখের মধ্যে সব আসনের ব্যালট মুদ্রণ সম্পন্ন হবে।

এদিকে নির্বাচনী মাঠের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি সদস্যদের মাঠে নামানো হয়। এক হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য এখন মাঠে কাজ করছেন। গত রাত থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। এ বাহিনীর অধিকাংশই সদস্যই সেনাবাহিনীর। তাদের সঙ্গে থাকছেন বিমান ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও।

গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩৮৯ উপজেলায় সেনাবাহিনী এবং ১৮ উপজেলায় নৌবাহিনী কাজ করছে। গতকাল বিকেল থেকে সেনারা অস্থায়ী ক্যাম্পে পৌঁছতে শুরু করেন। এরপর গতকাল মধ্যরাত থেকেই তাদের স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠে নামার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের মতো এবারও ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।

গত ১৩ ডিসেম্বর সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ১৫ দিন নির্বাচনী মাঠে ছিল সেনাবাহিনী। তারা সাধারণ এলাকায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন এলাকায় একজন কমিশনারের অধীনে দায়িত্ব পালন করে। ওই নির্বাচনে সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

এ ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলায় একটি ব্যাটালিয়ন (৭৪০ সদস্য) ও প্রতিটি উপজেলায় এক প্লাটুন (৩৫ জন) সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তবে এবার কত সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হবে, তা এখনো জানানো হয়নি।

গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সেনাবাহিনী কর্মপরিধি বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হয়।

পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে ইসির কাজে যাবতীয় সহায়তা দেবে সশস্ত্র বাহিনী। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনা বা নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এ বাহিনী।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে সশস্ত্র বাহিনী। অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ডাকা হলে এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারবেন।

জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন্ড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিতে পারবেন। সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত নির্দেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন।

পরিপত্রে বলা হয়, ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কমবেশি করা যাবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনাসদস্য সংরক্ষিত হিসেবে মোতায়েন থাকবেন। বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয়সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান জননিরাপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে উড্ডয়নে সহায়তা করবে।

এবারের সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য প্রায় ৩৮৩ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে ইসি। সূত্র জানায়, সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ৬০ কোটি ৩৭ লাখ, পুলিশের জন্য ১০২ কোটি, বিজিবির জন্য ৫৩ কোটি, আনসারের জন্য ১৫৩ কোটি, র‌্যাবের জন্য ১৩ কোটি ও কোস্টগার্ডের জন্য ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এসব বাহিনীর জন্য মোট ৩৮২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ইসির ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। এবার ৬ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। আসনগুলোয় ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের আধুনিক এ যন্ত্র পৌঁছে গেছে। ভোটার এলাকার তথ্য মেমোরিতে আপলোড করা হচ্ছে। ২৭ তারিখের মধ্যে সেসব নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ইভিএম বিষয়ে বলা হয়, যে ছয়টি আসনে এগুলো ব্যবহার করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। কিন্তু তারা কোনো ধরনের অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন করবেন না।

ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকবেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিকটতম টহল দল ও স্থানীয় ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে মাঠে থাকবেন। এ ছাড়া আগামী ২৯ ডিসেম্বর ৩০০ সংসদীয় আসনে সব মিলিয়ে ৬৪০ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। তারা ভোটের পরও দুদিনসহ সব মিলিয়ে চার দিন মাঠে থাকবেন। এ সময় নির্বাচনী অপরাধে সংক্ষিপ্ত বিচার করবেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ৪০ হাজার ১৮৩টি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটগ্রহণের দিন মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী একজন পুলিশসহ মোট ১৪ জন মোতায়েন থাকবে।
মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী দুজন পুলিশসহ ১৬ জন থাকবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী তিনজন পুলিশসহ মোট ১৬ জন দায়িত্ব পালন করবে। মেট্রোপলিটন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে থাকবে অস্ত্রধারী পাঁচজন পুলিশসহ মোট ১৮ জন।

এদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র বিতরণের কাজ চলছে। আজ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৯:০০   ৩৮০ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