ধর্মের বিষয়ে সবাই চিন্তা করি।
কিন্তু বাস্তবে ধর্ম কি সবাই কি সেটা সত্যিই বুঝতে পারি!! বাস্তবে ধর্ম কাকে বলে? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, “ধর্ম। যা মানুষকে অন্য মানুষের সঙ্গে, সমস্ত সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাঁচার জ্ঞান দেয় তাই ধর্ম। ধর্ম মানুষের সমস্ত সংঘর্ষ বিনাশ করে। যেখানে প্রেম আছে সেখানে সংঘর্ষ থাকতে পারেনা। যেই ক্ষণে সংঘর্ষ হয় সেই ক্ষণে সমস্ত প্রেম বিস্মৃত হয়ে যায়। তারপর ইচ্ছা জাগে, অহংকার জাগে, ক্রোধ জাগে, কিন্তু প্রেম আর জাগেনা। কারণ যেখানে প্রেম জাগ্রত থাকে সেখানে সমস্ত সংঘর্ষ, বিবাদ, বিতর্ক বিনষ্ট হয়ে যায়। এই প্রেম যখন সমস্ত বিশ্বের জন্য জেগে উঠে, কেবল মানুষ নয়, পশুপক্ষীদের জন্য, ঘাসের কণার জন্যও যদি হৃদয়ে স্নেহ থাকে তবে ক্রোধের কোন কারণ থাকেনা। এক ব্যক্তির হৃদয়ে অন্য ব্যক্তির জন্য যে প্রেম থাকে সে প্রেম যদি সমস্ত সৃষ্টির জন্য জাগে তবে তাকে করুণা বলে। অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বকে গ্রহণ করা। সব কিছুর জন্য কেবল স্নেহ আর স্নেহ। কোথাও কারও প্রতি হীন ভাব নয়। করুণাই হল বাস্তবে সমস্ত ধর্মের সার। ধর্ম যদি বৃক্ষ হয় তবে করুণাই তার মূল, তার শিকড়। কিন্তু বার বার এমন পরিস্থিতি উপস্থিত হয় যখন মানুষ তার ধর্মের মূলকেই ভুলে গিয়ে কিছু নিয়ম, কিছু পরম্পরাকে গোঁড়াভাবে চেপে ধরে রাখে, আর করুনাকেই ভুলে যায়। তখন এই জগৎ ভরে উঠে সংঘর্ষে, ইর্ষায়, শোষণে, ক্রোধে, বিবাদে অর্থাৎ অধর্মে। ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির স্নেহ হয়তো থাকে কিন্তু সমগ্র বিশ্বের জন্য স্নেহ থাকেনা হৃদয়ে। এ জগতে করুনা থাকেনা।” বিভিন্ন পরম্পরা বা প্রথা যে ধর্মের আধার নয়, ধর্মের আধার যে জগতের প্রতি স্নেহ আর করুনা তা শ্রীকৃষ্ণের কথায় স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। কিন্তু আমরা শত শত বছর ধরে সতীদাহ, বর্ণ প্রথার মত বহু পরম্পরাকেই ধর্মের আধার মনে করেছি। সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। তাই সেটা নিয়ে আলোচনার এখন প্রয়োজনীতা কম। কিন্তু বর্ণপ্রথা এখনও চালু রয়েছে তাই এই বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণ কি বলেছেন তা জানা আবশ্যক। তিনি বলছেন, “জন্ম নয় গুণ-কর্মই বর্ণভুক্তির নির্ধারক” শুত পুত্র হওয়ায় সমাজ কর্ণকে সবসময় অপমান করেছে, তার সম্ভাবনাকে প্রতিনিয়ত নষ্ট করেছে, তার সামর্থ্যকে সম্মান দেয়নি, তার স্বপ্নকে স্বীকার করেনি। সমাজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনে মহাবীর কর্ণ বাসুদেব কৃষ্ণকে যখন প্রশ্ন করলেন, “শুধু শুত পুত্র হওয়ার কারণে ঈশ্বর প্রদত্ত অধিকার হতে সমাজ কিভাবে তাকে বঞ্চিত করতে পারে? শ্রীকৃষ্ণ তখন উত্তরে বললেন, “অবশ্যই এটা ঘোরতর অন্যায়। জাতি বর্ণের ভেদ করা, এই মিথ্যা ভেদকে আধার করে কোন মানুষকে বা সমাজের কোন অংশকে অধিকার থেকে, সম্পত্তি থেকে, সম্মান থেকে বঞ্চিত করা মানবতাবিরোধী।” স্বয়ং ভগবান বলছেন মানবতাবিরোধী আর সমাজ সেটিকেই ধর্মের আধার মনে করে চলেছে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন ধর্ম মানেই প্রেম। সকল মানুষ, সকল সৃষ্টির প্রতি শুধু স্নেহ আর করুনা। কিন্তু আজ পথভ্রষ্ট অন্ধকার সমাজ কিছু পরম্পরা, প্রথাকে ধর্ম মেনে যে নিরস প্রেমহীন পথে অগ্রসর হচ্ছে, তা থেকে মুক্তির পথ হতে পারে শুধুই পরমেশ্বরকে জানা, তার প্রেমকে অনুধাবন করে সমগ্র সৃষ্টিকে সরস প্রেমময়, করুণাময় করে তোলা। পৃথিবীর সকল জাতি, বর্ণের মানুষের মধ্যে সুন্দর সাম্য প্রতিষ্ঠিত হোক সেই প্রত্যাশায়…
শুভ জন্মাষ্টমীতে সকল সৃষ্টির জন্য শুভকামনা… -বিকন ভট্টাচার্য্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৫:১৯ ১২২৯ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম