“রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
Home Page » ফিচার » “রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
১৮ তম কিস্তি—
তালোড়া শাখায় ১১ মাস- দ্বাদশ পর্ব।
তারিখটা ১৬ই ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। টিভিতে “জীবন থেকে নেয়া “ ছবিটি পুনরায় দেখছিলাম । খাঁন আতা ঘটকের কাছে গিয়ে জানতে চাচ্ছে দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে ঐ মিলিটারী মার্কা মেয়েটির সাথে আমার বিয়ে দিলে কেন? আমার কাছে হঠাৎ মনে হল এ ছোট ভাইটি যার বিয়ের জন্য ঘটকালি করছি , যদি কোন সময় আমার কাছে একই ভাবে কৈফিয়ত চায়।পরের দিন পাশে বসা সহকর্মী মহসীন খাঁনের সাথে বিষয়টি শেয়ার করলাম তিনি জানালেন বছর পাঁচেক পরে নাকি সবার মনেই এরুপ প্রশ্ন জাগে। প্রশ্নটি অবশ্য তিনি পরিস্কারও করেছিলেন। আমি তো এত খারাপ না ,এ বিয়েটা না হয়ে যদি অন্যটা হত তবে আমার জীবন অন্য রকম হতে পারতো , আমার জীবনে তা হলো না কেন ? সবাই নাকি বিয়ের ৫/৬ বছর পর থেকে এরুপ ভাবা শুরু করে। আইটি বিশেষজ্ঞ খাঁন আরো বলেছিলেন ল্যাপটপ কেনার এক বছর পর এবং বিয়ে করার ৫ বছর পর মেয়েদের নাকি মনে হয় আর একটু অপেক্ষা করলে নতুন ভাল মডেল পাওয়া যেত।তখনই শুরু হয় অশান্তি। অতএব ঘটকালী করার আগে সাধু সাবধান। ধ্যেৎ! কম্পিউটারের সাথে মেয়েদের কি তুলনা ? কেন নয়? মহসীন খাঁন যুক্তি দেখানো শুরু করলেন- আপনি একটি কম্পিউটার পেলেন তার জন্য পরে অনেক অ্যাকসেসরীজ লাগেনা ? আপনি কম্পিউটারকে একটি ভুল কমান্ড দিলেন কম্পিউটার কি তা সারাজীবন মনে রাখে না ? আবার বিভিন্ন বাসার অনেক কম্পিউটার যখন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজেদের সংযুক্ত করে কখন তারা কিভাবে ভাবের বিনিময় করে আপনি বুঝতে পারবেন ? এসব কাদের লক্ষণ? ছেলেদের না মেয়েদের ? এখানে শুধু কম্পিউটারের বদলে বউ হবে। বলেই হোঃ হোঃ করে হেসে উঠলেন । বললেন -রসিকতা করলাম আরকি। রসিকতা করুক আর যাই করুক আমি ঘটকালি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। তবে সেদিন ঘটকালি নিয়ে অনেক কথাই হয়েছিল আমার তার সাথে-
-ঘটকালি কে আপনি যত সহজ মনে করেছেন তত সহজ নয়। পাত্র-পাত্রীর আর্থ-সামাজিক মর্যাদা, শারীরিক গঠন, গায়ের রং বা মতাদর্শ মিলিয়ে মিল-মিশ করার জটিল ও দুঃসাধ্য কাজ । ছেলের বংশ, চাকরি, লেখাপড়া দেখে সেই রকম বংশের লেখাপড়া জানা মেয়ের খোঁজ করতে হয়। সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান, জাত-বংশ, মর্যাদা, শারীরিক গঠন বা গায়ের রং মিলিয়ে বর-কনে মিল করা কিন্তু দুঃসাধ্য ব্যাপার। প্রথমে খাঁন বিষয়টি যে একটি কঠিন সাবজেক্ট তা বোঝালেন। বলে রাখা ভাল খাঁন সাহিত্যের ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন।
- তাহলে যে ছেলেটির বিয়ের দ্বায়িত্ব নিয়েছি তার কি হবে? আমি পরামর্শ চাইলাম।
-তাকে পত্রিকা দেখতে বলেন । ম্যারেজ মিডিয়া সেন্টার বা ঘটকের পাশাপাশি অনেক অভিভাবকও সন্তানের বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র বা পাত্রী চেয়ে অহরহ বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। আবার বিয়ের পাত্র-পাত্রীর জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটও চালু হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিজিট করছে। কেউ না কেউ তো এভাবে জীবনসঙ্গী খুঁজেও পাচ্ছেন।
-আমার মনে হয় ছেলেটি নিজে বউ পছন্দ করলে আমাদের ল্যাঠা চুকে যেত।?
- দেখুন সমাজে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেরা পছন্দ করে পরিবারের মতামত না নিয়ে বা পরিবারের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে যে হচ্ছে না , তা কিন্তু নয়। তবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা যেভাবে গড়ে উঠেছে, সেখানে পরিবারের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের মতো বিয়ে করা কখনো সমর্থন পায় না। শোভনও মনে হয়না।
- -আমাদের সমাজে ‘কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা’ বলে একটি কথা আছে। দেশে এমন অনেক নারীকে পাওয়া যাবে, অভিভাবক না থাকার কারণে বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে হয়নি। আমরা যদি এগিয়ে না আসি তা হলে এদের কি হবে ?
- হ্যাঁ , এটিও একটা কথা বটে। আমার অগ্নি-ঝরা প্রশ্নে খাঁনের মন যেন মোমবাতির মত গলে নরম হয়ে গেল।
দু জনে মিলে ঠিক করলাম এব্যাপরে একটি সফটওয়্যার বানানো হবে । জনাব খাঁন সফটওয়্যার ডেভলপ করবে । আমি বিজনেস লজিক দেব।
আমরা একটা ‘ফ্রিমিয়াম’ মডেল চালাবো । নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে বিনা চার্জে প্রোফাইল আপলোড করা যাবে। তারপর একটা এলগোরিদম দিয়ে সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর বয়স, পেশা , শিক্ষাগত যোগ্যতা ,জাত, শিক্ষা, আয়, গাত্রবর্ণের সঙ্গে নিজের এসব বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে নিতে হবে। ম্যাচিং হয়ে গেলে নাম মাত্র কিছু চার্জ নেয়া হবে। ব্যাংকারদের বা ছেলেমেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে তাৎক্ষণিক চ্যাটিং কিংবা নিজের প্রোফাইলের চারপাশে রঙিন বর্ডার /নকশা / অ্যানিমেশন দেয়ার মতো বৈশিষ্ট্যের জন্য সামান্য পারিশ্রমিক নেয়া হবে।
ডিভোর্সি, পঙ্গু ও যাদের মানসিক অবস্থা বিবাহের অনুকূল নয় তাদের জন্য আলাদা সাইট থাকবে।
সিদ্ধান্ত হল এ সফটওয়্যার প্রথম ব্যবহার করবে আমার বন্ধুর সেই ভাইটি।
পাশে বসে ছিলেন একজন আই টি ব্যবসায়ী । তিনি জানালেন -বাংগালী সারা জীবনে যে সম্পদ জমায় তার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ সন্তানের বিয়ের পিছনে খরচ করে। সমাজে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেরা পছন্দ করে পরিবারের মতামত না নিয়ে বা পরিবারের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে হচ্ছে বটে তবে পূর্বপরিচয় সূত্রে বর-কনের স্বেচ্ছায় বিয়ে করা আমাদের দেশে সামাজিক বিধি-বিধানের পরিপন্থী হিসাবে গণ্য হয়।তাই বৈবাহিক সার্ভিস সংক্রান্ত আইটি শিল্পের বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার সৃষ্টি হতে পারে এখানে।
পজেটিভ কথা শোনায় আমরা উৎসাহিত হলাম।
পাশে আরো বসেছিল একজন আই টি অডিটর।এতক্ষন তিনি সব শুনছিলেন । আমাদের কথা শেষ হবার সাথে সাথে তিনি বয়ান দেয়া শুরু করলেন –” বিভিন্ন অপশনের তালিকা যেন অতি দীর্ঘ না হয়। দীর্ঘ তালিকা থাকলে ওয়েবে যুৎসই পাত্র বা পাত্রী খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর ব্যাপার হবে। অনলাইন প্রোফাইল –এ বাস্তবতার প্রতিফলন থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা এর মাধ্যমে আবার প্রতারণা ঘটলে আপনারা দায়ী হবেন। সাইবার জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন। তাছাড়া বিবাহেচ্ছুদের খামাখা আপনারা খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার কাজে লাগাতে চাচ্ছেন যা নৈতিকতা বিরোধী।”
এত এত নেগেটিভ কথা শুনে এবার আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম ।
তবে কিছুক্ষণ আগে আমি খাঁন কে ফোন দিয়েছিলাম । তিনি বললেন লোকে যে যা বলার বলুক , সফটওয়্যারের যুৎসই একটি নাম পেলেই তিনি নাকি কাজ শুরু করবেন। শোনেন দেখি কথা -আগে নাম তার পরে নাকি কাম। এ রকম ডিপ্লোম্যাটিক কথা আমার একদম পছন্দ ভাল লাগে না। ডিজিটাল ঘটকালির যে একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা আমার মনে জেগেছিল তারও আজ সমাপ্তি ঘটলো।
আজ অতীত জীবনের পানে তাকিয়ে দেখছি -সামনে দাঁড়িয়ে সাহস দেবার কাউকে না পেলেও পীছনে টানার লোকের অভাব কোন কালেই আমার ছিল না।
এছাড়াও আজ হঠাৎ করে বছর ত্রিশেক আগের একটা ঘটনা মনে পড়লো । এখনকার চেয়ে আগে বোধ হয় আমি আরো একটু বেশী বোকা ছিলাম। আর আমার বুদ্ধির এ বহর সুদর্শন বন্ধু শফিকের খুব ভাল করেই জানা ছিল। আমরা দু জন বাণিজ্য মেলায় হাঁটছিলাম । হঠাৎ শফিক একটা মেয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলল মেয়েটিকে তার খুব মনে ধরেছে।তাকে সে বিয়ের প্রস্তাব দিতে চায়। এটি আমাকেই এখুনি দিতে হবে। শফিক কয়েক মাস হল তার বিয়ের জন্য কনে খুঁজছে । মনে হয় এবার আমি তার জন্য কিছু করতে পারবো। অতি সুন্দরী মেয়েটি বাঁশ দিয়ে নির্মিত একটি গোল চত্তরের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল । পায়ের স্যান্ডেলের দিকে তাকালাম-বেশ উচুঁ -হাই হিল। মুখের দিকে তাকালাম –শান্তশিষ্ট মনে হল।হাতের দিকে তাকালাম –একটা রডগোছের কি যেন দেখলাম। “বিয়ে করব আমি, তুই এত হাঁ করে গিলছিস কেন ? যা প্রস্তাব দিয়ে দেখ।” মেয়েটিকে পর্যবেক্ষনে বাঁধ সেধে বন্ধু ধমকের সুরে তাড়া দিল ।গেলাম। বন্ধুর অভিলাষ জানালাম। মেয়েটি পিছ ফিরে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দেখল।তা্র পর সামনে ফিরে মাটির দিকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমার চোখে চোখ রেখে ভারি গলায় বলল “ আমি খুব দুঃখিত।”তার পর চুপচাপ। ব্যাটসম্যান আউট হলে যেমন ভঙ্গি করে ও রকম একটি ভঙ্গি করে পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করল । ”আমি বিবাহিতা”-তার এ উচ্চারণ আমার কাছে যেন আর্তনাদের মত মনে হল। তাড়াতাড়ি ফিরে এসে বন্ধুকে সব জানালাম। “সে যে বিবাহিতা তাতে আমার কোন আপত্তি নাই ”-বেশ কিছুক্ষন ভেবে বন্ধুটি যেন নিশ্চিত হয়ে তার সিদ্ধান্ত জানাল। আমি বললাম ,”চল এখন আর একটু ঘোরাঘুরি করি। ” ঘোরাঘুরি ? কিসের ঘোরাঘুরি ? তুই মেয়েটিকে আমার যে আপত্তি নেই তা জানিয়ে আয়।’’ কথা বলার সময় শফিক এমন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল যে আমি সম্মোহিত হয়ে গেলাম ।হিতাহিত জ্ঞান যেন হারিয়ে ফেললাম। যা থাকে কপালে। মেয়েটিকে কথাটি বলে ফেললাম। না ,কাহিনীটি খুব বড় হয়ে যাচ্ছে। আর বাড়াতে চাই না। আমি আর মেলায় সেদিন ঘুরিনি। রাতে কানে হাত দিয়ে বললাম আমি আর এ জীবনে বিয়ে সম্পর্কে কোনও আলোচনাই করব না , এমনকি সেটা যদি আমার নিজের বিয়েও হয়।অতিরিক্ত আবেগের তাৎক্ষনিক বহিঃপ্রকাশ এভাবেই হয়েছিল সেদিন ।
বিয়ে পর্ব আপাততঃ থাক ।জীবনের আরো কত কি বাঁকি আছে? (ক্রমশঃ)
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৭:০৩ ৬৫৮ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)ফিচার’র আরও খবর
অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]