২৫তম কিস্তি—
তালোড়া শাখায় ১১ মাস- ১৯তম পর্ব।
তালোড়া পর্ব শেষ করে অচিরেই অন্য পর্বে যাব –ভাবছি । কথাটি শোনার পর সহকর্মী ও আমার লেখার একান্ত ভক্ত মহসীন খাঁন বললো আপনি তো তালোড়া এলাকা নিয়ে কিছু লিখলেন না। তালোড়া এলাকা নিয়ে লিখেন বা না লিখেন তালোড়ার ব্যবসায়ী মাড়োয়ারীদের নিয়ে কিন্তু লিখতেই হবে। এ প্রজন্মের অনেকেই মাড়োয়ারীদের ইতিহাস জানেনা। মনে মনে প্রমাদ গনলাম, এ ইতিহাসতো আমিও ভাল জানি না। নিজের অজ্ঞতা ঢেকে রেখে তাকে আচমকা প্রশ্ন করলাম –আপনি নিজে তাদের ইতিহাস জানেন? মহসীন মৃদু হাসলেন ,তবে সে হাসি লজ্জার। বুঝলাম সেও তেমন কিছু জানেনা। পাশে বসেছিলেন মহসীনের আজীবন বিশ্বস্ত সাথী ও সহকর্মী ঝন্টু দাস। তারে শুধালাম। সেও মাথা নাড়লো-জানেনা। সামনে দিয়ে যাচ্ছিল জসীম – তাকেও শুধালাম ? “ কাজে হুঁশ পাইনা স্যার ? আপনি আছেন ইতিহাস নিয়ে?-এই হল জসীমের উত্তর। টেবিল চাপড়ে বললাম- হোপলেস । মহসীন চায়ের অর্ডার দিল। আর আমি মাড়োয়ারীদের নিয়ে আমাদের জ্ঞানের বহর হিসাব করছি 0+0+0+0=0 । অসংখ্য জিরো একজোট হলেও লাভ হয়না রেজাল্ট ঐ জিরোই হয়। আমি ততক্ষণে মন ঠিক করে ফেলেছি-হোকনা জিরো থেকে শুরু ,তবু এ ইতিহাস আমি লেখার চেষ্টা করবই। সবাইকে বললাম, সামনের ছুটির দুই দিন আপনারা জানার চেষ্টা করবেন। আমরা সন্ধ্যার পর কোন এক স্থানে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করব। জসীম বললো সে অনেক দুরে থাকে তার পক্ষে সন্ধ্যার পর মতিঝিলে থাকা সম্ভব নয়। আমি সমাধান বাৎলে দিলাম। যেহেতু জসীম অর্থনীতির ছাত্র ছিল –তাই সে মাড়োয়ারীদের ব্যবসায়িক সাফল্যের কারন ছুটির দিনে বসে বসে লিখবে। সফট কপি দিবে। ঝন্টু দাস বর্তমান ভারতে বিশেষতঃ কলকাতায় মাড়োয়ারীদের অবস্থান জানার চেষ্টা করবে। বাদবাকি অংশ আমি ও মহসীন দেখবো।
এর পর আমি পরিচিত অনেককে জিজ্ঞাসা করলাম । এমন একজনও পেলাম না যাদের মাড়োয়ারীদের সম্পর্কে বলার মত জ্ঞান আছে বা তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চায়। সবার অবস্থাই দেখলাম আমার মত। এক জন তো বলেই বসলো ইতিহাস রাজা-বাদশাদের কাহিনী। মাড়োয়ারীদের কাহিনী জেনে কি হবে?
বাসায় এসে প্রথমে বিজ্ঞান ও পরে বানিজ্যে পড়া আমার ছেলেকে মাড়োয়ারীদের ইতিহাস সংগ্রহ করে দেবার জন্য বললাম। ছেলে দেখি আরেক কাঠি সরেস । বলে কিনা দার্শনিক হেগেলের কথা মনে নাই ? তিনি বলেছেন , ইতিহাস থেকে কেউ কোন শিক্ষা গ্রহণ করেনি। তাহলে ইতিহাস জেনে লাভ কি ? বুঝলে আব্বু , এখন চলছে বাণিজ্যিক যুগ। সর্বত্রই দেখ ব্যবসা-শিক্ষার জয়জয়কার। এর পরে আছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্থান। এর মাঝে ইতিহাস বিষয়ের কোন জায়গা নেই।
আমি বললাম , জান ,জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলেছেন , ‘যে জাতি ইতিহাস ভুলে যায় সে জাতি কখনই বড় হতে পারে না’
-ও সব বড় বড় কথা । ইতিহাসে নিজের নাম লেখাতে সবাই চায়। কিন্তু কেউই ইতিহাস মনে রাখতে চায়না। এর পর ছেলে বোধহয় তার জ্ঞানের পরিধি বোঝানোর জন্য আরো বললো-পত্রিকায় কখনও স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ইতিহাসের শিক্ষক চাওয়া হয়েছে. এমন দেখেছ?
পাশেই বসা রাষ্ট্র বিজ্ঞানে পড়া ছেলের বন্ধু অবশ্য ইতিহাস জানার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বললো –……………..বৃটিশদের আগমন বুঝতে হলে তৎকালীন বিশ্ব , মোগল শাসন ও বাংলায় নবাবী শাসন সম্পর্কে জানতে হবে। পাকিস্তান আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে হলে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস জানা দরকার । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি অর্জন করতে হলে ১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে বাঙালী জাতির বিভিন্ন অন্দোলন- সংগ্রাম যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে জানার কোন বিকল্প নেই।
এবার আমার ছেলে গম্ভীর হয়ে জানাল-ইতিহাস অধ্যয়নে মানুষের মন উদার ও অসাম্প্রদায়িক হয়। ইতিহাস পাঠ করলে আমাদের মধ্যে বিশ্বজনীনতা এবং মানবপ্রেম জাগ্রত হয়। এসব জানি। পৃথিবীর অনেক দেশে নিজ দেশের ইতিহাস পড়া বাধ্যতামূলক। এটাও জানি। কিন্তু আমাদের দেশে সর্ব পর্যায়ে ও সকল বিষয়ের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক নয় । কেন নয় ? শুধু তা জানিনা। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলো না।
ছেলেরা তাদের কাজে মন দিল।
আমার মনও যেন সায় দিল –ছাত্ররা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ,বিজনেস গ্রাজুয়েট যা কিছু হতে চায় হোক, কিন্তু নিজ মাতৃভূমির ইতিহাস জানবে না -তা তো হতে পারে না।
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর লেখা কয়েকটি লাইন মনে পড়ে গেল-
“ ডাকছে কৃষ্ণপক্ষের রাত- ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?
লুট হয়ে গেল ইতিহাস, স্মৃতি, পতাকা কৃষ্ণচুড়া-
চেতনায় জ্বলে বৈরী আগুন- ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? ”
তালোড়া ও মাড়োয়ারী নিয়ে শুরু করলাম অনুসন্ধান।(ক্রমশঃ)
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২০:৫৬ ৫৬৯ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম