বঙ্গ-নিউজ: গত রবিবার বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। দুটি বাস যাত্রী নিতে নিজেদের মধ্যে পাল্লা দেওয়ার সময় একটি বাস চাপা দেয় শিক্ষার্থীদের। এতে মিম ও রাজিব মারা যান। আহত অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয় আরও ছয়জনকে।
এই ঘটনার পরপরই নিজ মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন নৌমন্ত্রী। এ সময় তিনি চওড়া হাসি দিয়ে এর জবাব দেন। এছাড়া ভারতে বাস দুর্ঘটনায় ৩৩ জনের মৃত্যুর পরও কোনো শোরগোল হয়নি বলে দাবি করেন। মন্ত্রীর হাসিমাখা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরদিন তিনি এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তার এই হাসি দেয়া উচিত হয়নি বলে জানান। পরে তিনি নিহত দিয়ার বাসায় গিয়ে ক্ষমাও চান।
এদিকে এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। তাদের টানা আন্দোলনে কয়েক দিন ধরে রাজধানী ঢাকা অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নিহত দুজনের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন সরকারপ্রধান। এছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
নৌমন্ত্রী সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নেই। তবে এই শ্রমিক নেতা বরাবর সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তোপের মুখে থাকেন সাত বছর আগের করা এক বক্তব্যের কারণে। সে সময় চালকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি নির্ধারণের দাবিতে নাগরিক সমাজের আন্দোলনের মধ্যে মন্ত্রী কটাক্ষ করে পাল্টা জবাব দেন, ‘গরু-ছাগল চিনলেই তো লাইসেন্স দেয়া যায়।’
বাংলাদেশে গণপরিবহনের চালক-শ্রমিকরা সাধারণত স্বল্পশিক্ষিত বা নিরক্ষর। আর নৌমন্ত্রী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে এই চালক-শ্রমিকদের নেতা। পাশাপাশি তার নিজেরও বাস আছে, এই সে সুবাদে পরিবহন মালিকদেরও নেতা। এজন্যই মূলত এবারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তোপের মুখে পড়েন শাজাহান খান।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মাঝে নিরাপত্তার অজুহাতে সড়কে বাস নামাচ্ছে না মালিক-শ্রমিকরা। অনেকটা অঘোষিত ধর্মঘট চলছে। এমতাবস্থায় নৌমন্ত্রী এবং পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আগামীকাল শনিবার থেকে ফের গাড়ি রাজপথে নামাতে শুরু করবেন মালিক-শ্রমিকরা।’
শুক্রবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের এ আশার কথা শোনান নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আজকে যে পরিস্থিতি দেখলাম, কাল যদি সেই পরিস্থিতি থাকে তাহলে আশা করি কাল থেকে মালিক শ্রমিকরা গাড়ি চালাবে। আমাকে বিভিন্ন মালিক এবং শ্রমিক কমিটির নেতারা যেটা জানিয়েছে, আজ রাতের গাড়িগুলো তারা চালাবে এবং কাল পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে পরিস্থিতি বুঝে গাড়ি চলবে।’
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় গত পাঁচদিন ধরে রাজপথ দখল করে রেখেছে স্কুল-কলেজের কিশোর কিশোরীরা। বাস শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলে তারা নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে। এদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা পাল্টা ঢাকাসহ দেশজুড়ে বাস চলাচল বন্ধ রাখায় দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে মানুষ।
বাসচাপায় নিহত শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিবের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মহাখালীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ শেষে এই অঘোষিত ধর্মঘটের কারণ হিসেবে শাজাহান খান বলেন, ‘চালকদের বিভিন্ন জায়গায় মারপিট করা হচ্ছে। সে কারণেই মালিক এবং শ্রমিকরা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:২১:৪৯ ৫২০ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম