২৮ তম কিস্তি—
তালোড়া শাখায় ১১ মাস- ২২ তম পর্ব।
ইতিহাসের ছাত্রটি পকেট থেকে কাগজ বের করেই রেখেছিল । সে দেখি ৩ সেট ফটো কপিও করে নিয়ে এসেছে। প্রত্যেকের হাতে ১ টি করে কপি দিয়ে জগৎশেঠ সম্পর্কে সে নিজেই পড়া শুরু করলো।
প্রশ্নঃ জগত্ শেঠ কে ছিলেন ?
উত্তরঃ শতাধিক বছর ধরে নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি দেখে দেখে এ দেশের মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে, জগৎ শেঠ বুঝি কোনো একজন ব্যক্তি বিশেষের নাম এবং পলাশীর চক্রান্তের সাথে বুঝি সেই জগৎ শেঠ জড়িত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জগৎ শেঠ কোনো ব্যাক্তির নাম নয়। জগৎ শেঠ একটি উপাধির নাম নবাব সিরাজউদ্দৌলার ষড়যন্ত্রের অন্যতম হোতা ছিলেন এই মাড়োয়ারী জগৎ শেঠরা ।
‘জগৎ’ শব্দের অর্থ বিশ্ব এবং ‘শেঠ’ অর্থ ব্যাংকার। ‘জগৎ শেঠ’-এর অর্থ ‘বিশ্ব ব্যাংকার’। এটি একটি বংশগত রাজকীয় উপাধি। আঠার শতকে ভারত বর্ষে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক আসে। প্রাতিষ্ঠানিক এ ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জগৎ শেঠ পরিবারই ঢাকা ও মুর্শিদাবাদের অর্থ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতো। পলাশীর যুদ্ধে একদিকে যেমন ইংরেজদের কূটকৌশল এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কাজ করেছিল, অন্যদিকে ঠিক তেমনিভাবে কাজ করেছিল জগৎ শেঠের টাকা।
এ সময় আমি বলি এখন আপনি জগৎ শেঠদের পরিবারের যার যার নাম আলোচনা করবেন তাদের একটি তালিকা প্রথমে দিলে সবারই বিষয়টি মনে রাখার সুবিধা হতো । সে আমাকে লিখতে বলে আমি লিখি।
১. হীরানন্দ এর পুত্র মানিক চাঁদ ,
২.মানিক চাঁদ এর ভাতিজা (ভাইয়ের পুত্র) ফতেহ চাঁদ,
৩.ফতেহ চাঁদ-এর দৌহিত্র মাহতাব চাঁদ (যার চক্রান্তের শিকার হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন হয়)
৪ মাহতাব চাঁদ এর ভাই .মহারাজা স্বরূপ চাঁদ (সেও নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের অন্যতম প্রধান চক্রান্ত কারী )।
এ ছাড়াও সে সময়ের সম্রাট ফররুখ সিয়ার ও সম্রাট মাহমুদ শাহ এ ২ জন মোগল বাদশার নামও আসবে।
বিষটি বোঝার জন্য সে এ কয় জনের নাম মনে রাখার অনুরোধ করে। তার পর আবার পড়া শুরু করে।
জৈন ধর্মের অনুসারী, হীরানন্দ তাদের পূর্ব পুরুষ। প্রথমে তারা ভাগ্যান্বেষণে বিহারের পাটনায় আসে। হীরানন্দের পুত্রমানিক চাঁদ ১৭ শতকের শেষ দশকে পাটনা থেকে ঢাকায় এসে ব্যবসা শুরু করেন । এ পর্যায়ে তৎকালীন শাসক মুর্শিদকুলী খানের সঙ্গে তাদের সৌহার্দ্য স্থাপিত হয়। মুর্শিদকুলী খানের অনুগমন করে তারা নতুন শহর মুর্শিদাবাদে এসে জেঁকে বসে এবং সরকারের পক্ষে ব্যাংকার বা অর্থ যোগানদার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বাংলার দেওয়ান মুর্শিদ কুলী খান ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রাজস্ব দপ্তর ঢাকা থেকে স্থানান্তর করে মুর্শিদাবাদে স্থাপন করলে বুদ্ধিমান মানিক চাঁদও তাঁর দপ্তর ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। সেখানে তিনি নবাবের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও ব্যাংকারে পরিণত হন। এবং বুদ্ধি বলে শীঘ্রই মানিক চাঁদ সরকারের একচ্ছত্র ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নেন।
মুর্শিদকুলী খান ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে মানিক চাঁদকে ‘নগর শেঠ’ উপাধি দেওয়ার জন্য দিল্লীর মোগল সম্রাট ফররুখ সিয়ার এর নিকট সুপারিশ করেন।
১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে মানিক চাঁদ-এর মৃত্যু হয়। মানিক চাঁদ তাঁর ভাতিজা (ভাইয়ের পুত্র) ফতেহ চাঁদকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে ফতেহ চাঁদ এ পরিবারিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানে পরিণত হন। ফতেহ চাঁদই ভারতের সর্বত্র তার ব্যাংক-ব্যবসার প্রসার ঘটান। তাঁর ব্যাংকের প্রতি সকলের বিশ্বাসযোগ্যতা এমন বেড়ে যায় যে, তাঁর ইস্যুকৃত হুন্ডি ভারতের সর্বত্রই দেখামাত্র পরিশোধ করা হতো এসব কারণে ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন দিল্লীর মোগল সম্রাট মাহমুদ শাহ ফতেহ চাঁদ কে ‘জগৎ শেঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ‘জগৎ শেঠ’ উপাধিটি ছিলো বাংলায় ও বাংলার বাইরে ফতেহ চাঁদ-এর প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকিং হাউজ এর ব্যাপক ও বহুমুখী কর্মকান্ডের স্বীকৃতির সরকারী সনদ। মুর্শিদাবাদে প্রধান দপ্তর ছাড়াও জগৎ শেঠের ব্যাংক-এর শাখা ঢাকা, দিল্লি,পাটনা, ও সুরাট সহ বাংলার ও উত্তর ভারতের প্রায় সব কয়টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের ‘জগৎ শেঠ’ পরিবার সে সময় যে সব কাজের সাথে জড়িত ছিল তার মধ্যে আছে-
• সুদের তথা ব্যাংকিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজ। বলা বাহুল্য, সে যুগে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থা প্রচলিত না থাকায় জগৎশেঠরা অলিখিত ব্যাংকার হিসাবে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়।
• জমিদাররা জগৎ শেঠের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই খাজনা পরিশোধ করতেন।
• তাদের মাধ্যমে নবাবরাও দিল্লিতে খাজনা পাঠাতেন ও জগৎ শেঠের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করতেন।
• ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ইংরেজরা এদেশে আসতে থাকলে ইংল্যান্ডের মুদ্রার সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রা বিনিময় করার জরুরী প্রয়োজন দেখা দেয়। আর এ ধরনের কাজের সুযোগ গ্রহণ করেন জগৎ শেঠ পরিবার। ইংরেজরা ঘুষ এবং দুর্নীতি বাবদ ভারতীয় মুদ্রায় যে অর্থ পেত তা ইংল্যান্ডের মুদ্রায় বা সোনা ও রত্নে বিনিময় করে দিত জগৎ শেঠ। এ জন্য নবাগত ইংরেজদের কাছে তাদের অনেক কদর ছিল।
• ইতিহাসে জগৎ শেঠ পরিবারের আর্থিক লেনদেন-এর কার্যক্রম সর্বদা ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আঠারো শতকে ব্রিটেন সরকারের পক্ষে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড যে ধরনের কাজ সম্পাদন করতো, জগৎ শেঠ-এর প্রতিষ্ঠানও বাংলার সরকারের পক্ষে অনুরূপ কাজ সম্পাদন করতো।
• তাদের প্রতিষ্ঠান সরকারের পক্ষে রাজস্ব সংগ্রহকারী ও সরকারের ট্রেজারারের ভূমিকা পালন করতো।
• তারা মুর্শিদাবাদের টাকশাল নিয়ন্ত্রণ করতো
• ইউরোপীয় ব্যবসায়ীগণণ কর্তৃক সোনা ও রূপার পিন্ড বাংলায় আমদানি করা হলে তা ক্রয় করে মুর্শিদাবাদের টাকশালে মুদ্রায় পরিণত করা হত। এ কাজও তারা করতো।
• ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার মুদ্রানীতি জগৎ শেঠরাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
• ১৭১২ সালে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণের পর পরই সম্রাট ফররুখ সিয়ার ‘নগর শেঠ’ (নগরের ব্যাংকার) উপাধি প্রদান করে মানিক চাঁদকে সম্মানিত করেন। ১৭১৪ সালে মানিক চাঁদের মৃত্যুর পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র (দত্তক পুত্র) ও উত্তরাধিকারী ফতেহ চাঁদের নেতৃত্বে পরিবারটি বিপুল খ্যাতি অর্জন করে। ১৭২৩ সালে সম্রাট মাহমুদ শাহ ফতেহ চাঁদকে ‘জগৎ শেঠ’ উপাধি প্রদান করলে এ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানটি দেশে এক অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতর ছিল মুর্শিদাবাদে এবং ঢাকা, পাটনা ও দিল্লিসহ বাংলার গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বাংলার বাইরে এ ব্যাঙ্কের শাখা ছিল।
