বঙ্গ-নিঊজ ডটকম: পোকা মারার বিষ ‘ডিডিটি’ স্প্রে করে পাকানো হচ্ছে কলা। কলা খাওয়ার নামে ক্রেতা যে বিষ খাচ্ছেন তা দেখার কেউ নেই। জানা গেছে, কলা দ্রুত বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। তারপর একশ্রেণীর অতিমুনাফা লোভী ব্যবসায়ী অপরিপক্ব কলা পাকানোর জন্য এতে ‘ডিডিটি’ ও অন্যান্য কেমিক্যাল স্প্রে করেন। এভাবে দুই দফায় কলায় কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে খরচ কম, লাভও বেশি হয় বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষি। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেছেন, ‘ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাইক্লোরোইথেন’ বা ডিডিটি সাধারণত পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হয়। আর ‘ডিডিটি’র সঙ্গে অন্য কেমিক্যাল মেশালে এর ক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যা মানবদেহে ঢুকলে কম সময়ে মারাত্মক ক্ষতি করে। ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশংকা থাকে বেশি। তারা বলেন, সামনে রমজান মাস। এ সময় কলার কদর থাকে একটু বেশি। তাই মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কলাসহ অন্যান্য ফল পাকিয়ে পচন রোধে ও দীর্ঘদিন রেখে বিক্রির জন্য ফরমালিন ব্যবহার করে গুদামজাত করে।
চিকিত্সকদের মতে, ‘ডিডিটি’ ও কেমিক্যাল মেশানো খাদ্য খেয়ে কেউ মারা গেলে বহু বছর পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে পরীক্ষা করলেও সেই কেমিক্যালের আলামত পাওয়া যাবে। দেড়শ’ বছরেও এসব কেমিক্যালের তেজস্ক্রিয়া নষ্ট হয় না বলে তারা জানান। গোপালপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জয়নাল আবদিন জানান, জেলার মধুপুর উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার একর জমিতে কলা চাষ হয়। এখানে মেহের সাগর ও সবরি কলার চাষ বেশি হয়ে থাকে। চাষিরা অকপটে স্বীকার করেন যে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা বিষাক্ত কেমিক্যালের সাথে ডিডিটি সংমিশ্রণে তৈরি কেমিক্যাল দুই দফা কলায় ব্যবহার করা হয়। কলা আসার শুরুতে এক দফা দেয়া হয়। এতে পোকামাকড় মরে যায় এবং কলায় কোন রকম দাগ পড়ে না ও দ্রুত বেড়ে ওঠে। দ্বিতীয় দফায় একই কলায় স্প্রে করা হয় হলদে রং ধারণ করার জন্য। জেলার ঘাটাইল, সখিপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়ি ও পাশের ভালুকা উপজেলায় কলা চাষ হয়ে থাকে। চাষিরা জানান, গাছ থেকে কলার ছড়া কেটে রাস্তার পাশে রেখে দেয়া হয়। সেখানে ড্রাম ভর্তি ফরমালিন মিশ্রিত পানিতে কলার ছড়া এক চুবান দিয়ে ট্রাকে তোলা হয়। এই কলা রাজধানীসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয় বলে তারা স্বীকার করেন।
স্থানীয় কৃষিবিদরা কেমিক্যাল সম্পর্কে একই মতামত পোষণ করে বলেন, ব্যবহারকারীরা নিজেরাও জানে না যে তারা কী ধরনের বিষ ব্যবহার করছেন। তারা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন বলে কৃষিবিদরা জানান। জেলা সদর, পলাশ, মনোহরদী ও শিপপুর উপজেলায় কলার চাষ হয়ে থাকে। এই এলাকার সাগরকলা খুবই বিখ্যাত। বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে সেই কলায় বিষাক্ত কেমিক্যালের ব্যবহার। তবে এই কলা স্থানীয় বাসিন্দারা খায় না। ঢাকার সাহেবদের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে জানান কয়েকজন চাষি। জেলা সদরের রামপালের সাগরকলার বেশ সুনাম ছিল। সেই কলায় কেমিক্যাল ব্যবহার শুরু হওয়ায় স্থানীয় জনগণের চাপের মুখে চাষিরা কলা চাষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এখন এখানে কলার বদলে আলুর চাষ হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৫:০১ ৭২২ বার পঠিত