বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ দীর্ঘ সময় ক্রিকেটের স্পিন জগত শাসন করেছেন শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং অনিল কুম্বলেরা। তাদের বিদায়ের পর স্পিন জগত যেনো হারিয়ে ফেলেছে জৌলুস। এখন আর স্পিন বিষে ব্যাটসম্যানদের খুব একটা নীল হতে দেখা যায়না। সেখানে একজন একদম ব্যতিক্রম তিনি হলেন সাইদ আজমল।যিনি বৈচিত্রময় ডেলিভারি দিয়ে একাই কাঁপিয়ে দিতে পারেন প্রতিপক্ষ শিবির।উপমহাদেশের উইকেট যেখানে স্পিনারদের স্বর্গের মতো ছিলো, সেখানেও ইদানিংকালে স্পিনাররা এখন খুব একটা পাত্তা পাচ্ছেন না। যদিও অজন্তা মেন্ডিস, সুনিল নারিনরা একটু আধটু ঝলক দেখাচ্ছেন। কিন্তু সুনাম আর অতীতের তুলনায় তা নিতান্তই কম। আর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কথা তো বলাই বাহুল্য। তবে স্রোতের বিপরীতে যে কেউ সাঁতরাচ্ছেন না, তা কিন্তু নয়। স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানো দলের অন্যতম সেরা সদস্য হয়ে গেছেন পাকিস্তানি স্পিনার সাঈদ আজমল। যাকে বলা হয় মায়াবী স্পিনের জাদুকর, রীতিমতো ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক।
প্রচলিত আছে সাকলাইন মোসতাকের পর সাঈদ আজমলই পাকিস্তানের সেরা স্পিনার। সেই সাথে বর্তমান সময়ে বিশ্বসেরা স্পিনারও সাঈদ আজমলই। যদিও এটি কোনোভাবেই তর্কের উর্ধ্বে নয়। একটি জায়গায় আজমল ভক্তদের আফসোসের কথা শোনা যায়। বড্ড দেরি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছেন তিনি। ত্রিশ বছর পেরিয়ে গেলে এখন অনেক ক্রিকেটারের অবসরের গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। সেখানে আজমল বিশ্ব ক্রিকেটের উত্তপ্ত ময়দানে আবির্ভুতই হলেন ত্রিশের পর। আর বর্তমানে আজমলের বয়স চলছে ৩৫ বছর!
২০০৯ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর আজমল খেলে ফেলেছেন ২৬ টি টেষ্ট। উইকেট দখল করেছেন ১৩৩ টি। এর মধ্যে পাঁচ উইকেট আছে সাত বার। ম্যাচে দশ উইকেট আছে তিন বার। ২৬ টেষ্টের ছোট্ট এই পরিসংখ্যান দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায় পোড় খাওয়া বোলার আজমল। বয়সের সাথে সাথে পরিণত হয়েই এসেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ময়দানে।
আজমলের ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে টেষ্ট অভিষেকের ঠিক এক বছর আগে। ২০০৮ এর জুলাই মাসে। ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত আজমল মোট ওয়ানডে খেলেছেন ৮৪ টি। উইকেট নিয়েছেন ১৩২ টি। এর মধ্যে ইনিংসে চার উইকেট আছে চারবার, পাঁচ উইকেট আছে দুইবার। সেরা বোলিং ফিগার মাত্র ২৪ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট দখল।
আজমল সম্পর্কে যে তথ্য জানলে ভক্তদের ‘চক্ষু চড়কগাছ’ হওয়ার পরিস্থিতি হবে তা হলো, টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেকের প্রায় এক যুগ আগেই ফার্স্ট ক্লাস ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিলো আজমলের! এই এক যুগে আজমল নির্বাচকদের নজরে পড়েননি, নাকি পারফর্ম করতে পারেননি সে রহস্যের কুল-কিনারা এখন পর্যন্ত অজানা। ভবিষ্যতে সে রহস্য ভেদ করে নতুন কোনো খবর বের হয়ে আসার সম্ভাবনাও খুব কম।
সাঈদ আজমলের সবচেয়ে শক্তির দিক হলো ‘দোসরা’। এই ডেলিভারীর প্রবর্তক সাকলাইন মোসতাকের চেয়েও বেশি দক্ষতায় আজমল এটি করতে পারেন। আজমলের বোলিংয়ের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো একেবারে অন্যরকম বোলিং একশন। এ দুই মিলেই আজমল হয়ে উঠেছেন ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কের নাম। দিন যতো যাচ্ছে আজমলের মায়াবী স্পিনে বিষ ততোই বেড়ে চলছে। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো স্পিন বিষের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলছে আজমলের বয়সও! এখন দেখা যাক এই স্পিন জাদুকরের চোখ জুড়ানো মায়াবী বোলিং দেখার সৌভাগ্য কতোদিন থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৩২:৫৯ ৪৭১ বার পঠিত