“রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “- জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “- জালাল উদদীন মাহমুদ
বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৪৮ তম কিস্তি—
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া ৮ম পর্ব।

পুরো শ্রাবণ মাস ধরেই ঝরতো অবিরাম বৃষ্টি। একবার বৃষ্টি শুরু হলো তো থামার আর কোনো লক্ষণ নাই। ডেমাজানি বাজারে দু’চারটি দোকান পাট যা ছিল সেসময় তাও থাকত বন্ধ। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের অভাবে মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। বিশেষ করে কেরোসিন তেলের অভাবে অনেক বাড়িতে রাতে আলোই জ্বলতো না।
যদিও দুই মাস মিলে এক ঋতু, কিন্তু বর্ষাকাল প্রায়ই তিনমাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১৮ শতাংশ ভূখন্ড বন্যা কবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সারা দেশের ৫৫ শতাংশের অধিক ভূখন্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। সাধারনতঃ ব্যাপক বন্যা প্রতি ৭ বছরে একবার এবং মহাপ্রলয়ংকরী বন্যা প্রতি ৩৩-৫০ বছরে একবার এই বাংলাদেশে হানা দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বড় বন্যাগুলো হয়েছিল ১৯৭৪, ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে। ১৯৮৭ এবং ১৯৮৮ সালের মহাবন্যার সময় আমি এ শাখায় কর্মরত ছিলাম। করোতোয়া নদীর পূর্ব পাশ ঘেঁষে ২ টি ইউনিয়ন কৃষি ঋণ বিতরণের জন্য আমাদের শাখার নামে বরাদ্দ ছিল। বরাদ্দকৃত এ এলাকার প্রায় ৫০ % এলাকায় নিয়মিত বন্যা হানা দিত। তবে ১৯৮৭ এবং ১৯৮৮ সালের বন্যার পরিস্থিতি ছিল এক কথায় সর্বব্যাপী ও ভয়াবহ।
১৯৮৭ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের বন্যায় বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটে। দেশের প্রায় ৪০% এরও অধিক এলাকা প্লাবিত হয়। এ ধরনের বন্যা ৩০-৭০ বছরে মাত্র একবার ঘটে।
তার পরের বছরে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আবারো বন্যায় ভয়ংকর বিপর্যয় ঘটে। দেশের প্রায় ৬০% এরও অধিক এলাকা প্লাবিত হয়। এ ধরনের বন্যা ৫০-১০০ বছরে একবার ঘটে। বিরামহীন বৃষ্টিপাত এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে তিন দিনের মধ্যে দেশের তিনটি প্রধান নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি একই সময় ঘটার ফলে বন্যার আরও ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। রাজধানী ঢাকা শহরও প্লাবিত হয়। বন্যা ১৫ থেকে ২০ দিন স্থায়ী হয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ দুর্যোগটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এ এলাকায় এ মহাবন্যা ব্যাপক ভাবে হানা দেবার কয়েক দিন আগে ২৫ শে আগষ্ট আমি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। সে কথা না হয় পরে হবে।
বন্যার সময় নদীর খেয়া পারাপার দুরুহ হয়ে পড়ে। একবার খেয়া মিস করলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। আমার কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাবার পথটিতে বেশ কিছু দিন ধরেই বন্যার পানি ছুঁই ছুঁই করছিল। এক সময় তার অনেক স্থান ডুবে গেল। ভরসা শুধু ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বেবি ট্যাক্সি ,বাস বা রিক্সা । তারপর পায়ে হাঁটা । তারপর খেয়া পারাপার। আমার বাড়ী সংলগ্ন নদীর উপর তখন ব্রীজ থাকলেও ব্যাংক সংলগ্ন এলাকায় ব্রীজ ছিলনা। যদিও ব্যাংক এলাকাটা অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা , তবুও আমরা ভয় করতাম ,কোনদিন না ব্যাংকে বানের পানি ঢোকে। গুরুত্বপূর্ণ সব লেজার -ভাউচার উঁচু টেবিল ও লেজার টেবিলের উপর রাখা শুরু করলাম। টেবিল গুলোর নীচে কয়েকটি ইট দিয়ে উঁচু করে দিলাম। জোনাল অফিস থেকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া চিঠি পাওয়া গেল । ব্যাংকের একদম পাশেই ছিল অস্থায়ী পিওন রাজকুমারের বাড়ী। তাকে মেইন গেটের চাবী দিয়ে বলা থাকলো হঠাৎ রাতে বা ছুটির দিনে পানি ব্যাংকে ঢোকার মত হলে সে যেন ব্যবস্থা নেয়।
ব্যাংক থেকে এক/দেড় কিলোমিটার পূর্বের এলাকা ভয়াবহ ভাবে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছিল । কোমর থেকে গলা পর্যন্ত পানি। এরই মধ্যে মানুষ বাস করছে। বানভাসিদের মধ্যে অনেকের দু’মুঠো খাবারেরও সংস্থান নাই । বাড়িঘর প্লাবিত হবার কারণে অনেকে মাচান, ঘরের চালা ,স্কুল ঘর বা নিকটস্থ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানীয় জলের তীব্র অভাব। জ্বালানী ও গো-খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যার সময় কলা গাছের ভেলাই ছিল গ্রামের লোকদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।
পানিতে ভিজে পঁচে যাওয়ায় ঘরের লেপ তোশক বালিশ বানভাসি লোকজন বানের পানিতে ফেলে দিত। চারদিকে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ। পারাপারে নৌকায় একমাত্র ভরসা। ব্যাংকে গ্রাহক সমাগম হতো না। কৃষিঋণ আদায়ের তো প্রশ্নই আসে না।
চারদিকে দেখতাম আর ভাবতাম পৃথিবী সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছে গেলেও প্রকৃতিকে মানুষ বশে আনতে পারেনি।
বন্যার কারণে অবশ্য জমিতে প্রচুর পলি পড়ে জমি উর্বর হয়। ফলে বন্যার পর জমিতে ফসল ভালো হয়। তাছাড়া বন্যার পানি আবর্জনা ধুয়ে নিয়ে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করে।

বন্যা অবশ্য এ এলাকার বাসিন্দাদের নিকট নতুন কোনো বিষয়ও ছিলনা । তবে ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ পরপর এ দু ‘ বছর তা ভয়াবহ ছিল। বিশেষ করে ১৯৮৮ সালের মহাবন্যার তুলনা হয় না । এ এলাকার সবচেয়ে বড় দুবলাগাড়ী হাটেও সে বার প্রথম বানের পানি উঠে , হাট বন্ধ হয়ে যায।

একদিন বন্যার পানি নেমেও যায় । প্রকৃতিতে যাই থাক ক্যালেন্ডারে শরৎকাল চলে আসে। (ক্রমশঃ)

 

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৮:০০   ৪১৮ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিনোদন’র আরও খবর


১৬ ব্যান্ডের সবচেয়ে বড় কনসার্ট আজ আর্মি স্টেডিয়ামে
এবার হিন্দি সিনেমার নায়িকা বাংলাদেশের জয়া আহসান
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস, —”পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো”
শুভ জন্মদিন সুরের পাখী রুনা লায়লা
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
রক্তাক্ত অমিতাভ বচ্চন হাসপাতালে
চঞ্চল,মেহজাবীন, তিশা, ফারিণ,পলাশ, শাহনাজ খুশি -সবাই গেলেন আমেরিকায়
দুই না তিন পুত্র সন্তানের বাবা শাকিব খান! সূত্রঃ জনকন্ঠ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
বুবলীর সন্তানের বাবা শাকিব খান, বয়স আড়াই বছর

আর্কাইভ