বঙ্গ-নিউজ: এবছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নাদিয়া মুরাদ। তিনি এ পুরস্কার পান যৌন সহিংসতাকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করায়। কিন্তু আপনিকি জানেন কে এই নাদিয়া মুরাদ ?
যৌন নিপীড়নের শিকার হাজার হাজার নারী ও তরুণীকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেলেন তিনি।
মুকওয়েগে কঙ্গোর একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং তিনি বুকাভু শহরের পূর্বাঞ্চলে প্যানজি নামের একটি হাসপাতালে যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের চিকিৎসাসেবা দেন। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালটি প্রতি বছর হাজার হাজার যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের চিকিৎসা দেয়। তাদের মধ্যে অনেকের অস্ত্রপাচারেরও প্রয়োজন পড়ে। অপরদিকে, মুরাদ ইরাকে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি এবং বিভিন্ন দেশের শরণার্থী নারীদের আইনজীবী।
কিন্তু নাদিয়া যে জীবন তিনি পার করে এসেছেন, সেটি গা শিউরে উঠার মতই। উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন আইএস এই তরুণীকে যৌন দাসী বানিয়ে চালানো হয়েছে নির্যাতন।
এক পর্যায়ে বেঁচে থাকার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন ইরাকের ইয়াজেদি এই তরুণীকে। পরেই সিদ্ধান্ত নেন ঘুরে দাঁড়ানোর। ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসেন আইএসের ডেরা থেকে। পরে বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন ইসলামী খেলাফতের নামে কী নৃশংতা চালাচ্ছে আইএস। বই লিখে নিজের পাশাপাশি বহু ভুক্তভোগীর কথা তিনি তুলে ধরেন সেই বইয়ে।
ইরাকের ইয়াজেদি সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারীকে বন্দি করে আইএস। তাদের মধ্যে ছিলেন নাদিয়া। তাদের সবাইকেই যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার অথবা বাজারে নিলামে বিক্রি করে দেয় আইএস। সেই ভয়াবহ জীবনের কথা উল্লেখ আছে নাদিয়ার আত্মজীবনী ‘দ্য লাস্ট গার্ল’য়ে।
সেই বইয়ে নাদিয়া তার সংগ্রামের দিনগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। আর যেন কোনো নারী ধর্ষণের শিকার না হন সেইজন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।
আইএসের ডেরায় নরকযন্ত্রণার বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে নাদিয়া বলেন, ‘এ ঘটনা আমি ইচ্ছাকৃতভাবে বলেছি, তা নয়। বরং কাউকে না কাউকে লোমহর্ষক এই ঘটনা বলতেই হতো।’
নাদিয়া জানান, ২০১৪ সালে তাদের গ্রামে ঢোকে আইএস। তারা তার ছয় ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পরে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী নারীদের সঙ্গে তাকে বাসে করে মসুল শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এই যাত্রা পথেই জঙ্গিরা শ্লীলতাহানি ও যৌন হয়রানি করে।
নাদিয়া বলেন, ‘নরক থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ধরা পড়ে গিয়েছিলাম। ধরা পড়তেই চলে গণধর্ষণ। ভেঙে পড়িনি। আমার মতোই হাজারো মহিলা জঙ্গিদের কব্জায় ছিল, এটাই আমাকে সাহস জুগিয়েছিল। নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে থাকলাম এক দিন মুক্ত হবই।’
সেই সুযোগও এসে গেল এক দিন। এক জঙ্গি দরজা না আটকেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগান নাদিয়া। সোজা দৌড়। আর পেছনে ফিরে তাকাননি।
নাদিয়া বলেন, ‘ধরা পড়লেই মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সাহসে ভর করে বেরিয়ে পড়েছিলাম। অন্ধকার রাস্তা ধরে বহু ক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে একটা বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় চাই। সেই পরিবারই তাকে মসুল থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।’
পরে ইরাক থেকে পালিয়ে ২০১৫ সালে জার্মানির শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন নাদিয়া। জানান, বহু ইয়াজেদি নারী এখনও আইএস জঙ্গিদের কবলে।
‘জানি কী দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তারা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আজ সেই সব মেয়েদের কাহিনি তুলে ধরছি’-বইয়ের নানা কাহিনি তুলে ধরে বলেন নাদিয়া।
বর্তমানে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই নোবেলজয়ী। হতে চান একজন মেকআপ আর্টিস্ট। নিজের একটা স্যাঁলো খুলতে চান। আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে চান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৮:২৭ ৫৭৪ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম