বঙ্গ-নিউজঃ উৎসবের বাজির শব্দে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ট্রেনের হর্ন। সতর্ক ছিলেন না লেভেল ক্রসিংয়ের কর্মীও। শেষ মুহূর্তে ট্রেনচালকও গতি কমাতে পারেননি। উদ্যোক্তারাও কোনোভাবে সতর্ক ছিলেন না।
ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তে উঠে আসছে এমনই একাধিক কারণ, যে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ৬০ জনের।
দুর্ঘটনার পর থেকেই শোকে থমথমে গোটা এলাকা। নিহত ৬০ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মরদেহ শনাক্ত করা গেছে। অধিকাংশ দেহই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
তদন্তে উঠে এসেছে— রেললাইনের ওপর থাকা অধিকাংশ মানুষই মোবাইলে রাবণপোড়ার ছবি তুলছিলেন। ফলে তাদের নজর এবং মনোযোগ সেদিকেই ছিল। লাইনে ট্রেন আসতে পারে, এটা কারো মাথায় ছিল না। পেল্লাই আকারের রাবণ যখন পোড়ানো শেষ হয়, তখন তা নিচে ভেঙে পড়ে। তাছাড়া প্রচুর বাজি ফোটানোয় আগুনের ফুলকি ছিটকে আসছিল। তা থেকে বাঁচতেও অনেকে রেললাইনে উঠে পড়েন। সবার নজর ছিল হয় জলন্ত রাবণের দিকে, নয়তো মোবাইলের স্ক্রিনে। তাই আচমকা ট্রেন চলে আসায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন সকলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিষে দিয়ে চলে যায় ট্রেন।
অমৃতসরে দুর্ঘটনা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা
দুর্ঘটনাস্থলের ৩০০ মিটার দূরেই রয়েছে একটি লেভেল ক্রসিং। ট্রেন যাতায়াতের সময় রেলকর্মীরা চালককে সবুজ সঙ্কেত দেন। সামনের রেললাইনে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে চালককে সতর্ক করার সিগন্যালও দেওয়া হয়। লেভেল ক্রসিং থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে ট্রেন ছুটেছিল। কিন্তু লেভেল ক্রসিংয়ের এত কাছে লাইনের ওপর এত মানুষ থাকলেও সেখানকার কর্মীরা কেন চালককে সতর্কবার্তা দিলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দুর্ঘটনার পর লুধিয়ানা স্টেশনে ট্রেন পৌঁছনোর পরই চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন পাঞ্জাব পুলিশের কর্মকর্তারা। চালক জানিয়েছেন, তাকে ‘অল ক্লিয়ার’ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। লাইনের ওপর এত লোক দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তা ভাবতেই পারেননি তিনি। যখন কাছাকাছি চলে এসেছে, তখন আর ব্রেক কষে দাঁড় করানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না বলে তিনি দাবি করেছেন।
রেললাইনের ধার বরাবর অনেক সময় লাইনম্যান থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের কেউ ছিলেন কি না তা জানা যায়নি। লাইনের ওপর এবং আশেপাশে প্রায় ৭০০ লোক জড়ো হয়েছিলেন, তার খবর চালক বা লেভেল ক্রসিংয়ের কর্মীর কাছে তারাও কেন দিতে পারেননি, উঠছে সে প্রশ্নও।
দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে
রাবণ পোড়ানোর অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তথা কাউন্সিলরের ছেলে সৌরভ মিঠু মদান। এর আগে ওই এলাকায় কখনও এ ধরনের অনুষ্ঠান হয়নি। রেললাইনের এত কাছে হলেও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে আগত মানুষজনকে সতর্ক করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও পাঞ্জাবের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেত্রী নভজ্যোৎ কউর জানিয়েছেন, প্রতি বছরই সেখানে রাবণ দহন অনুষ্ঠান হয়।
রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি জানিয়েছেন, রেল লাইনের এত কাছে অনুষ্ঠান হলেও তাদের কিছু জানানো হয়নি। ফলে রেলকর্মীদের কাছে কোনো বার্তা ছিল না।
অনুষ্ঠানের অনুমতি কি নেওয়া হয়েছিল? নাকি কাউন্সিলরের ছেলের অনুষ্ঠান বলে সেসবের প্রয়োজন পড়েনি? রেললাইনের ধার ঘেঁষে রাবণ দাহের মতো একটা অনুষ্ঠানের কেন অনুমতি দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৪:৩৮ ৪৪৯ বার পঠিত #উৎসবের বাজির শব্দে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ট্রেনের হর্ন।