বঙ্গ-নিউজ: আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি সারাদেশে ১৫০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এসব প্রার্থী চূড়ান্ত করেন স্থায়ী কমিটির নেতারা। এরই মধ্যে প্রার্থী হিসেবে যাদের চূড়ান্ত করা হয়েছে তাদের ফোনে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনাসহ সার্বিক বিষয় দেখভাল করতে ১২টি উপকমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কমিটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া কমিটি, সোস্যাল মিডিয়া কমিটি, অর্থ কমিটি, প্রচার কমিটি ইত্যাদি।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, এটা চূড়ান্ত করার কোনো বিষয় নয়। আমরা মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার সময় একজনকে চূড়ান্ত করে বাকিদের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে দিয়েছি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বরের আগে ৩০০ আসনে বিএনপি তার একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজ করেন দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। বৈঠকের শুরুতে দেখা হয়, যাচাই-বাছাইয়ে কোন কোন আসনে মূল প্রার্থী বাদ পড়েছেন এবং তাদের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, যাচাই-বাছাইয়ে মূল প্রার্থী বাতিল হওয়ায় তারা কিছুটা জটিলতায় পড়েছেন। তারা মনে করছেন, সরকার যতই কৌশল করুক, লাভ হবে না। শেষ পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়ায় তারা মূল প্রার্থীদের হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিতে সক্ষম হবেন। বিএনপি নেতা জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ফাঁকা মাঠে গোল দেবে। কিন্তু তারেক রহমানসহ দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তে উল্টো ক্ষমতাসীনরাই বিপদে পড়েছে। এখন সারাদেশে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এটা থামাতে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে। এর পরও বিএনপি নির্বাচনে আছে, থাকবে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এমনিতেই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে নেতাকর্মীসহ দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এরই মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে সমন্বয়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও ১১টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। মিডিয়া কমিটির প্রধান করা হয়েছে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, সোস্যাল মিডিয়া বিভাগের প্রধান তাবিথ আউয়াল। বাকি কমিটিগুলো তৈরির কাজ চলছে।
প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী, একক প্রার্থী হিসেবে যাদের চূড়ান্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন নোয়াখালী-১ আসনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-২ জয়নুল আবদীন ফারুক, নোয়াখালী-৩ বরকত উল্লাহ বুলু, নোয়াখালী-৪ মো. শাহজাহান, নোয়াখালী-৫ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নোয়াখালী-৬ ফজলুল আজিম, লক্ষ্মীপুর-২ আবুল খায়ের ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর-৩ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ফেনী-১ রফিকুল আলম মজনু, ফেনী-২ জয়নুল আবেদীন, চট্টগ্রাম-১০ আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১১ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৬ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার-১ হাসিনা আহমেদ, কক্সবাজার-৩ লুৎফুর রহমান কাজল, কক্সবাজার-৪ শাহজাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৩ নাসের রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, কুমিল্লা-১ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কুমিল্লা-৬ আমিনুর রশীদ ইয়াসিন, চাঁদপুর-৪ এমএ হান্নান, চাঁদপুর-৫ ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক, মাদারীপুর-৩ আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, শরীয়তপুর-২ শফিকুর রহমান কিরণ, শরীয়তপুর-৩ মিয়া নুরুদ্দিন অপু, সিলেট-২ তাহমিনা রুশদীর লুনা, পঞ্চগড়-১ ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ঠাকুরগাঁও-১ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, লালমনিরহাট-৩ আসাদুল হাবিব দুলু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ অধ্যাপক শাহজাহান, রাজশাহী-২ মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী-৩ শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী-৪ আবু হেনা, নাটোর-২ সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, ঝালকাঠি-১ ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, টাঙ্গাইল-৬ গৌতম চক্রবর্তী, জামালপুর-৩ মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ময়মনসিংহ-১ এমরান সালেহ প্রিন্স, সিরাজগঞ্জ-২ রুমানা মাহমুদ, মেহেরপুর-১ মাসুদ অরুণ, কুষ্টিয়া-৩ সোহরাব উদ্দিন, কুষ্টিয়া-৪ মেহেদী আহমেদ রুমী, চুয়াডাঙ্গা-১ শামসুজ্জামান দুদু, যশোর-৩ অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মাগুরা-২ নিতাই রায় চৌধুরী, নেত্রকোনা-৪ তাহমিনা জামান, কিশোরগঞ্জ-১ রেজাউল করিম খান চুন্নু, কিশোরগঞ্জ-৬ শরীফুল আলম, মুন্সীগঞ্জ-১ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মুন্সীগঞ্জ-২ মিজানুর রহমান সিনহা, ঢাকা-৩ গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ঢাকা-৪ সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-৮ মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১২ সাইফুল আলম নীরব, বাগেরহাট-২ এমএ সালাম, খুলনা-১ আমির এজাজ খান, খুলনা- ২ নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩ রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আজিজুল বারী হেলাল, সাতক্ষীরা-১ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, বরগুনা-২ নুরুল ইসলাম মনি, পটুয়াখালী-১ আলতাফ হোসেন চৌধুরী, পটুয়াখালী-৪ এবিএম মোশাররফ হোসেন, ভোলা-৩ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভোলা-৪ নাজিম উদ্দিন আলম, বরিশাল-১ জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৫ মজিবুর রহমান সরোয়ার, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, নরসিংদী-২ ড. মঈন খান, নরসিংদী-৪ সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, ফরিদপুর-২ শ্যামা ওবায়েদ, ফরিদপুর-৩ চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ প্রমুখ।
আসন বণ্টন দুই-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত : মির্জা ফখরুল
এদিকে মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে বিএনপি ও জোটের একক প্রার্থী এবং দলটির সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে যেসব আসনে যাচাই-বাছাইয়ে ধানের শীষের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে, তা নিয়ে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। বৈঠকে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে দুই-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শত বাধা-প্রতিকূলতা, গ্রেপ্তার-নির্যাতন উপেক্ষা করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা চাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জনগণকে মুক্ত করতে। এই দেশের মানুষ বারবার লড়াই করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে। এবারও তারা সুনিশ্চিত জয়ী হবে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইসি সম্পর্কে কোনো কথাই বলতে ইচ্ছে করে না। ইসি ন্যূনতম আস্থাও হারিয়ে ফেলেছে। তারা সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়নে বিরোধী দলকে হয়রানি ও সমস্যা তৈরি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অওয়ামী লীগের জোট শরিকদের মধ্যেইতো মনোনয়ন নিয়ে ঝামেলা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৪:৪২ ৪০৭ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম