বঙ্গ-নিউজ: আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও আটক ২২ শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবি করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং বোর্ড অব ট্রাস্টির (বিওটি) সদস্যরা। তবে শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি তার এখতিয়ারের বাইরে বলে জানিয়েছেন।
বুধবার (৮ আগস্ট) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের সঙ্গে জরুরি এ মতবিনিময় সভায় তারা বলেন, এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। তারা নিজেদের ভুলও বুঝতে পারবে।
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, মাফ করার প্রশ্ন এখানে নেই। আমরা কাউকে মুক্তি দেয়ার অধিকার রাখি না। কেউ বেআইনি কাজ করলে কে তাদের মাফ করবে? আমরা মাফ করার কে? বিষয়টি আইনি।
আন্দোলনের ভয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস বিরতি বা বন্ধ না রাখার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আবার উস্কানিতে যাতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যুক্ত না হয় সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে (ভিসি) দায়িত্ব নিতে হবে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম।
মতবিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের সভাপত্বিতে রাজধানীসহ দেশের ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষকসহ অনেকে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। তারা নিজ নিজ সমস্যা তুলে ধরেন।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন হয় তাতে অংশ নেয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই। তবে টানা ছয় দিনের আন্দোলন শেষে ৫ আগস্ট তারা উঠে গেলে এর পর দিন রাস্তায় নামে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রামপুরা এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। আর পরদিন ওই এলাকায় প্রথমে ইস্টওয়েস্ট এবং পরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনির্ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও বহিরাগতদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
সেদিন তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ। তবে আটক হয় ২২ জন শিক্ষার্থী, যাদেরকে ৭ আগস্ট দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাড়িয়ে আন্দোলন যৌক্তিক ছিলো। আমরা তাদের এ দাবিকে সমর্থন করি। যৌক্তিকভাবে তারা ক্ষোপ প্রকাশ করেছেন, দাবি জানিয়েছেন, আন্দোলন করে গেছেন।’
নাহিদ বলেন, ‘এতে করে আমরা অনেক অজানা কিছু জানতে পেরেছি। অনেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলেন না, রাস্তায় ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলানো হচ্ছে, ভিআইপিরা আইন অমান্য করছেন, অনেকে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছেন। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের যে সকল সমস্যা তা তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন।’
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন। বর্তমানে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নতুন সড়ক আইন তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে অনুমোদন দেয়া হবে। দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। তাই আর ছাত্রদের রাস্তায় থাকার কোন অবকাশ নেই।’
উপাচার্যদেরকে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে রাজধানীর সকল প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। এরপর আর তারা রাস্তায় না নামলেও এখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামছেন। তৃতীয় পক্ষ এতে সুবিধা নিচ্ছে। তাই আন্দোলনের ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখবেন না। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। শিক্ষার্থীদের মটিভেট করে তাদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে হবে।’
বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো সর্তক হতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রধান ভুমিকা পালন করতে হবে। ক্লাস, পরীক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মসহ নানা কাজে ব্যস্ত রাখতে পারলে কোন শিক্ষার্থী আন্দোলনে যুক্ত হবে না। শুধু বই পড়লে, সিলেবাস দিলে মাথা ভর্তি করলেই হবে না। জঙ্গিবাদ, অপরাধ থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে হবে। অভিভাকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
৬ আগস্টেও সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই কর্মকান্ড কোন ভাবেই আমাদের কাছে কাম্য নয়, তাদের কেউ উস্কানি দিয়েছেন বা কেউ তাদের রাস্তায় নামিয়েছেন।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘সঠিক তথ্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ করা দরকার, মিথ্যা গুজবে বিচার বিশ্লেষণ না করে প্রতিবাদ কারা উচিত নয়। কোনো শিক্ষার্থী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটিকে গুরুত্ব দিতে আমি পুলিশ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এ বিষয়ে আমরারও সজাগ রয়েছি।’
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৩:৩৫ ৬২১ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম