বঙ্গ-নিউজ: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় দেশের জনগণ সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের অর্পিত সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতা অনুযায়ী সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম গ্রহণ করবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।
বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য জনবলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহ’র প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ পর পর দু’বার সরকার গঠন করার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পূর্বে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অনেক তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা যায় যে, পরোক্ষভাবে দেশী ও বিদেশী কিছু লোক ও সংস্থা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাই জাতির পিতা হত্যার ব্যাপারে অন্যান্য পরিকল্পনাকারীদের সনাক্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে এবং আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সকল প্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এখনও যে সব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।
তিনি জানান, পলাতক আসামী নূর চৌধুরী কিভাবে কানাডায় বসবাস করছেন সে সম্পর্কে তথ্য দিতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। পলাতক আসামী রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে ক‚টনৈতিক ও আইনি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পলাতক আসামীদের ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স কাজ করছে। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এ্যালার্ট জারী করা হয়েছে।
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত ৯ দফা দাবির অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে, যা সংসদের চলতি অধিবেশনে উপস্থাপিত ও বিবেচিত হবে। এ আইনে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ঘাতক বাস দুটি চালক, হেলপার, মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয়কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের প্রতি আমি অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দেবার পর পরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া চার বছর মেয়াদী ন্যাশনাল রোড সেইফটি এ্যাকশন প্লান ২০১৭-২০ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া একটানা পাঁচ ঘন্টার বেশি গাড়ি না চালানোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুরপাল্লার বাসে দুইজন চালক রাখার জন্য মালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, কোনো অবস্থাতেই স্পেসিফিকেশন বহিভর্‚ত মোটরযান রেজিস্ট্রেশন না দেয়া, ত্রটিপূর্ণ মোটরযানের ফিটনেস নবায়ন না করা এবং স্পেসিফিকেশন বহিভর্‚ত বাস ও ট্রাকের বডি নির্মাণের কারখানাগুলো পরিদর্শন করে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মহাসড়কে চলন্ত গাড়ির স্পিড কন্ট্রোলের বিষয়ে দূরপাল্লার বিভিন্ন বাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার এবং ট্রাকের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।
ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য যতই ব্যবস্থা নেই না কেন, দেশের মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে কিছুই হবে না। অনেকেই ফুটওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস ব্যবহার না করে ছোট শিশুকে নিয়ে চলন্ত গাড়ির মধ্যে দিয়েই রাস্তা পারাপার হতে দেখা যায়। এ সময় দ্রত যানবাহন কীভাবে হঠাৎ করে থামবে? সে বিষয়টিও দেখতে হবে। এ কারণেই দূর্ঘটনা হয়। এখানে ড্রাইভারের দোষ কতটুকু আর ট্রাফিক আইন না মেনে যিনি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন তার দোষ কতটুকু- তাও বিবেচনায় আনা দরকার।
তিনি বলেন, কোথাও দূর্ঘটনা না হলে আইন নিজের হাতে না নিয়ে ড্রাইভারকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা উচিত। অনেক সময় ড্রাইভার প্রাণের ভয়ে গাড়ি না থামিয়ে প্রাণের ভয়ে দ্রত গাড়ি টেনে চলে যান। এতে অনেকের প্রাণে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এ ঘটনায় থাকে না। কারণ ড্রাইভারকে অনেক সময় মারতে মারতে মেরেই ফেলা হয়। তাই আইন কারোর হাতে তুলে নেয়া উচিত নয়। আর অনেকেরই রাস্তা পারাপারে জনসচেতনার বড়ই অভাব দেখা যায়। তাই সবার প্রতি অনুরোধ ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। আমরা জড়িত ড্রাইভারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু যারা যত্রতত্রভাবে রাস্তা পার হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা না নিলে তো সড়ক দূর্ঘটনা বন্ধ হবে না।
সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ’র প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসন ও নিরাপড় সড়ক নিশ্চিতকল্পে এলিভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এবং ঢাকা ইষ্ট-ওয়েষ্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকা শহরে রিং রোড করারও পরিকল্পনা আছে। এ রিং রোড এলিভেটেড করা হবে। বিভিন্ন স্থানে স্থানে পরিকল্পিতভাবে ল্যান্ডিং-এর ব্যবস্থা থাকবে। স্থাপিত এলিভেটরগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনে সংযোগ দেয়া হবে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ নদীতে নৌপথ এবং এরই পাড় ধরে ভবিষ্যতে রিং রোড করে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ঢাকার যানজট নিরসন সম্পর্কে স্বতন্ত্র দলীয় সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বহু দেশের রাজধানীতেই যানজট হয়। দেশ দ্রত উন্নত হচ্ছে, দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছেন ও আর্থীক স্বচ্ছলতা বাড়ছে বলেই তারা গাড়ি কিনছে। গাড়ি রাস্তায় বেশি ব্যবহার হচ্ছে বলেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যানজট নিরসনে রাজধানীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও গোটাকে ঢাকাকে ঘিরে রিং রোড নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি সুগভীর ও সুদৃঢ় হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য আমাদের সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক বাংলাদেশী কর্মরত।
সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ’এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’- এর আলোকে আগামী তিন বছরের মধ্যে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ’রূপকল্প-২০৪১’ প্রণয়ন করে জাতির সামনে উপস্থাপন করবো।
এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী ২৩ বছরের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে দেশকে নিয়ে যাওয়া। রূপকল্প-২০৪১ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনীয় এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদ। রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানো হবে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপনের উপর জোর দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৪:৩৮ ৫৫৭ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম