৫ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করতে না পেরে সভা বর্জন করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার
Home Page » জাতীয় » ৫ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করতে না পেরে সভা বর্জন করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার
বঙ্গ-নিউজ:সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে করণীয় সম্পর্কে ৫ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করতে না পারায় নির্বাচন কমিশনের সভা বর্জন করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আজ সোমবার (১৫ অক্টোবর) ৩৬ তম কমিশন সভা শুরুর পাঁচ মিনিট পর কমিশনের বিরুদ্ধে বাক স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ তুলে সভাস্থল ত্যাগ করেন। সোমবার দুই দফায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় একাদশ জাতীয় সংসদের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশীদারিত্বমূলক করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা শিরোনামে আমি যা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম নির্বাচন কমিশন সভায় আমাকে তা উপস্থাপন করতে দেয়া হয়নি। অথচ বিগত ৮ অক্টোবর কমিশন সচিবালয় আনঅফিসিয়াল (ইউও) নোটের মাধ্যমে কমিশন সভায় তা উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আমাকে প্রথমে প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করতে বলে পরবর্তীতে আবার উপস্থাপন করতে না দেয়ায় আমি অপমানিত বোধ করেছি।
ইসি সূত্র জানায়, মাহবুব তালুকদার ব্যক্তিগত উদ্যোগে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে কিছু প্রস্তাব তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল জাতীয় নির্বাচনে সেনা বাহিনী কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে তা আগ থেকেই নির্ধারণ করা, অংশীজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপে আসা সুপারিশগুলো নিয়ে তফসিলের আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ইসির হাতে নেওয়া ইত্যাদি।
সভায় বলা হয়, কমিশন সভায় ব্যক্তিগত মত নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। আলোচনার সুযোগ না পেয়ে মাহবুব তালুকদার সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেন। এর আগে ইভিএমের বিরোধীতা করে গত ৩০ আগস্টের সভাও বর্জন করেছিলেন মাহবুব তালুকদার।
সূত্র জানায়, মাহবুব তালুকদার নিজের দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট বৈঠকে পড়ে শুনান। তাতে তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় পর্যালোচনা’ শিরোনামে তার বক্তব্য গতকালের সভায় উপস্থাপন করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে একটি আনঅফিসিয়াল (ইউও নোট) দিয়েছিলেন।
মাহবুব তালুকদার বলেন, গত বছরের ৩১ জুলাই থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ইসি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল। সবার সুপারিশ একত্রিত করে একটি বই প্রকাশ করে ইসি। কিন্তু এসব নিয়ে আজ পর্যন্ত কমিশনের সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। সংলাপের কার্যকারিতা না দেখে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি পর্যালোচনা করেন এবং সংলাপের সুপারিশের আলোকে প্রস্তাবগুলো লিখে কমিশন সভায় পেশ করার জন্য কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ অক্টোবর কমিশন সচিবালয়ের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়, এই প্রস্তাবগুলো ১৫ অক্টোবর কমিশনের সভায় উত্থাপন করার জন্য সিইসি তাকে অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু মাহবুব তালুকদার এই প্রস্তাবগুলো যাতে কমিশনের সভায় উপস্থাপন করতে দেওয়া না হয় সেজন্য তিনজন নির্বাচন কমিশনার এক ও অভিন্ন ভাষায় আলাদা আলাদা চিঠি লিখে সিইসিকে অনুরোধ জানান। সিইসিও অন্য কমিশনারদের সঙ্গে একমত হওয়ায় তার প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করতে দেওয়া হয়নি।
নোট অব ডিসেন্টে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সভায় আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেওয়ায় তাদের অভিন্ন অবস্থান আমাকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। বাক প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে ন। এমতাবস্থায় অনুন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্টট প্রদান করছি এবং এর প্রতিবাদ স্বরূপ নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করছি। পরে বিকেলে নিজ কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমাকে প্রথমে প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করতে বলে পরবর্তীতে আবার উপস্থাপন করতে না দেয়ায় আমি অপমানিত বোধ করেছি।
মাহবুব তালুকদারের ৫ প্রস্তাব:
সেনা মোতায়েন: মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে বাদ দেওয়ায় এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী নির্বাচনে কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, তাদের কার্যপরিধি আগেই নির্ধারিত হওয়া উচিত। এজন্য অতীতের নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম মূল্যায়ন করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাদের কিভাবে ব্যবহার করা যায় তা ঠিক করতে হবে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন: এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে ইসি উদ্যোগ নিতে পারে। এজন্য আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। এতে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা তৈরি করতে না পারলেও নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে অবদান রাখা যাবে সংবিধানে এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ঠ কিছু উল্লেখ না থাকলেও সংবিধানের স্পিরিট হচ্ছে, গণতন্ত্রের জন্য অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। ইসি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসলে অনেক কঠিন সমস্যারও সমাধান হতে পারে।
নির্বাচনে নিরপেক্ষতা: মাহবুব তালুকদার তার প্রস্তাবে বলেন, অতীতে নির্বাচনগুলোতে নিরপেক্ষতা ভঙ্গের কারণে ইসি পুলিশ ও প্রশাসনের কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। নির্বাচনে নিরপেক্ষতা অর্জন শুধু ইসির বিষয় নয়। এটি সরকারের ভূমিকার উপরও নির্ভর করে। সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর হলেই কেবল ইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল যে সুবিধা ভোগ করছে বিরোধী দল সংবিধানে দেওয়া অধিকার তুলনামূলকভাবে তেমন ভোগ করতে পারছে না। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের কমিটি ধরে ধরে মামলা দায়ের বা গায়েবি মামলা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ধারণা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তফসিল ঘোষণার আগে ইসির কার্যকরভাবে কিছু করার সুযোগ না থাকলেও সব পক্ষের প্রতি সম আচরণের স্বার্থে ইসি বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর করতে পারে।
ইসির সক্ষমতা বাড়ানো: সংলাপে অনেকগুলো দল ইসির সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিল। এ বিষয়ে মাহবুব তালুকদার তার প্রস্তাবে বলেছিলেন, আইনগতভাবে ইসির ক্ষমতা যথেষ্ঠ। কিন্তু ক্ষমতা থাকা আর ক্ষমতার প্রয়োগের সক্ষমতা থাকা ভিন্ন কথা। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসি অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না। এর প্রধান কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাগজপত্রে ইসির অধীনে ন্যস্ত হলেও বাস্তবে কমিশন তাদের ওপর খুব একটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিষয়টি খুবই স্পষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিরাও ইসির দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখিয়েছে। সংলাপের সুপারিশে অংশীজনদের অনেকে নির্বাচনকালে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি ইসির অধীনে ন্যস্ত করার কথা বলেছেন। বিষয়টি বিতর্কমূলক। তবে বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। ইসির কাছে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকলে জাতীয় নির্বাচনে জনগণের আস্থা বাড়বে এবং অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে তা সহায়ক হবে।
সরকারের সঙ্গে সংলাপ: সংলাপে আসা কিছু সুপারিশ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে বলে দেখা গেছে। এর মধ্যে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ও সুপারিশ রয়েছে যা সরকারি সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য মনে হলে তফসিল ঘোষণার আগেই ইসির উচিত সরকারের সঙ্গে সংলাপ করা। জনমনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের আস্থা তৈরি করতে সরকার ও ইসির একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনকে জনগনের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রত্যেক ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারেন এই নিশ্চয়তা দেওয়ার মাধ্যমে ইসির আস্থা অর্জন সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৭:৩৫ ৪৪১ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)জাতীয়’র আরও খবর
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]