এস এম শাকিল আহমাদ, ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:- শত বছরের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচ ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তির পথে যাওয়ার সঙ্কায় হতাশ ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের জনগণ। বিগত ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময় থেকে জাতী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে উৎসব আমেজে মেতে উঠতে একই কাতারে দাঁড়িয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসব ভাগাভাগি করে নেওয়া মানুষ গুলো এখন আতঙ্কিত অস্ত্রের ঝনঝনানীতে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূঁজা উৎযাপনের পাশাপাশি যুগযুগ ধরে একই দিনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কুমার নদে অনুষ্ঠিত হত নৌকা বাইচ। কিন্তু, নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সোমবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) দিনভর ট্রলার ও স্পিডবোটে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিতে দেখা যায় কিছু উঠতি বয়সের যুবকদের। তবে বহিরাগতদের সাথে স্থানীয় কিছু যুবক থাকতে পারে বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই। নদে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান না থাকায় দিনশেষে আনন্দ উল্লাসে মহড়া দেওয়া ট্রলারের সাথে আরেক ট্রলারের সংঘর্ষে অকালে প্রাণ হারাতে হয় ৮ম শ্রেণীতে পড়–য়া ছাত্র নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের জিকাখুলি গ্রামের নুরে আলমের ছেলে সোহান খানের (১৪) এমনটাই মন্তব্য করেছেন বাইচ দেখতে আসা উৎসুক জনতা। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাংসদ কাজী জাফর উল্লাহ্ এবং বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) মধ্যে কাকে প্রধান অতিথি করা হবে এ নিয়ে টানাপড়ন ? নাকি দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে পদ্মা সেতু ও সড়কের বৃহৎ কাজ সম্প্রসারণে নদী গর্ভে বালু ভরাট থাকায় কুমার নদে অনুষ্ঠিত হলো না ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ ? এই প্রশ্ন উঠে আসছে জনসাধারণের মাঝে বারং বার।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা পূঁজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি বাবু জগদীশ সাহা বলেন, নদী গর্ভে বালু ভরাট থাকায় ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ্’কে মুঠোফোনে অবগত করে মতামত জানতে চাইলে জরুরী মিটিংয়ে থাকায় তাঁর এপিএস মামুনুর রশিদ মামুন সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর জননেতা কাজী জাফরউল্লাহ’কে পূঁজা উৎযাপন কমিটির পক্ষ থেকে নৌকা বাইচের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। তখন সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সফলভাবে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছিল। কয়েকদিন পূর্বে বাবলাতলা হাঁট সংলগ্ন স্থানেও সুন্দরভাবে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ভাঙ্গায় নৌকা বাইচ না হওয়ায় দূঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, মাদারীপুরের শিবচর ও মাওয়া ঘাট থেকে স্পিডবোট গুলো আসে, যারা প্রকাশ্য দিবালোকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে তাদের কৃতকর্মের জন্য তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সে সাথে প্রশাষণের কঠর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে এএসপি (ভাঙ্গা সার্কেল) গাজী রবিউল ইসলাম বলেন, গত বছর শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্বকর্মা পূঁজা ও নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার নৌকা বাইচ না হওয়ায় নদে পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি, তবে মেলায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। অপ্রত্যাশিত ঘটনায় যারা জরিত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৫:৫৮ ২৫৪৯ বার পঠিত