বঙ্গ-নিউজঃ শিক্ষকের কাছে বাবার অপমান সইতে না পেরে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আমি ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। এ বিষয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা শুনেছি। তাদের বলেছি, কেউ অপরাধী হলে অবশ্যই শাস্তি পাবে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়? ঘটনার পেছনের কথাও শুনছি। ঘটনার পেছনে বা ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাহিদ জানান, এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবকদের পছন্দের উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অভিভাবকেরা তাদের ছেলেমেয়েদের এখানে পড়াতে চান। জনপ্রিয়তার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কথা আগেও কানে এসেছে।
এদিকে ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় তিন সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌস বলেন, এ ঘটনায় আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমান, খুরশিদ জাহান ও ফেরদৌসী জাহান।
তিনি আরও বলেন, যে শিক্ষক তাকে ভর্ৎসনা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তদন্তে এর প্রমাণ পাওয়া গেলে স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে অরিত্রির বাবা সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী দিলীপ অধিকারী বলেন, অরিত্রি পরীক্ষার হলে মোবাইলে নকল করছে— এমন অভিযোগে তাকে সোমবার বাবা-মাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও অরিত্রিকে নিয়ে স্কুলে যান। তারা প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের কক্ষে যান। তারা মেয়ের হয়ে তার কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু তিনি তাদের অপমান করে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি নিয়ে যেতেও বলেন ভাইস প্রিন্সিপাল। এরপর তিনি প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে ক্ষমা চান। একপর্যায়ে অরিত্রি তার পা ধরে ক্ষমা চায়। তাতেও কাজ হয়নি। প্রিন্সিপাল তাদের অপমানজনক কথাবার্তা বলে তার কক্ষ থেকে বের করে দেন।
তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার পর অরিত্রি প্রিন্সিপালের রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে যায়। তারাও তার পিছু নেন। স্কুল থেকে বের হয়ে মেয়ে একাই একটি রিকশায় তাদের শান্তিনগরের বাসায় চলে আসে। পরে তারা ফিরে দেখেন, নিজের ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলছে অরিত্রির নিথর দেহ। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৫:১২ ৪৯৫ বার পঠিত #bd news #bongo-news #hot news.bangla news