বঙ্গ-নিউজ ডটকম : 
সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সংশোধিত গঠনতন্ত্রে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অনুমোদন দেয়াকে অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। এনএসসি কোন প্রক্রিয়ায় এটি অনুমোদন দিয়েছে এটা স্পষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সংশোধিত নতুন গঠনতন্ত্র, বোর্ডে ক্লাব, সাবেক ক্রিকেটার ও জেলা পর্যায়ের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে সবাই সবার কথা বললেও কেউ দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা বলছে না বলে মনে করেন সাবের হোসেন। গতকাল রাজধানীর এক হোটেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
বারবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনকাঠামো পরিবর্তনকে নেতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে বিসিবির সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র করা হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে এনএসসি বিসিবিকে একটি মডেল সংবিধান দিয়ে দেয়। ২০০০ সালে বার্ষিক এজিএমের মাধ্যমে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এরপর ওই কাঠামোতে ২০০৩, ২০০৮ এবং সর্বোপরি ২০১২ সালের মার্চে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কিছু মৌলিক বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোন পদ্ধতিতে এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।’
‘২০১২ সালের সংশোধনীতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, এতে বেশ কয়েকটা বিষয় অস্পষ্ট। কোন প্রস্তাবনার ভিত্তিতে এনএসসি এই সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছে তা অস্পষ্ট। শূন্যতার মধ্যে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অনুমোদন হতে পারে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কিছু নিয়ম-নীতি আছে যা এসব সংশোধনীর অনুমোদনের ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক’, বলেন সাবের হোসেন।
এতে বোর্ডের অবস্থান কী তাও স্পষ্ট হওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক সফল এ বিসিবি সভাপতি। নতুন সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে বিসিবির অবস্থান কী? তা পরিষ্কার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবকিছু হতে হবে। বর্তমান বোর্ডে যারা আছেন তাদের অনেকের সঙ্গেই আমি কাজ করেছি। তারা গঠনতন্ত্র চায়, এটা ভালো। আমি মনে করি না এই গঠনতন্ত্র তাদের কাছ থেকে এসেছে। এতে বোর্ডের অবস্থান কী তা পরিষ্কার হওয়া উচিত। এনএসসি কোন প্রক্রিয়ায় এটি অনুমোদন দিয়েছে? আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) প্রত্যেক দেশে যে ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ক্রিকেট বোর্ড চাচ্ছে এমন নীতিমালা ১২ বছর আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে ছিল বলে জানান সাবের। একই সঙ্গে বিসিবিতে জেলা ও ক্লাব পর্যায়ে কতজন প্রতিনিধি থাকবে এটা ২০০০ সালেই বার্ষিক এজিএম সভায় নির্ধারিত হয়েছিল বলে জানান তিনি। এরপরও এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কাঠামো দাঁড় করাতে কেন দীর্ঘ ১২ বছর সময় লাগবে? এর কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছেন না সাবের হোসেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচালনার দায়িত্বভার এখন এনএসসি মনোনীত একটি অ্যাডহক কমিটির হাতে। আহম মোস্তফা কামালের নেতৃত্বাধীন বিসিবির পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য বিসিবির দায়িত্ব পালন করছেন তারা। তাদের অধীনে বিসিবির নতুন নির্বাচনে তারাই যদি প্রার্থী হন তাহলে এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন সাবের হোসেন। ‘যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন তিনিই যদি কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাউন্সিলর নির্ধারণ করে দেন তাহলে এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না’, বলেন তিনি।
সংশোধিত গঠনতন্ত্রে জেলা পর্যায়ের কাউন্সিলর নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে সাবের হোসেন জানান, ‘আগের নিয়মানুসারে সংশ্লিষ্ট জেলার ক্রিকেটার বা সংগঠক জেলা পর্যায়ের কাউন্সিলর হতে পারতেন। এ ক্ষেত্রে ক্রিকেট নিয়ে কিছু সময় (৩ বছর) কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে তাদের। নতুন নিয়মানুযায়ী এক জেলার লোক আরেক জেলার কাউন্সিলর হতে পারবেন। তাহলে তো এনএসসিই তাদের নিয়ম ভঙ্গ করবে।’
নতুন নিয়মানুযায়ী প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে সুপার লিগ খেলুড়ে ক্লাবগুলোর দু’জন করে কাউন্সিলর রাখার বিধানটিও অযৌক্তিক বলে মনে করেন সাবের হোসেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদসহ পৃথিবীর কোনো ক্লাবে এমন নিয়ম নেই বলে জানান তিনি।
ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে সাবেক এ বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘ক্রিকেটে রাজনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া যাবে না। ক্রিকেট সরকারের ওপর নির্ভরশীল নয়। আবার সবকিছু আইসিসির নিয়ম অনুসারেই করতে হবে তা-না। ৫-১০ বছর আমাদের ক্রিকেটকে আমরা কোথায় দেখতে চাই-এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এর জন্য ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই।’
প্রসঙ্গত, বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধন কেন অবৈধ হবে না এই মর্মে অতিসম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ওপর রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। এ ব্যাপারটি আদালতে গড়ানোকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে সাবের হোসেন বলেন, ‘এসব ব্যাপারে আমরা আদালতে যাব কেন। আদালতে যাওয়া মানে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই। এটা অপমানজনক না হলেও দুঃখজনক। এ ব্যাপারে সবাইকে একমঞ্চে দাঁড়াতে হবে। এই কাজটি বোর্ডকেই করতে হবে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরে যাওয়ার যথার্থতা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে ওখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে আপস করা ঠিক হবে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকলে পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশের না যাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। এটা বিশ্বাস করতে হবে দক্ষিণ এশিয়া ক্রিকেটের একটি বড় বাজার।’
‘এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত্ স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। ওয়ানডে ও টেস্ট স্টেটাস পাওয়ার মতো আমাদের লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং লক্ষ্য অনুসারে কাজ করতে হবে। আমাদের বর্তমান বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ সবাই গণতান্ত্রিক ও ক্রিকেটানুরাগী। তাদের দ্বারা অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক কিছু হবে না বলে আমি মনে করি। আলোচনার মাধ্যমেই তারা সবকিছু ঠিক করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাবের হোসেন চৌধুরী। তার সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওয়ানডে (১৯৯৭) ও টেস্ট (২০০০) স্টেটাস অর্জন করে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:০৬:৩৩ ৬৭৭ বার পঠিত