ইলিয়াস আলী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে-সুলতান মনসুর

Home Page » এক্সক্লুসিভ » ইলিয়াস আলী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে-সুলতান মনসুর
বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৮



সিলেটের সমাবেশে ঐক্যফন্টের নেতারাস্টাফ রিপোর্টার,বঙ্গ-নিউজঃঃগতকাল সিলেটে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক ঐক্যজোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ এর প্রথম জনসভা। এই জনসভার মধ্যে দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে দেশব্যাপী ৭ দফা দাবি আদায়ের কার্যক্রম শুরু করলেন জোটের নেতারা। আর এই ৭ দফার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও সংযুক্ত রয়েছে।

পূণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্টারি মাঠে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশে থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণকে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।

জনসভায় যেসব কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন তাদের সকলের মুখেই ছিল কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দ্রুত মুক্তি। এই দাবির সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রস্তাবিত সাত দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

বুধবার দুপুর ২টায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দাবি আদায়ের আন্দোলনে যাওয়ার লক্ষ্যে পূর্বে প্রথমবারের মতো সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশটি শুরু হয়।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশাল এই জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আরোও বক্তব্য দেন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এলডিপির মহাসচিব ডা. রেদোয়ান আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, জেএসডির নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমুখ।

সমাবেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের সিলেট কর্মসূচির সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ এবং সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। সংবিধানের ৭নং অনুচ্ছেদে রয়েছে জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু বর্তমানে জনগণের সেই মালিকানা নেই। এটা আদায় করে নিতে হবে। আমাদের ১ নম্বর দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর সাথে আরো ৬টি দাবি রয়েছে। এসব দাবির কথা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘৭ দফাকে হালকাভাবে নেবেন না। এটা অনেক মূল্যবান। এটা জনগণের হারিয়ে ফেলা অধিকার, দেশের মালিকানা ফিরিয়ে আনার দাবি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, জনগণ ক্ষমতার মালিক হবে। সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের মুষ্ঠিমেয় মানুষের উন্নয়নে উন্নয়ন হয় না। আমরা চাই, ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন। আমরা ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হবো। আমাদের বিজয় অনিবার্য।’

ড. কামাল বক্তব্যের শেষপর্যায়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।

প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সিলেটবাসী অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। আজ আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছেন। এই ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্র মুক্তির ইতিহাস।’

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে নতুন লড়াইয়ের শুরু হলো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের অধিকার। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ইভিএম দেয়া চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সময় পুরো জনসভাস্থল জুড়ে খালেদা জিয়া মুক্তি দাবির স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। তিনি বলেন, সরকার উসকানি দেবে। তাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে। আরেকবার গায়ে হাত দিলে সবাই রাস্তায় নামবে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, ভোটের লড়াই, সুষ্ঠু নির্বাচনের লড়াই।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা এবং এ জোটের সিলেট সমাবেশের সমন্বয়ক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, খেলার টিম ও রেফারি একসাথে চলতে পারে না। হয় খেলা ছাড়ুন না হয় রেফারির ভূমিকা ছাড়ুন।

তিনি বলেন, যেটি কারাগার নয় সেটিকে কারাগার বানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। সরকার ও সরকার প্রধানকে খালেদা জিয়াকে মুক্তিসহ দেশে সকল প্রকার জুলুম অত্যাচার বন্ধ করে দ্রæত নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এসময় তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করার আগে বলেন, আমি যতদিন বাঁচবো ততোদিন জনগণের সাথেই থাকবো।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে। তাদেরকে সমঝোতায় আসতে হবে। যদি সমঝোতায় না আসেন, তবে বুঝতে হবে দেশে গণতন্ত্র চান না। মানুষ এর উপযুক্ত জবাব দেবে।’

তিনি বলেন, ‘ঘুষ ও দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে। এগুলোর বিচার করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি পয়সার হিসাব নেব। তারা ক্ষমতায় এসে বিদেশে সম্পত্তি করেছে।’

এসময় তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।

নির্বাচন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার বলছে লাখ-লাখ, হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছে। তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে এত ভয় কেন?

তিনি বলেছেন, সারাদেশের মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগকে একঘরে করে দেব। রাজপথে নেমেছি আমরা, খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে ঘরে ফিরে যাব না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ছাল-বাকল দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, আপনি দ্রুত পদত্যাগ করুন। নইলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টের পাবেন। সমাবেশে দুদু বলেন, জনগণের দাবি মেনে না নিলে আপনাদের ছাল-বাকলও থাকবে না।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কেউ যদি পারেন, (এই সমাবেশের) একটি ভিডিও প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি অবাক হবেন, এতো বাধার পরেও কিভাবে এতো মানুষ হলো সমাবেশে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন জেলে। তিনি নানা রোগে আক্রান্ত। ৭৩ বছর বয়সে তাঁর জেল খাটার কথা না। দেশে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিচার হয়নি। আমরা সবাই বলছি, তাঁর (খালেদা) মুক্তি চাই। আমরা শপথ নেই, কিভাবে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারি।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকার চোরের মতো, ডাকাতের মতো ভোট ডাকাতি করছে। সিলেটের মানুষ সাহস দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করেছে। আজ আমাদের শপথ নেয়ার সময়, সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যদি বিজয়ী হই, আপনারা যদি সমর্থন করেন, তবে তিন মাসের মধ্যে দেখবেন দেশে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, চিকিৎসা খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা টালমাটাল, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কাঠাল দিয়ে আমসত্ত্ব হয় না। শেখ হাসিনার আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। শেখ হাসিনার আমলে ভোট ডাকাতি হয়।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ মুক্তি চায়। ইলিয়াস আলীসহ সকল নেতাকর্মীকে ফিরে পেতে চায়। দেশের জনগণ কখনো পরাজিত হয় না।’

বাংলাদেশ সময়: ৫:৪৭:৫০   ৬৩৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

এক্সক্লুসিভ’র আরও খবর


এস এস সি পাশের হার কমছে বেড়েছে জিপিএ-৫
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
শক্তিশালী প্রসেসরে নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনছে মটোরোলা
ভারত ৩৬টি স্যাটেলাইট স্থাপন করল একসঙ্গে !!
স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস, পরে কথিত স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে পদযাত্রা
রাশিয়ার নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সাবমেরিন!
টিকিট দুর্নীতির প্রতিবাদে রনি, সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
ট্রাকচাপায় মেয়েসহ তারা তিনজন নিহত; রাস্তায় গর্ভস্থ শিশু ভুমিষ্ঠ
রোহিঙ্গা যুবক নুর বারেক আটক ,২০ লাখ টাকা উদ্ধার

আর্কাইভ