বঙ্গ-নিউজ: আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন যোগদানের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে ইনাম আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন।’
ইনাম আহমেদ চৌধুরীর একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে শুনেছি, তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।’
বিএনপির সিলেট জেলা সভাপতি আবদুল কাহের শামীম বলেন, ‘আমি শুনেছি, তিনি বিএনপি ছেড়েছেন। তিনি দল ছেড়ে যাওয়ায় অবশ্যই বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপির ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
সিলেট জেলা বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা ঠিক হয়নি। তিনি দলের আন্তর্জাতিক উইংয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। সেক্ষেত্রে হাইকমান্ডকেই দায়ী করছেন কয়েকজন নেতা।
প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী। প্রাথমিক মনোনয়নের তালিকায় তিনি থাকলেও শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়নে বাদ পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত এ আসনে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর।
দল থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের যাচাই–বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থী হয়েও বেশ কয়েকজন আলোচিত প্রার্থী বাদ পড়েছেন। ইনাম আহমদ ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন চারদলীয় জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এম মোরশেদ খান। যাচাই–বাছাইয়ে বাদ পড়ার পর আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেলেও দলের মনোনয়ন পাননি। তাঁর জায়গায় চট্টগ্রাম–৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আবু সুফিয়ান।
বর্তমান সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়েছেন। তাঁর বদলে চাঁদপুর–২ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. নুরুল আমিন।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর সম্প্রতি যোগ দেন বিকল্পধারায়। সিলেট–৬ আসনে দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মিত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। মহাজোট থেকে তিনটি আসন পেয়েছে বিকল্পধারা, তাতে নেই সিলেট–৬। এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে গতকাল শেষ দিনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি সমশের মবিন।
নীলফামারী–৪ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন আমজাদ হোসেন সরকার। মেয়র পদ থেকে পদত্যাগের জটিলতার কারণে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল। এরপর নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও ব্যর্থ হন। সর্বশেষ গতকাল উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি।
চাঁদপুর–১ আসনে বিএনপির সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনের প্রার্থিতা বৈধ হলেও দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। তাঁর আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও নির্বাচন সামনে রেখে দেশে ফিরে আসেন এহছানুল হক। বর্তমানে তিনি কারাগারে। তাঁর সমর্থকেরা বিএনপি কার্যালয়ে তালা মেরে দিয়েছিলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন তরুণ প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন ঢাকা–৬ আসনে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ইশরাক।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ঢাকা–১৪ থেকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি। ঢাকা–১৪ আসনে সাবেক সাংসদ এস এ খালেকের ছেলে সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক মনোনয়ন পেয়েছেন।
ঝিনাইদহ–৩ আসনে সংগীতশিল্পী মনির খান বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতের মতিয়ার রহমান। ক্ষোভে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ থেকে গতকাল পদত্যাগ করেছেন মনির খান।
কুমিল্লা–৪ আসনে বিএনপির চারবারের সাংসদ মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। মুন্সীর সমর্থকেরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির চার আলোচিত প্রার্থী আবুল কালাম, তৈমুর আলম খন্দকার, গিয়াস উদ্দিন ও শাহ আলমের কেউ মনোনয়ন পাননি। নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালামের জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের নেতা এস এম আকরাম। নারায়ণগঞ্জ–৪ আসনের সাবেক দুই সাংসদ গিয়াসউদ্দিন ও শাহ আলমের বদলে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন ২০–দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনির হোসেন কাশেমী। নারায়ণগঞ্জ–১ আসনে তৈমুর আলম খন্দকার প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। তৈমুর আলমের সমর্থকেরাও বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
দল ও জোটের নানা সমীকরণে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি তাঁরা। স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত এসব প্রার্থীর কারও কারও সমর্থকেরা বিক্ষোভও করেছেন
বাংলাদেশ সময়: ১০:০০:৪১ ৩৪৮ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম