বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি সে দেশের রাজনীতিতে একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিল। এ বার কি তা হলে বাংলাদেশেও পরিবর্তন?সাম্প্রতিক ভোট ফলাফলের পর আওয়ামী লীগের দাবি, বিরোধীদের সাম্প্রদায়িক প্রচারের মোকাবিলা ঐক্যবদ্ধ ভাবে করা যায়নি বলেই এই হার। অন্য দিকে বিএনপি শিবিরের বক্তব্য, সরকারের ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে এ’টি জনতার রায়।
এই চাপানউতোরের মধ্যেই মনে করা হচ্ছে, সাড়ে চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। দুর্নীতি থেকে অপশাসন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি থেকে মূল্যবৃদ্ধিবিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুধু বিরোধীরাই যে স্বর চড়িয়েছেন তা নয়, দেশের মধ্যে সার্বিক জনরোষও তৈরি হয়েছে।
রাজশাহি, সিলেট, খুলনা, বরিশাল এই চারটি শহরেই মুখ থুবড়ে পড়ার পর হাসিনা সরকারের সামনে অগ্নিপরীক্ষা, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভোটের নির্ধারিত সময় এসে যাওয়া সত্ত্বেও এই দু’টি নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নীরব বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও। বিএনপি -জামাতে ইসলামি জোটের অভিযোগ, এই অবসতায় ঢাকা কর্পোরেশনে ভোট করতে ভয় পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কারণ রাজধানীর কর্পোরেশন হাতছাড়া হলে, তার প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হারার পর গত কাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘কট্টরপন্থীদের’ বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করা যায় নি। বিরোধীরা যে সাম্প্রদায়িক প্রচার করেছে, তার মোকাবিলাও ঠিক মতো করা যায়নি। তাদের আশা, যে দুর্বলতাগুলি সামনে চলে এসেছে সেগুলি সাধারণ নির্বাচনে মুছে ফেলা সম্ভব হবে। অন্য দিকে বিএনপি -র বক্তব্য, ওই ফল আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, দলবাজি এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের রায়। তাদের বিশ্বাস, নিরপেক্ষ ভাবে নির্বাচন হলে বিএনপি -জোটই ক্ষমতায় আসবে।
সরকারের সমালোচকদের কথায় পায়ের তলা থেকে মাটি আলগা হয়ে আসছে বুঝেই মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয়তাবাদের আবেগকে সামনে নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন আওয়ামী নেতারা। একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির দাবিকে কেন্দ্র করে শাহবাগের উত্তাল আন্দোলনও যে দেশের মূল সমস্যাগুলি থেকে মানুষের মনকে সরিয়ে রাখতে পারেনি, চার শহরের নির্বাচনের ফলই প্রমাণ। তিস্তা বা স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণে ভারতের অপারগতাকেও জনরোষের জন্য দায়ী করছেন সরকারের একটা মহল। এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির সাফ কথা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির খাত কোন দিকে বইবে, তা ভারতের বিদেশনীতির উপর নির্ভর করে না। সাউথ ব্লকের পরামর্শ, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নামমাত্র বা বিনা সুদে যে বিপুল ঋণ এবং অনুদান বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া হয়েছিল তার সদ্ব্যবহার করা হোক। সে দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রের হাল তা হলে অনেকটাই বদলে যাবে।
কিন্তু পরিকাঠামো উন্নয়ন দুরস্থান, গোটা বাংলাদেশ জুড়ে চলছে প্রবল বিদ্যুৎ সমস্যা। বিএনপি -র পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সরাসরি হাসিনার পরিবার এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের দিকে। শুধু বিরোধীরাই নন, গত কাল খোদ বিশ্বব্যাঙ্ক এই দুর্নীতি নিয়ে তাদের ওয়েবসাইটে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১১ এবং ২০১২ পর পর দু’বছর দু’বার বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে এই দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানানো হয়। চুক্তি বাতিল না করে এ ব্যাপাওে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হাসিনা সরকারকে অনুরোধও করা হয়। কিন্তু সরকার কিছুই করেনি।
এই অবস্থায় ভোটের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন শেখ হাসিনা। তাঁর কথায়, ২০০১ -এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে ভাবে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ক্ষমতা দখল করে গেড়ে বসেছিল, তার পরে আর কোনও অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো যায় না। আমেরিকা বা ভারতের মতো ধারাবাহিক গণতন্ত্রের দেশেও শাসক দলকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও তাই হবে। অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হবে। এ দিনও সংসদে হাসিনা বলেন, “এ বার বসলে ওরা আর নামবে না।”
অন্য দিকে বিএনপি -র অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। বিএনপি তা হতে দেবে না। নির্বাচনের জন্য তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে অনড়। এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীর একটাই প্রার্থনা, বরফ গলাতে দু’পক্ষ আলোচনায় বসুক। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার ও বিরোধী পক্ষের আলোচনায় বসা এতটাই দুর্লভ ঘটনা, যে সহসা তা হওয়ার আশা কেউই করছেন না।
কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হওয়ায় হারের মধ্যেও হাতে অস্ত্র পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের যুক্তি, নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন ভোট যে সম্ভব, এটাই তার প্রমাণ।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৩:৫৪ ৩৯৪ বার পঠিত