• ১৭১৭ সালে তৎকালীন জগৎশেঠ মুর্শিদাবাদের টাঁকশালের দায়িত্ব পান। এরপর তিনি বাংলার নগদ অর্থের অর্থনীতিকে বিপুলভাবে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। তিনি স্থানীয় শাসক ও বিদেশী বণিকদের ঋণ দিতেন। রাজস্ব বিভাগের দায়িত্বও ছিল তার হাতে। রাজস্ব জমা ও বণ্টন হতো তার হাতে। ১৭১৮-৩০ সময়ে বছরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতি বছর জগত্ শেঠ ফার্ম থেকে গড়ে ৪ লাখ টাকা করে ঋণ নিয়েছিল। ১৭৫৭ পর্যন্ত জগত্ শেঠরা ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বার্ষিক ৪ লাখ টাকা ও ফ্রেঞ্চ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ দিত।
• জগৎ শেঠের পরিবারের বার্ষিক আয় ছিল ৪০ লক্ষ টাকা। বর্তমানের মূদ্রা মানে তার পরিমান ৯০০ কোটি টাকা। মুর্শিদাবাদের টাকশাল ছিল জগৎ শেঠের একক এখতিয়ার।
(এটুকু শোনার পর ঝন্টু দাস -গলা খাঁকারি দিয়ে অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলে উঠে -এ সব সত্য নাকি ? তারাই কি তাহলে বাংলার প্রথম ব্যাংকার ? মহসীন ইতিহাসের ছাত্রকে বলেন সমকালীন ইতিহাসে এ সবের কি প্রমান আছে? ছাত্রটি বলে সমকালীন দলিল দস্তাবেজে জগৎ শেঠের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কারবার, যেমন ঋণগ্রহণ, ঋণ পরিশোধ, সোনারুপার ক্রয়-বিক্রয় ও অন্যান্য লেনদেনের উল্লেখ রয়েছে। এর পর তিনি মহসীন খাঁনকে Robert Orme নাম দিয়ে গুগলে সার্চ দিতে বলে । সার্চ দেবার পর মহসীন খাঁন বেশ সময় ধরে মোবাইলে ঘাটাঘাটি করে জানান -বৃটিশ ইতিহাসবিদ Robert Orme (১৭২৮-১৮০১) লিখেছেন যে, এ হিন্দু ব্যবসায়ী পরিবারটি মুগল সাম্রাজ্যে সবচেয়ে বড় ধনবান ছিল; মুর্শিদাবাদ সরকারের উপর এ পরিবারের প্রধানের ছিল প্রচন্ড রকমের প্রভাব। তারা অধিকাংশ জমিদারের পক্ষে নিরাপত্তা জামিনদার হতেন এবং তার প্রতিনিধিরা ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতেন। রাজ্যের কোথায় কি ঘটছে তা তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি ভাল জানতেন এবং রাজ্যের প্রতিটি জরুরি ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে তার সহায়তার প্রয়োজন হতো। )
ফতেহ চাঁদ-এর দৌহিত্র মাহতাব চাঁদ ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে পারিবারিক পদবিটি (জগৎ শেঠ) উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হন (যাঁদের চক্রান্তের শিকার হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন তাঁদের একজন হিসেবে মাহতাব চাঁদ কে চিহ্নিত করা হয়। বাঙালীরা জগৎ শেঠ বলতে তাকেই বোঝে)। তাঁর ভাই মহারাজা স্বরূপ চাঁদ নবাব আলীবর্দী খানের দরবারের অভিজাতদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হিসেবে পরিগণিত হতেন।
ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মাহতাব চাঁদ ও স্বরূপ চাঁদ উভয়েই নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়ে পড়েন । সিরাজউদ্দৌলা কোম্পানির সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে, তাঁরা উভয়েই ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে কোম্পানির পক্ষ অবলম্বন করেন। ঐতিহাসিক অকাট্য তথ্য প্রমাণ রয়েছে যে, জগৎ শেঠ নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ও কোম্পানির পক্ষে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং তিনি নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতো ঝুঁকি নিতে কোম্পানিকে উৎসাহিত করেন । কোম্পানিকে বড় অংকের টাকা ঋণ হিসেবেও প্রদান করেন। জগৎ শেঠদের অনুগত সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ যুদ্ধের পরেও এ পরিবার বেশ কয়েক বছর যাবৎ কোম্পানির ব্যাংকার ছিল। ইংরেজদের প্রতি জগৎ শেঠের সহযোগিতার কারণেই পলাশীর যুদ্ধের মতো বাংলার বড় পরাজয়ের ঘটনাটি সংঘঠিত হয়েছিলো বলে মনে করা হয়। রবার্ট ক্লাইভ স্বয়ং লিখেছেন, ‘‘কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি চক্রান্তের পেছনে থাকলেও আসল নেতৃত্ব দিয়েছিল জগৎশেঠ নিজে।”১৭৫৭ সালের যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জগৎ শেঠ কার্যত বাংলার নবাবে পরিণত হন। কোম্পানির তৈরি নবাব মীরজাফর জগৎ শেঠের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পুতুল নবাবে পরিণত হন। মীরজাফর এর নওয়াবী আমলেও তাদের শক্তি ও প্রভাব অব্যাহত ছিল। কিন্তু তারা মীরজাফর এর উত্তরাধিকারী মীর কাসিমের বিরাগভাজন হন। মীর কাসিম ১৭৬৩ সালে শেঠ পরিবারের নেতৃস্থানীয় এ দুভাইকে হত্যার নির্দেশ দেন। এ ঘটনার পরই নওয়াবের কাছ থেকে ক্ষমতা কোম্পানির হাতে চলে যায় এবং আঠারো শতকের শেষের দিকে এ পরিবারের পতন আরম্ভ হয়।
১৭৬৭ সালে ভারত ছেড়ে চলে যান জগৎশেঠদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতিশীল লর্ড ক্লাইভ। ফলে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয় জগৎশেঠ পরিবার। ধীরে ধীরে ইংরেজদের কাছে ঘনিষ্ঠতা হারায় তারা। ১৭৭২ সালে টাঁকশাল মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তর হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যাংকার হওয়ার সুযোগ থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয় জগৎশেঠ পরিবার। এভাবেই ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় মাড়োয়ারী জগৎশেঠ পরিবারের ভাগ্যসূর্য চিরতরে অস্তমিত হয়।
মাহতাব চাঁদের উত্তরাধিকারীরা ৬ পুরুষ ধরে ‘জগৎ শেঠ’ উপাধি লাভ করেছেন। জগৎ শেঠ -উপাধিধারীদের মধ্যে সর্বশেষ জগৎ শেঠ ছিলেন ফতেহ চাঁদ। তার মৃত্যুর পর জগৎ শেঠ উপাধির আর নবায়ন হয়নি।
[x] পলাশীর সব বিশ্বাসঘাতকদেরই করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। জগৎশেঠও তার ব্যতিক্রম নন। পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরাই জগৎেশঠের টাকশাল ও প্রাসাদ লুট করে। তাকে সর্বস্বান্ত করে। তার টাকশালও বন্ধ হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ ধরেই দেখছিলাম মহসীন কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ’পলাশীর যুদ্ধ ’কথাটি শোনার পর থেকে। দেখলাম মোবাইলে সে কি যেন খুঁজছে। হঠাৎ তার মোবাইলে মানবেন্দ্রের কণ্ঠে নজরুলের ”পলাশী ,হায়রে পলাশী ,এঁকে দিলি তুই জননীর বুকে কলংক কালিমা রাশি”-এ গানটি বেজে উঠলো।
আমরা কিছুক্ষণ যেন স্তব্ধ হয়ে পড়লাম। আলোচনা থেমে গেল।
ব্যাপারটি বুঝতে পেরে ঝন্টু দাস প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য ইতিহাসের ছাত্রকে আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলো -. আচ্ছা ,মাড়োয়ারীরাই কি এ দেশের প্রথম ব্যাংক ব্যবসায়ী ছিলেন ? নাকি….
ইতিহাসের ছাত্র তাকে প্রশ্নটি শেষ করতে না দিয়ে বলে উঠলো –না ,না, মাড়োয়ারীরাই এ দেশের প্রথম ব্যাংক ব্যবসায়ী নয়। সে আমাকে একটি বইয়ের পাতার কোণা মুড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে পড়তে বললো। আমি পড়া শুরু করলাম।(ক্রমশঃ)
বাংলাদেশ সময়: ২২:২১:২৮ ৮৬১ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম