বঙ্গ-নিউজঃছুদিন আগেও এখানে স্কাউট-রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা যত্রতত্র সড়ক পারাপার না করতে পথচারীদের সচেতন করেছেন। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন নেই। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মহাখালী মোড়ে। ছবি: সাজিদ হোসেন
কিছুদিন আগেও এখানে স্কাউট-রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা যত্রতত্র সড়ক পারাপার না করতে পথচারীদের সচেতন করেছেন। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন নেই। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মহাখালী মোড়ে। ছবি: সাজিদ হোসেন
• শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকারি সংস্থা বলেছিল তাদের চোখ খুলে গেছে
• চোখ এখন অনেকটাই বন্ধ
• রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলাও ফেরেনি।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকারি সংস্থাগুলো বলেছিল, তাদের চোখ খুলে গেছে। আড়াই মাস পর সড়কের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলে যাওয়া চোখ এখন অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কে নৈরাজ্য বন্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও সরকারের অন্যান্য সংস্থা যেসব উদ্যোগের কথা বলেছিল, সেগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলাও ফেরেনি।
বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে শুধু রাজধানীতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২৪টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২১৫ জন।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর সড়কে চলা অনিয়ম তাড়াতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গত ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে নানা পরিকল্পনার কথা জানান। সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। কিন্তু মাসের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নিজেই বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফলতা আসেনি।
ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি কমিটি করা হয়। গত ১৬ আগস্ট কমিটি ১৭টি নির্দেশনা জারি করে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাতটি নির্দেশনা ছিল দ্রুত কার্যকর করার মতো। এর মধ্যে রয়েছে বাস থেকে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ করা। চলাচলের সময় অধিকাংশ বাসের দরজা বন্ধ রাখা। পুলিশ কমিশনারের উদ্যোগ আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে করা কমিটির স্বল্পমেয়াদি নির্দেশনাগুলো একই রকম।
গতকাল রোববার রাজধানীর মিরপুরের টেকনিক্যাল, শ্যামলী, সার্ক ফোয়ারা, শাহবাগসহ ছয়টি মোড় ঘুরে দেখা যায়, বাস থেকে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ হয়নি। বেশির ভাগ চলন্ত বাসের দরজা খোলা। তবে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাস থামার জায়গা চিহ্নিত করে নির্দেশনা লাগিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। গতকাল বেলা একটা থেকে সোয়া একটা পর্যন্ত সার্ক ফোয়ারা মোড়ে (ফার্মগেটমুখী অংশে) ২২টি বাস পুলিশের নির্দেশিত জায়গার ৩০ ফুট আগেই যাত্রী-ওঠানো-নামানো করেছে। একটু দূরেই দুজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে ছিলেন।
নানা কর্মসূচির পরও রাস্তায় ফেরেনি শৃঙ্খলা। জেব্রা ক্রসিং পেরিয়ে গাড়ি। এর মধ্য দিয়েই চলতে হচ্ছে পথচারীদের। গতকাল বেলা দুইটায় বিমানবন্দর সড়কের শেওড়া এলাকায়। প্রথম আলো
নানা কর্মসূচির পরও রাস্তায় ফেরেনি শৃঙ্খলা। জেব্রা ক্রসিং পেরিয়ে গাড়ি। এর মধ্য দিয়েই চলতে হচ্ছে পথচারীদের। গতকাল বেলা দুইটায় বিমানবন্দর সড়কের শেওড়া এলাকায়। প্রথম আলো
তবে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীর হেলমেট ব্যবহারের নির্দেশনা অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারের প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা বা হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ ঘোষণার পর বেশ কিছু পথে তা বন্ধ রয়েছে।
পুলিশের নির্দেশনায় বাসের ভেতরে দৃশ্যমান দুটি জায়গায় চালক ও চালকের সহকারীর ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর এবং মোবাইল ফোন নম্বর প্রদর্শন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। গতকাল রাজধানীর চারটি রুটের ২০টি বাসে ওঠে দেখা যায়, কোনো নির্দেশনাই মানা হচ্ছে না।
পুলিশ কমিশনারের ঘোষণা অনুযায়ী গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে ক্যান্টনমেন্টের জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত ‘মডেল করিডর’ পুরো চালু হয়নি। এই পথের কয়েকটি পয়েন্টে স্বয়ংক্রিয় সংকেতবাতি জ্বললেও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা হাতের ইশারাতেই এখনো যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন।
গত ১ আগস্ট থেকে ২০ অক্টোবর ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করায় পুলিশ রাজধানীতে মামলা করেছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক নিরাপদ করতে সরকার নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। সড়কের নৈরাজ্য দেখে মনে হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা যে চোখ খুলে দিয়েছিল, তা আবার বন্ধ হয়ে গেছে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে শুধু বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে হবে না, জবাবদিহির জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪০:৫০ ৪৭২ বার পঠিত #চালকের লাইসেন্স নম্বর এবং মোবাইল ফোন নম্বর প্রদর্শন নিশ